উঠে আসছে এমব্রয়ডারি শিল্প খাত, বাড়ছে রপ্তানি

0
609
Print Friendly, PDF & Email

মেয়েদের টি-শার্ট কিংবা বাচ্চাদের পোশাকে নানা ধরনের নকশা না থাকলে তারা ওই পোশাক কেনার আগ্রহ অনেকটাই হারিয়ে ফেলেসে কারণে পোশাকে করা হয় নানা ধরনের নকশাআর এই নকশাই তৈরি পোশাকের চাহিদা ও বিক্রি বাড়িয়ে দেয়আর দেশের তৈরি পোশাকে নকশার কাজটি করে যাচ্ছে এমব্রয়ডারি শিল্প খাতএর মাধ্যমে প্রতিবছরই তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে এ শিল্প খাত
এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো পোশাকের দাম যদি হয় ১০ ডলার, তাহলে তাতে এমব্রয়ডারি ও প্রিন্টের অবদান অন্তত দুই ডলারএর মানে হলো ওই পোশাকে যদি কোনো নকশা কিংবা প্রিন্ট না থাকত তাহলে তা বিক্রি হতো আট ডলারেএভাবে দেশের তৈরি পোশাকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে এতে মূল্য সংযোজন করছে এমব্রয়ডারি শিল্প খাত
বাংলাদেশ এমব্রয়ডারি প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিইএমইএ) সভাপতি শাহনেওয়াজ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দেশের তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানিতে ২০ শতাংশ অবদান রাখে এমব্রয়ডারি এবং প্রিন্ট শিল্প খাত
দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয় আশির দশকেমাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই এ খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেএরই ধারাবাহিকতায় সহযোগী শিল্প খাত হিসেবে নব্বইয়ের দশকে হস্তচালিত কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে এমব্রয়ডারিশিল্পের যাত্রা শুরু হয়আর তাতেই তৈরি পোশাকের রপ্তানিচিত্রও পাল্টে যায়একই সঙ্গে পোশাকের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি এতে মূল্য সংযোজনে ভূমিকা রাখার কারণেই এমব্রয়ডারি শিল্প খাতও বিকশিত হয়েছে
এমব্রয়ডারি প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন দুই হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান এমব্রয়ডারির কাজ করছেআর এ খাতে বিনিয়োগ অন্তত ৩০০ কোটি ডলারএ খাতের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাঁচামালই স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়দেশীয় কাঁচামালনির্ভর এ শিল্পে দেড় লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে
এমব্রয়ডারি খাতের রপ্তানিও বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে, অবদান রাখছে তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানি আয় বাড়াতেবাংলাদেশি তৈরি পোশাকের মূল বাজার ইউরোপের দেশগুলো এবং আমেরিকায় এমব্রয়ডারি পোশাকের চাহিদা ভালো
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকেই এমব্রয়ডারি পণ্যের রপ্তানি ক্রমেই বাড়ছেওই অর্থবছরে ১০৫ কোটি ডলারের এমব্রয়ডারি পণ্য রপ্তানি হলেও পরের বছর অর্থা তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২৫ কোটি ডলারেআর ২০১০-১১ অর্থবছরে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৮ কোটি ডলারেপ্রতিবছরই এ খাতের রপ্তানি বাড়ছে আগের বছরের চেয়ে ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ হারে
এমব্রয়ডারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, দেশের এমব্রয়ডারির কাজের চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছেসে কারণে রপ্তানিও বাড়ছেআগে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এমব্রয়ডারি শিল্প খাতের অন্তত ৩০ শতাংশ কারখানায় কোনো কাজ থাকত নাপাদনও হতো নাকিন্তু এ বছর এই সময়ে কোনো কারখানায় বন্ধ থাকার কথা শোনা যায়নি
অতিরিক্ত শুল্ক বড় বাধা: ২০ বছর আগের হস্তচালিত এই শিল্পে এখন ১০ হাজারের বেশি স্বয়ংক্রিয় মেশিন (মাল্টিহেডেড অটোমেটেড কম্পিউটারাইজড মেশিন) বসেছে খাতে জন্য যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছেএমব্রয়ডারি সমিতির তথ্য অনুযায়ী, খাতের জন্য ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩২ কোটি ডলারের যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং কাঁচামাল আমদানি হয়পরের বছর আমদানি হয় ৩৮ কোটি ডলারেরআর ২০১০-১১ অর্থবছরে এসব পণ্যের আমদানি আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ কোটি ডলারে
এ খাতের উদ্যোক্তাদের সমস্যাটা হয় এই যন্ত্রপাতি আমদানিতেইকারণ এমব্রয়ডারি যন্ত্র আমদানিতে এখন তাদের শুল্ক ও ভ্যাট দিতে হয় সাড়ে সাত থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্তআর এই যন্ত্র পরিচালনার সহায়ক সরঞ্জাম ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট দিতে হয় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ
বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে গত ৭ মে দেওয়া সমিতির এক চিঠিতে বলা হয়েছে, এমব্রয়ডারি যন্ত্রপাতি ও সহায়ক সরঞ্জাম আমদানি করতে গিয়ে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ ১৭ কোটি ডলার, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২০ কোটি ডলার আর ২০১০-১১ অর্থবছরে ২৪ কোটি ডলার দিতে হয়েছেবিদ্যমান শুল্ক ও ভ্যাট তুলে দেওয়া হলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৩৩ কোটি ডলার আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য উপাদন করা সম্ভব হবেআর এই পণ্যের সবটাই রপ্তানি সম্ভব হবে
সমিতির নেতারা বলছেন, চড়া শুল্ক হারের কারণে বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে পোশাকের দাম এখন বেশি নিতে হচ্ছেএ শুল্ক কমানো হলে তাদের কম দামে পোশাক সরবরাহ করা যাবেফলে ক্রেতারা আগের চেয়ে বেশি কার্যাদেশ দেবেএতে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর পাদন এখনকার চেয়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভবকম দামে পোশাক সরবরাহের কারণে ভারত, তুরস্ক, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ এখন এই সুবিধা ভোগ করছে
সরঞ্জাম ও কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্রের উল্লিখিত মূল্যের ২৫ শতাংশ শুল্কমুক্ত আমদানিসুবিধা দেওয়া, এমব্রয়ডারি খাতের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিলম্বিত ঋণপত্রের মেয়াদ ৩৬০ দিন (এক বছর) থেকে বাড়িয়ে ৭২০ দিন (দুই বছর) করা, শতভাগ রপ্তানিমুখী এই শিল্প খাতের জন্য আলাদা শিল্পনগর স্থাপনের দাবি জানান আহসান হাবীব

২৩ মার্চ/২০১৩/নিউজরুম.

শেয়ার করুন