চলনবিলের এঁটেল মাটিতে চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত করলা। পরিবেশ জন¯^াস্থ্য মাটির গুনাগুণ র¶া আর আর্থিক অপচয়রোধ করতে কৃষক কীটনাশক ছাড়াই করলা উৎপাদন করছে। চলনবিলের তাড়াশ সদর ইউনিয়নের কোহিত গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক কৃষক গত ৩ বছর ধরে বিষমুক্ত করলা আবাদ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। এজন্য সেক্স ফেরোবন (জাদুর বাক্স) পদ্ধতি ব্যবহার করেছে কৃষি বিভাগ।
কৃষক ও কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে জানাগেছে,- বর্ষায় থৈ থৈ পানি আর শুকনায় ইরি-বোরো আবাদ হয়-চলনবিলের ওই গ্রামটিতে। কিন্তু ফিবছর ইরি-বোরো চাষে আর্থিকভাবে ¶তির শিকার হন কৃষক। ৩ বছর আগে কোহিত গ্রামের কয়েকজন কৃষক ¯^ল্প পরিসরে ইরি-বোরো ধানের পরিবর্তে করলা আবাদ শুরু করেন। তারা কম খরচে বেশী লাভবান হন। তাদের দেখাদেখি পরের বছর আরো কৃষক ধানের জমিতে করলা আবাদ করেন। তারাও লাভবান হন।
কিন্তু ফ্রুটফ্লাই (মাছি পোকা) নামে এক ধরনের পোকা করলার জন্য ¶তিকর হয়ে উঠে। কৃষক এসব পোকা দমন করতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার শুরু করে। এজন্য বিঘাপ্রতি প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকার কীটনাশক লাগত। ওই বিষ ছিটানোর পর খেতের করলা বিষযুক্ত হয়ে বাজারজাত হতো। তার পরও মাছি পোকার আক্রমনে নষ্ট হচ্ছিল খেতের করলা। পরে কৃষি বিভাগ করলা চাষিদের নিয়ে সচেতনতা মুলক সভা করে। পরে ওই গ্রামের সকল করলা চাষি ফ্রুটফ্লাই (মাছি পোকা) নিধনে জাদুরবাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে উপকৃত হয়। বাড়তে থাকে করলার উৎপাদন।
তাড়াশ কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে,- ৩ বছর আগে ১০ হেক্টর জমিতে পরী¶া মুলক ভাবে করলা চাষ শুরু হয়। ইরি-বোরো আবাদের চেয়ে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষক এবছর ৩০ হেক্টর জমিতে বিষমুক্ত প্রক্রিয়ায় করলার চাষ হচ্ছে। বিঘাপ্রতি জমিতে করলা চাষে খরচ হয়ে গড়ে ১৩ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি গড়ে উৎপাদন হচ্ছে ৩৫ মন করলা। মাঠ থেকে প্রতি কেজি করলা (পাইকারি) ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ওই হিসাবে ৫৬ হাজার টাকার করলা বিক্রি হয়। খরচ বাদে লাভ হয় ৪৩ হাজার টাকা। কিন্তু ইরি-বোরো ধান চাষ করে কৃষক তেমন লাভবান হচ্ছে না।
ওই গ্রামের কৃষক- এন্তাজ আলী, মজিদ, বুলবুল জানান,- ১০০-১২০ দিনের মধ্যে করলা উৎপাদন শুরু হয়। ধান চাষেরমত ঝুঁকি নেই। আর বিষমুক্ত প্রক্রিয়ায় করলা চাষ করায় ক্রেতার অপে¶ায় থাকতে হয় না। বরং ক্রেতারাই করলা কিনতে কৃষকের মাঠে এসে ভিড় জমায়। একারনে কৃষকের পরিবহন খরচ ও খাসজনার টাকা গুনতে হয়না। লাভ হয় বেশী। তাছাড়া সার-কীটনাশক ব্যবহার না করায় করলার উৎপাদন বেশী হচ্ছে। জমির মাটির গুনাগুন নষ্ট হচ্ছে না। শরীর সুস্থ্য থাকছে। এজন্য কৃষিবিভাগ তাদের সহযোগিতা করছে।
কৃষক শিহাব আলী জানান,- বিষমুক্ত করলা উৎপাদন হওয়ায় প্রতিদিন ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, ট্ঙ্গাাইল ও বগুড়া থেকে ক্রেতারা মাঠে এসে ট্রাক ভরে করলা নিয়ে যাচ্ছে। দামও ভাল মিলছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ মন থেকে ৫০০ মন করে করলা বেচা-বিক্রি হচ্ছে। এই করলা বিক্রিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে স্থায়ী আড়ত। এ বছর করল¬ার বাম্পার ফলন ও দাম বেশী পাওয়ায় তাদের মুখে হাঁসি ফুটে উঠেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখাগেছে,- তাড়াশ উপজেলা সদর থেকে প্রায় দুই কি.মি. দূরে কোহিত গ্রামটির অবস্থান। মাঠের পর মাঠ করলা খেত। কেউ জমি পরিচর্চা করছেন আবার কেউ মাঠ থেকে করলা তুলতে ব্যস্ত। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে কৃষান বধুরাও। মাঠের পাশ দিয়ে চলে গেছে গ্রামীণ পাকা সড়ক। ওই সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে করলা বিক্রির অস্থায়ি আড়ৎ। পাইকারী দরে কৃষক নিজেই বিক্রি করছেন। রাতে দুর -দুরান্ত থেকে আসা মহাজনরা শত শত মণ করল¬া কিনে ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে।
করলার পাইকারি ক্রেতা বগুড়ার হাফিজুর রহমান ও ঢাকার খোরশেদ আলম জানান, তারা জানতে পেরেছেন এখানকার করলা বিষমুক্ত পদ্ধতিতে চাষ। প্রথমে তারা বিশ্বাস করতে চাননি। পরে ¯^চ¶ে কৃষকের করলা খেত দেখেন। কিছু নমুনা সংগ্রহ করে শহরে নিয়ে পরী¶ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হন। এখন এসব করলা ঢাকার নামীদামি দোকানে সরবরাহ করছেন। লাভও হচ্ছে ভাল।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান,- ফ্রুটফ্লাই (মাছি পোকা) নামে এক ধরনের পোকার আক্রমনে করলার ব্যাপক ¶তি হচ্ছিল। কৃষকরা প্রতিকারের পরামর্শ নিতে কৃষি অফিসে ধর্ণা দিতো। অনেকে আবার এসব পোকা দমন করতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার শুরু করে। পরে কীটনাশক মুক্তভাবে করলা চাষ পদ্ধতি নিয়ে ওই গ্রামের কৃষকদের সাথে দিনের পর দিন উঠান বৈঠকের মাধ্যমে উৎসাহিত করা হয়। এখন চলনবিলের অনেক কৃষক উৎসাহিত হচ্ছে।
২৪ মার্চ/২০১৩/নিউজরুম.