গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে একের পর এক হরতাল ডাকার সংস্কৃতি দেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা সমুন্নত রাখতে বিএনপির ডাকা টানা দুদিনের হরতাল প্রত্যাহার করতে দলটিকে আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠন। এফবিসিসিআই থেকে গতকাল সোমবার পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি দাবিতে আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহেমদ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একের পর এক হরতাল হচ্ছে।এভাবে চলতে পারে না। আমরা ঠিক করেছি, ব্যবসায়ীদের নিয়ে সম্মেলন করে কর্মসূচি ঠিক করব। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এ সম্মেলন হবে। সম্মেলনের তারিখ ঠিক করে সারা দেশের ব্যবসায়ীদের আমরা চিঠি দেব।’
এদিকে বিজিএমইএর বার্ষিক সাধারণ সভায় গতকাল সংগঠনের সদ্য বিদায়ী সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘হরতাল যদি রাজনীতিবিদদের গণতান্ত্রিক অধিকার হয়, তবে দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের ঠিকভাবে ব্যবসা করারও ইচ্ছা আছে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে কেউ যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য আমাদের জনমত তৈরি করতে হবে।’
এফবিসিসিআইয়ের হিসাবে, এক দিনের হরতালে দেশে দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। শুধু তৈরি পোশাক খাতের ক্ষতি ৩৬০ কোটি টাকা। এক দিন হরতালের ক্ষতি তিন দিন ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকার ক্ষতির সমান। এক দিনের হরতালে দেশের জিডিপির দশমিক ১২ শতাংশ ক্ষতি হয়। আর ঢাকা চেম্বারের হিসাব অনুযায়ী, এক দিনের হরতালে দেশের এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
এফবিসিসিআইয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে ব্যবসায়ী সমাজ সব সময়ই হরতালের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এমন অস্থিতিশীল পরিবেশ অব্যাহত থাকলে দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।
এফবিসিসিআই বলেছে, রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর দেশের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও সহাবস্থানের ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা ব্যবসায়ীসহ সব মহলের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে রাজনৈতিক দলগুলো একইভাবে সহনশীল, সহমর্মিতা ও সহাবস্থানের মনোভাব নিয়ে সমস্যার সমাধান করবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা করেন।
বিরোধী দলগুলো দুই মাস ধরে একের পর এক হরতাল ডাকার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরাও নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এ সংঘাতময় পরিস্থিতিতে দুই দলের মধ্যে কার্যকর সংলাপ আয়োজন করা যায় কি না, সে নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেছেন। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতিদের একটি অংশও এ জন্য সক্রিয় হয়েছে।
এফবিসিসিআইও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সংঘাত নিরসনে কথা বলার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার কাছে সাক্ষাৎ চেয়ে দুই দফা চিঠি দেওয়া হলেও তাতে সাড়া পায়নি এফবিসিসিআই। বরং আবারও টানা হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে দলটি।
এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকেরা ইতিমধ্যে নিজেরা আলোচনা করে মানববন্ধন, সাদা পতাকা মিছিল এবং সারা দেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে সম্মেলন করার মতো কর্মসূচি ঠিক করেছেন। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য জরুরি বোর্ড সভা ডাকা হলেও তাতে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়নি। সারা দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চান ব্যবসায়ীরা।
এসব কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে হরতাল থেকে বিরত রাখা যাবে কি না—জানতে চাইলে কাজী আকরাম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। দেখি কিছু হয় কি না।’
২৬ মার্চ/২০১৩/নিউজরুম.