২৪ মার্চ, ২০১৩।।
বৈশাখ আসার আগেই কালবৈশাখীর আঘাত শুরু হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ আঘাত হেনেছে টর্নেডো। টর্নেডোর আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে কয়েকটি গ্রাম। লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ। কয়েক শ’ কাঁচা বাড়িঘর এবং বোরো ধান নিঃশেষ হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ১৯ জন নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলা কারাগারের দেয়াল।
শুক্রবার বিকেলে শিলাবৃষ্টির সাথে টর্নেডো আঘাত হানায় জানমালের ক্ষতি হয়েছে বেশি। শিলাবৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজও বিলম্বিত হয়েছে। তা ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতির ভয়াবহতায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। ফলে কুমিল্লা-সিলেট সড়কে গাছ উপড়ে থাকার সময় দীর্ঘতর হয়। এ সময় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। তা ছাড়া সিএনজিসহ বিপুলসংখ্যক গাড়ির ওপর গাছ ভেঙে পড়ে। এখনো গুরুতর আহত প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ওপর মানুষের হাত নেই। হয়তো বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য মানুষ দায়ী। প্রশ্ন হচ্ছে, মওসুমের শুরুতেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন অপ্রস্তুত হওয়ার কথা ছিল না। সাধারণভাবে মধ্য মার্চ বা চৈত্রের শুরু থেকে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে থাকে। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সজাগ থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হতো। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো ও উদ্ধার তৎপরতা হতো দ্রুততর গতিতে। আমরা কাউকে দায়ী করার পক্ষপাতী নই। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আবহাওয়া অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসনকে অংশত দায় নেয়া উচিত। কারণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট। তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতাও কাক্সিত মাত্রায় ছিল না। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা দেয়া, পাশে গিয়ে ত্রাণতৎপরতায় অংশ নেয়া, পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসায় ক্ষিপ্রতা লক্ষ করা যায়নি।
আমরা মনে করি, দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে পুনর্বাসন করা জরুরি। তা ছাড়া অহতদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নিহতদের পরিবারকে এককালীন সাহায্য দেয়ার বিষয়টিও মানবিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত। তা ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়কে সজাগ থেকে সময়মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা নিহতদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। একই সাথে আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি জানাচ্ছি সহমর্মিতা। আশা করছি, সবার সাহায্য ও সহযোগিতায় বিপর্যয়ের শিকার মানুষেরা আবার সাহসের সাথে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন।