তামিমের মুক্তি ফিফটির গোলকধাঁধা থেকে

0
220
Print Friendly, PDF & Email

৫০ টেস্টে ৩টি সেঞ্চুরি ও ২৪টি ফিফটিওয়ানডেতে কোনো সেঞ্চুরি নেই১১১ ম্যাচে ফিফটি ১৪টিসব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪১ বার পঞ্চাশ পেরিয়ে মাত্র তিনবার ছুঁয়েছেন তিন অঙ্কহাবিবুল বাশারের নাম যে মিস্টার ফিফটিহয়ে গিয়েছিল, তাতে আর আশ্চর্য কি!
হঠা হাবিবুল বাশারকে নিয়ে টানাটানির কারণ, তামিম ইকবাল তাঁকে মনে করিয়ে দিতে শুরু করেছিলেন! টেস্টে তাঁর ৪টি সেঞ্চুরি আছে, ফিফটি ১২টিএখানে ২৫ শতাংশ রূপান্তর হার খুব একটা খারাপ নয়কিন্তু ওয়ানডেতে যানশ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সিরিজ শুরু করেছিলেন ১১৮টি ওয়ানডেতে ২৪টি ফিফটি আর তিনটি সেঞ্চুরি নিয়ে২৭ বার পঞ্চাশ পেরিয়ে তিনবার তিন অঙ্কেরূপান্তর হার মাত্র ১১.১১
হাবিবুল আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেননিতামিম ইকবাল খেলছেন এবং তাতেও তাঁর তিনটি ফিফটি আছেকাল হাম্বানটোটায় সেঞ্চুরির পর তামিম ইকবাল যে উদ্যাপনটা করলেন, সেটিতে বোধ হয় আনন্দের চেয়েও বেশি ছিল স্বস্তিবুক থেকে পাষাণভার নেমে যাওয়ার স্বস্তি
২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে পরপর দুই টেস্টে দুর্দান্ত দুই সেঞ্চুরি উইজডেনের বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের মধ্যে স্থান করে দিয়েছিল তামিম ইকবালকেউইজডেনের তকালীন সম্পাদক শিল্ড বেরি প্রথম আলোতে বিশেষ কলামে তামিমকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে লিখেছিলেন, ‘তামিম ইংলিশ বোলারদের নিয়ে যেভাবে ছেলেখেলা করেছেন, অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ানরাও তা পারেনি
এমন স্বীকৃতি তো আর প্রতিদিন মেলে নালর্ডস আর ওল্ড ট্রাফোর্ডের সেঞ্চুরি দুটি তাই তামিম ইকবালের কাছে বিশেষ কিছু হয়ে আছেযতই দিন যাচ্ছিল, ততই তা আরও বিশেষহয়ে উঠছিলআন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির স্মৃতিচারণা করতে হলেই যে তাঁকে ফিরে যেতে হতো ওই ইংল্যান্ড সফরে
ওল্ড ট্রাফোর্ডে সেঞ্চুরির পর প্রায় তিন বছরের সেঞ্চুরি-খরাএই সময়ে ফিফটি করেছেন ১৮টিটেস্টে ৪, টি-টোয়েন্টিতে ৩ এবং ওয়ানডেতে ১১ওয়ানডেতে ১১টি ফিফটির ৫টি আবার টানা পাঁচ ম্যাচেফিফটির গোলকধাঁধায় ঘুরে মরতে মরতে অবশেষে বেরোনোর পথ খুঁজে পেলেন তামিমযে পথের শেষে সেঞ্চুরিকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ১৩৬ বলে ১১২
ফিফটির গোলকধাঁধায় ঘুরে মরার দুঃসহ অভিজ্ঞতাটা কেমন, তা জানতে হাবিবুল বাশারের চেয়ে ভালো আর কে হতে পারেন! তামিমকে কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, নির্বাচকের ভূমিকায় দলের সঙ্গে আসা হাবিবুল সেটি খুব ভালো বুঝতে পারেন, ‘ অবস্থায় হতাশার চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায় মানসিক চাপফিফটির সংখ্যা যতই বাড়ে, চাপটাও ততই বাড়তে থাকেফিফটি পেরোনোর পরই একটা ভয়ও তাঁর মনে কাজ করত, ‘আবারও বুঝি সেঞ্চুরি করার আগেই আউট হয়ে যাব
একই ঘটনার মধ্য দিয়ে গেলেও সব ব্যাটসম্যানের প্রতিক্রিয়া অভিন্ন হয় নাতবে কিছু কিছু অনুভূতি তো সর্বজনীনই থাকেতামিমের মনেও হয়তো অমন একটা ভয় কাজ করতে শুরু করেছিলশ্রীলঙ্কায় এসে হাতের চোটের কারণে প্রথম টেস্টে বাইরে বসে থাকলেনদ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আরেকটি ফিফটির শেষ অপ্রাপ্তির হতাশায়
তাঁর মতো ব্যাটসম্যানের প্রায় তিন বছর সেঞ্চুরিহীন কেটে যাওয়ায় নিজের কোনো দায় আছে কি নাপরদিন এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে কিছুক্ষণ নিরুত্তর থেকে বলেছিলেন, ‘হয়তো আছেফিটনেস, বরং বলা ভালো এর অভাব কি একটা কারণ হতে পারেযে কারণে হয়তো ৬০-৭০ করার পর শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তিতে বাজে একটা শট খেলে ফেলেন? এই অপ্রীতিকর প্রশ্নেও মাথা ঝাঁকিয়ে বলেছিলেন হতে পারেমনে মনে কি তখনই একটা প্রতিজ্ঞাও করে ফেলেছিলেন তামিম ইকবাল?
মাঝখানে প্রায় তিন বছর সেঞ্চুরি না পাওয়ায় তামিমের নিজের দায় আছে কি নেই, এই প্রশ্ন না হয় ভুলেই যানভাগ্যও হয়তো পক্ষে ছিল না তাঁরক্রিকেটে সবকিছুর পরও ভাগ্যটা একটা ব্যাপারযেটির ছোঁয়া না পেলে কালও তো আরেকটি ফিফটিই জুটত তামিমের কপালেশ্রীলঙ্কান অধিনায়ক মিড অফে ওই সহজ ক্যাচটা না ফেললে ৫৪ রানেই শেষ হয়ে যায় তাঁর ইনিংস! ফিফটির বৃত্ত থেকে বের করে আনার জন্য অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে একটা ধন্যবাদ দেওয়াই উচিত তামিম ইকবালের!
তা দেওয়ার মতো মনের অবস্থা থাকলে তো! হাতের চোট নিয়েই সফরে এসেছেনপ্রথম টেস্টের জন্য ফিট হতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেও ব্যর্থএর পর থেকে খেলছিলেন ঠিকই, তবে হাতের ওই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অস্ত্রোপচারও লাগতে পারেএমন একটা ভয় সঙ্গী হয়েই ছিলসেটি থেকে মুক্তি মিলবে কি, উল্টো কাল ফিল্ডিংয়ের সময় বল লেগে ডান হাতের বুড়ো আঙুলে চিড় ধরায় ছিটকে পড়েছেন সিরিজের বাইরে
কখনো কখনো ক্রিকেটকে বড় নিষ্ঠুর মনে হয়! কিছু একটা দিয়ে অন্য একটা কিছু কেড়েও নেয়!

 

(২৪ মার্চ/২০১৩) নিউজরুম।

 

শেয়ার করুন