আবদুল হামিদ দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া না হলেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় তাঁকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হলে স্পিকার পদটি শূন্য হবে। স্পিকার কে হবেন, তা নিয়ে আওয়ামী লীগে আলোচনা শুরু হয়েছে।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার পদে একজন নারীকে দেখতে চায়। ফলে নারী স্পিকার হলে ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী স্বপদে বহাল থাকবেন। আর শওকত আলী স্পিকার হলে ডেপুটি স্পিকার হবেন একজন নারী। এ ক্ষেত্রে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম আলোচিত হচ্ছে। এ ছাড়া আবদুল হামিদের আসনের (কিশোরগঞ্জ-৪) উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন, তা নিয়েও দলে আলোচনা হচ্ছে।
নিয়মানুযায়ী, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। ২১ এপ্রিল সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠক থেকেই কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংসদ রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে গিয়ে জমা দেবেন বলে জানা গেছে।
সংবিধান অনুসারে সাংসদদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এ নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। ৯ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল অনুযায়ী, ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২১ এপ্রিল। সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দপ্তরে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে। মনোনয়নপত্র পরীক্ষা হবে ২২ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৪ এপ্রিল বিকেল চারটা। ২৯ এপ্রিল বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত জাতীয় সংসদে ভোট গ্রহণ হবে। একাধিক প্রার্থী না থাকলে ২৪ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদ কেমন হবেন, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনাব আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং বর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। তাঁর রাষ্ট্রপতি হওয়াটা আমরা স্বাভাবিক মনে করি। আমরা মনে করেছিলাম, স্পিকার হিসেবে তিনি বিরোধী দলকে সংসদে এনে গণতান্ত্রিক সংকটের উত্তরণ ঘটাবেন। তাঁর কাছে এবার আমাদের প্রত্যাশা, রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি দল বা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবেন। স্পিকার হিসেবে তাঁর যে ঘাটতি ছিল, তা পুষিয়ে তিনি নিজের অবস্থান প্রমাণ করবেন।’
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আবদুল হামিদ স্পিকার হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন এবং তাঁর নিরপেক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তিনি সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তিনি রাষ্ট্রপতি হলে এই ক্রান্তিকালে অবদান রাখতে পারবেন। রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে তিনি যথেষ্ট সাড়া পাবেন এবং দেশের জন্য মঙ্গল হবে।
সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদকে দলীয়ভাবে বিবেচনায় নেওয়ার পরই ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। একই দিন রাতে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ওই সূত্রমতে, রাষ্ট্রপতি পদে অরাজনৈতিক কাউকে মনোনয়ন না দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিগত অবস্থান ছিল। এ ছাড়া দলের প্রতি অঙ্গীকার ও আনুগত্যের বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
গত ২০ মার্চ মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি পদটি শূন্য হয়।সংবিধান অনুসারে আগামী ১৯ জুনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শেষ করতে হবে।
১৮ এপ্রিল /২০১৩.