কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল রোববার ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশের সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে সিলেটে গতকাল জামায়াতের দুই নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে কাল মঙ্গলবার সিলেট জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াত। কুমিল্লায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকার বাইরে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলিবিনিময় ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপিতে গত ১৪ আগস্ট শিবির ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর আবাসিক হলে লুটপাটের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়।
সঞ্চারকলিপি দেওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলা অনুষদের সামনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ওই সঞ্চারকলিপির অনুলিপি বিতরণ করছিলেন শিবিরের একজন কর্মী। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী গিয়ে স্মারকলিপি দেখতে চান। কিন্তু শিবিরের ওই কর্মী সঞ্চারকলিপি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁদের মধ্যে প্রথমে কথা-কাটাকাটি ও পরে হাতাহাতি শুরু হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগ ও শিবিরের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় কলা অনুষদের পাশে অবস্থিত ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে দুই পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠের দুই প্রান্তে অবস্থান নেয়। তারা অন্তত আটটি ককটেল ফাটায়। এ সময় গুলির শব্দও পাওয়া যায়। কয়েকজন বহিরাগতকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে অংশ নিতে দেখা যায়।পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিবিরের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
দুপুর ১২টার দিকে সহকারী প্রক্টর বাকি বিল্লাহসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে বেলা পৌনে একটার দিকে শিবির ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় উভয় পক্ষ ১৫-১৬টি ককটেল ফাটায়। একপর্যায়ে শিবির ধাওয়া করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। এ সময় শিবিরের নেতা-কর্মীরা প্রধান ফটকের বাইরে থাকা ছাত্রলীগের চারটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশের একজন কনস্টেবলসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন। তাঁদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শামীম খান অভিযোগ করেন, ‘শিবিরের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করায় আমরা প্রতিবাদ জানাই। এ সময় তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ফেরার পথে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য শাহিনুর রহমান জানান, সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রেজা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১২০টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে ও ২৮টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
সিলেট: প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা একটার দিকে নগরের দর্শন দেউড়ি এলাকায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী বাবুল আহমদ ওরফে পাঙ্গাসকে শিবিরের কর্মীরা মারধর করেন। এ ঘটনার ঘণ্টা খানেক পর দর্শন দেউড়ির অদূরে পীর মহল্লা এলাকায় মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির সায়েফ আহমদ ও নায়েবে আমির আবদুল হাই হারুনের মালিকানাধীন দুটি বাসাসহ পাঁচটি বাসায় আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে কেউ হতাহত না হলেও আসবাব পুড়ে যায়।
মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, স্বেচ্ছসেবক লীগের এক কর্মীর মোটরসাইকেল পোড়ানোর ঘটনায় শিবিরকে দায়ী করে পরিকল্পিতভাবে জামায়াতের নেতাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল সিলেট জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হবে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফতাব হোসেন খান পাল্টা অভিযোগ করেন, তাঁদের এক কর্মীর মোটরসাইকেল শিবিরের কর্মীরা পুড়িয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জামায়াতের নেতাদের বাড়িতে আগুন দেয়।
নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কায় নগরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নগরের বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কর্মী প্রহূত হওয়ার জের ধরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
কুমিল্লা: প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সকাল নয়টার দিকে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নগরের কান্দিরপাড় এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টমছম ব্রিজের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার সামনে পুলিশ বাধা দিলে নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থল থেকে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আমিনুল হকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাজী দ্বীন মোহাম্মদ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে সোমবার কুমিল্লা জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তিনি ওই হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এদিকে বেলা পৌনে দুইটার দিকে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা টমছম ব্রিজ এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেন। এ সময় চারটি ককটেল ফাটানো হয়। কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আইয়ূব জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২১টি গুলি ছোড়া হয় ও কাঁদানে গ্যাসের দুটি শেল নিক্ষেপ করা হয়। জামায়াতের মহানগর নায়েবে আমিরসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, জামায়াতের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন।
এদিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ারবাজার রেলক্রসিং এলাকায় পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানে আগুন দিয়েছেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চৌদ্দগ্রাম বাজার, হায়দারপুল ও ফালগুনকরা এলাকায় ২০-২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা লাকসাম সড়ক এলাকায় বাস ও মালবাহী ট্রাকে আগুন দেন।
(বিএনপি বিডি নিউজ) ০১ এপ্রিল /২০১৩.