শুষ্ক মওসুমে সেচ সুবিধা না থাকায় শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমি প্রতিবছর অনাবাদি পড়ে থাকছে। ফলে এসব ইউনিয়নের কৃষকেরা বোরো চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।এতে করে উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন বাড়তি খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও বিএডিসির পক্ষ থেকে অনাবাদি জমিগুলো সেচ সুবিধার আওতায় আনার জন্য উদ্যোগ নিলেও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), ুদ্র সেচ বিভাগ, শেরপুর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে মোট জমির পরিমাণ ২৩ হাজার ১০০ হেক্টর। এর মধ্যে কৃষি আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১৮ হাজার হেক্টর। ১২ হাজার হেক্টর জমিতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সেচ সুবিধা রয়েছে। সেচ কার্যক্রমের আওতায় আছে ৩৮টি গভীর নলকূপ, এক হাজার ৮৩৭টি অগভীর নলকূপ ও ৩৯৩টি শক্তিচালিত পাম্প (এলএলপি)। এ ছাড়া প্রাকৃতিক ও সনাতন পদ্ধতিতেও প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া, গৌরীপুর, কাংশা, ধানশাইল (আংশিক) ও ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের তিন হাজার হেক্টর জমিতে শুষ্ক মওসুমে কোনো সেচ সুবিধা না থাকায় এসব এলাকার কৃষকেরা বোরো ধান আবাদ করতে পারছেন না। প্রতি বছর এসব জমি অনাবাদি পড়ে থাকছে। ফলে এ এলাকার কৃষকদের শুধু রোপা আমন ধানের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু শুষ্ক মওসুমে সেচ সুবিধা পেলে কৃষকেরা পতিত জমিগুলোতে বোরো ধান আবাদ করার সুযোগ পাবেন।
গত ১৬ মার্চ শনিবার সরেজমিন ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের শালচূড়া, ডেফলাই ও রাংটিয়া এবং কাংশা ইউনিয়নের বাকাকুড়া, গান্ধিগাঁও, হালচাটি ও পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এসব অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জমি সেচ সুবিধার অভাবে অনাবাদি পড়ে আছে।
এ সময় নলকুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নে বোরো মওসুমে সহস্রাধিক একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। নলকুড়া ইউনিয়নের সব গ্রাম বিদ্যুতায়ন করলে কৃষকেরা সেচ সুবিধা পাবে।
কাংশা ইউনিয়নের গান্ধিগাঁও গ্রামের বিল্লাল হোসেন বলেন, সেচ সুবিধা না থাকায় তার তিন একর জমি পতিত পড়ে আছে। একই গ্রামের নূর হোসেন বলেন, পানির অভাবে তারও সাত-আট একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। বোরো মওসুমে তিনি কোনো আবাদ করতে পারেন না।কাংশার হালচাটি গ্রামের সুরেন্দ্র কোচ বলেন, বোরো মওসুমে সেচ সুবিধা নেই।তাই তার দুই একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ও কাংশা ইউনিয়নের সেচ সুবিধাবঞ্চিত এসব কৃষকের মতো গৌরীপুর, ধানশাইল (আংশিক) ও ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের কৃষকেরাও সেচ সুবিধা না থাকায় আমন ধান আবাদ করেন। ফলে এ উপজেলায় অধিক খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কোরবান আলী বলেন, চলতি বোরো মওসুমে ঝিনাইগাতী উপজেলায় ১২ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে এবং এর বিপরীতে প্রায় ৪৯ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, যদি ঝিনাইগাতীর অনাবাদি তিন হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় এনে বোরো ধান আবাদ করা যায় তবে এ উপজেলায় আরো প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন বেশি খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
বিএডিসি শেরপুরের সহকারী প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ বলেন, ঝিনাইগাতী উপজেলার তিন হাজার হেক্টর জমি পাথরকণা মিশ্রিত থাকায় এখানে সাধারণ মানের গভীর বা অগভীর নলকূপ স্থাপন করে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বোরো মওসুমে সেসব এলাকা অনাবাদি পড়ে থাকছে। তবে ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ এবং নদী থেকে পানি সরবরাহের জন্য খাল খনন করা হলে এ অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ জমি সেচের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এতে কৃষকেরা সহজেই ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহার করে বোরো ধান আবাদ করতে পারবেন। এ ব্যাপারে কার্যকর পদপে নিতে বিএডিসির ্ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে কাছে আবেদন জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
২৩ মার্চ/২০১৩/নিউজরুম.