খায়রুল আনাম শাকিল। বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী, ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষক। পয়লা বৈশাখের ভোরে রাজধানীর রমনা বটমূলে হবে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। বললেন এই আয়োজন নিয়ে বিস্তারিত।ছায়ানটের এবারের প্রস্তুতি যেমন…
প্রতিবছরের মতো এবারও ছায়ানটের প্রস্তুতি বেশ ভালো। প্রথমেই আমরা আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করে নিয়েছি, অনুষ্ঠানে কী কী থাকবে, শুরুটা কেমন হবে না-হবে। এরপর শুরু হয়েছে মহড়া।বর্ষবরণের এবারের ভাবনা…
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্যায়ে থাকবে যন্ত্রসংগীত। বাঁশি, এসরাজ ও বেহালার সুর বাজবে ভোরের রাগের ওপরে। সেই সুরের মাধ্যমে আহ্বান করা হবে সবাইকে অনুষ্ঠানে আসার ব্যাপারে। মূল সংগীত আয়োজন শুরু হবে তার পরই। সকালের স্নিগ্ধতার সঙ্গে সংগতি রেখে পাঁচ-ছয়টি গান করা হবে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য, মুক্তিসংগ্রাম ও দেশপ্রেম নিয়ে কথা বলা হবে। পাশাপাশি থাকবে কবিতা আবৃত্তি।এবার গাইবেন…
শতাধিক শিল্পী গাইবেন। তাঁদের মধ্যে শিশুরা থাকবে। ছায়ানটের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও নবীন শিক্ষকেরাও গাইবেন।
পয়লা বৈশাখ মানেই যেন রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ…
ছায়ানটের বর্ষবরণ একটি অনুষ্ঠান, যেখানে বাঙালিরা এক হন। ধর্মীয় পরিচয় ভুলে এক জাতি, এক বাঙালি, এক মানুষ হয়ে রমনার বটমূলে মিলিত হন সবাই। এদিন আমরা জাতীয়তার অঙ্গীকার করি। চিনে নিই আমার আপনকে। গ্রামগঞ্জে বহুকাল ধরেই মানুষ এই দিনটি উদ্যাপন করে। কিন্তু আমরা শহুরে মানুষেরা আমাদের ঐতিহ্য ভুলে যাই। বর্ষবরণ সেই ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা আমাদের নিজস্বতাকে চিনে নিই।
ফিরে দেখা…
১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানট বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। সেই সময় পাকিস্তান সরকার আমাদের সংস্কৃতিতে আঘাত হেনেছিল। ছায়ানটের উদ্যোগটি ছিল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মতো। এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে আমরা দেশপ্রেম ও জাতীয়তার প্রকাশ করি। গর্ব করি বাঙালি হিসেবে নিজেদের পরিচয় বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশপ্রেম পোক্ত করার পেছনে ছায়ানটের এ উদ্যোগ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।
মুক্তিযুদ্ধ ও ছায়ানট…
মুক্তিযুদ্ধের সময় ছায়ানট অনুষ্ঠানটির আয়োজন করতে পারেনি। তবে ছায়ানটের শিল্পীরা একটি দল গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দেশপ্রেম সামনে রেখে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ছায়ানটের অর্জন অনেক। তবে অর্জন পূর্ণাঙ্গ হবে সেদিন, যেদিন আমরা সবাই মনেপ্রাণে বাঙালি হতে পারব। ছায়ানট নিশ্চিত, সব দেশপ্রেমিকের সহযোগিতায় সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে।
(১২ এপ্রিল/২০১৩) নিউজরুম।