বিমানে এয়ারবাস কেলেঙ্কারির হোতা আসাদুজ্জামানের চাকরির মেয়াদ বাড়ছে

0
203
Print Friendly, PDF & Email

 

 

ঢাকা: বিমানে এয়ারবাস কেলেঙ্কারির হোতা প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামানের চাকরির মেয়াদ বাড়ছে। মূলত বিমান চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের প্রিয়ভাজন হওয়ার কারণেই এই পরিচালকের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

শুধু চাকরির মেয়াদই নয়, সঙ্গে বাড়ছে বেতনও। বিমান সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমানের পরিচালক আসাদুজ্জামান ছাড়াও অর্থ পরিচালক কামাল উদ্দিন আহমেদের চাকরির মেয়াদ বাড়াতে বিমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির সুপারিশেই আসাদুজ্জামানের চাকরির মেয়াদ বাড়ছে। কিন্তু মেয়াদ বাড়ছে না কামাল উদ্দিন আহমেদের চাকরির। কারণ কামাল উদ্দিন আহমেদ জামালের প্রিয়ভাজনের তালিকায় নেই।

সূত্র জানায়, চলতি মাসের ৩০ তারিখে অবসরে যাচ্ছেন আসাদুজ্জামান। আর আগামী ৩০ মে চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে কামাল উদ্দিন আহমেদের।

তাদের চাকরির মেয়াদ বাড়াতে বিমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি তাদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করবে। এর ভিত্তিতেই তাদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হবে।

কমিটি শনিবার বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে আসাদুজ্জামানের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করে। বিমানের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ শর্তে বলেন, আসাদুজ্জামানের চাকরির মেয়াদ বাড়াতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে কামাল উদ্দিন আহমেদের বিষয়টি জুড়ে দেওয়া হয়েছে যাতে বিষয়টি নিয়ে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। তবে বিমান সংশ্লিষ্ট সবারই জানা, কার জন্য এই কমিটি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, আসাদুজ্জামান পরিচালক থাকাকালীন যে বেতন পেতেন, নতুন সুপারিশে এই বেতন প্রায় দ্বিগুন করা হয়েছে। আসাদুজ্জামান বিমানবাহিনী থেকে ডেপুটেশনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চাকরিতে এসেছিলেন। ৩০ মার্চ বিমানবাহিনীতে তার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরপর সঙ্গত কারণেই তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বিমান চেয়ারম্যানের পঞ্চপান্ডবের একজন আসাদুজ্জামান। চেয়ারম্যানের বিভিন্ন কাজ বাস্তবায়নের অন্যতম কান্ডারি প্রকৌশল পরিচালক।

এ কারণে আসাদুজ্জামানকে চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দিতেই উঠেপড়ে লেগেছেন জামাল উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে এজন্য পরিচালনা পর্ষদের সদস্যকে দিয়ে একটি কমিটি করিয়ে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন। এয়ারবাস কেলেঙ্কারির হোতা আসাদুজ্জামানের কীর্তি

বিমানের এয়ারবাস কেলেঙ্কারির দায় এয়ারলাইন্সের উপ-প্রধান প্রকৌশলী ওয়াসিক উদ্দিনের ওপর চাপিয়ে গত বছরের ২৪ জুন তাকে চাকরিচ্যুত করার মূল নায়ক ছিলেন উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান। কোনো ধরনের তদন্ত কমিটি কিংবা নিয়ম না মেনেই একতরফাভাবে জামাল উদ্দিনের আক্রোশের শিকার হলেছিলেন ওয়াসিক উদ্দিন।

বিমানের একাধিক সূত্র জানায়, বিমানের প্রকৌশল পরিচালক উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান এই বিভাগের প্রধান হিসেবে দায় এড়াতে পারেন না। অথচ চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের ঘনিষ্ট হওয়ায় এ ঘটনায় আসাদুজ্জামানকে কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, সংস্থার প্রকৌশল শাখার এক ভুলে বিমানকে গচ্চা দিতে হচ্ছে দেড়শ’ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস উড়োজাহাজ মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে পাঠানোকে কেন্দ্র করেই এই কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে।

বিমানের নিজস্ব বহরের এয়ারবাসটি (রেজি. এস-২ এডিকে) সি-চেকের (বড় ধরনের মেরামত) জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয় ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর। এর দশমাস পর উড়োজাহাজটি ফেরত আসে। আর এজন্য বিমানকে এই বিপুল অংকের অর্থ গচ্চা দিতে হয়। শেষ পর্যন্ত দেড়শ’ কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর দেশে ফেরত আসে বিমানের এয়ারবাসটি।

উড়োজাহাজটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরের পাঠানো নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা চলছিল। এরই এক পর্যায়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি বিমানের প্রকৌশল শাখাকে একটি ই-মেইল বার্তা পাঠায়। তারা বিমানকে জানায়, তোমরা যদি সম্মত থাকো তাহলে উড়োজাহাজটি পাঠিয়ে দাও। এই ই-মেইল বার্তাটি না দেখেই বিমানের প্রকৌশল শাখার প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসিক উদ্দিন উড়োজাহাজটি সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে দেন।

শুধু তাই নয়, সিঙ্গাপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি জানায়, সি-চেকের বাইরে অনেক কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে তারা বিমানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু ঢাকা থেকে সময়মতো উত্তর না আসায় তারা ধরে নেয় বিমান এতে সম্মত রয়েছে। এরপর সিঙ্গাপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কাজ শুরু করে। মাঝপথে এসে বিমান জানায়, বাড়তি কাজের অর্থ তারা দিতে পারবে না। এ অবস্থায় জটিলতা তৈরি হয়। সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজটি হ্যাঙ্গারের বাইরে ফেলে রাখে। এভাবে বিমানের গচ্চার পরিমান বাড়তে থাকে। অন্যদিকে বিমান বাড়তি অর্থ দেবে না বলে চাপ দিতে থাকে।

বিমানের প্রকৌশল শাখার একাধিক প্রকৌশলী বাংলানিউজকে বলেন, উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান প্রকৌশল শাখার পরিচালক হিসেবে এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। এই শাখার প্রধান হিসেবে এর দায় তার ওপরও বর্তায়।

আসাদুজ্জামান বলছেন, এ ঘটনাটি যখন ঘটে তখন তিনি ছুটিতে ছিলেন। এরপরও তিনি ই-মেইলের উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এদিকে পরিকল্পনা শাখার প্রকৌশলী ওয়াসিক উদ্দিন বিষয়টি বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ ও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকীউল ইসলামকে জানিয়েছিলেন। এজন্য তিনি তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। উড়োজাহাজটি ৩৮দিন পর ঢাকা ফেরত আসার কথা থাকলেও ৬ মাসেও তা আসেনি এতে বিমানের ৯০ কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে।   

মার্চ ২৪, ২০১২ 

 

 

শেয়ার করুন