রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে একরোখা অবস্থানের পরিবর্তন প্রয়োজন

0
281
Print Friendly, PDF & Email

২১ মার্চ, ২০১৩।।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই যেন ভঙ্গুর আফ্রিকার দেশগুলোর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত সরকার নতুন নতুন নাগরিক গোষ্ঠীকে ুব্ধ করছে। কোনো কিছুরই প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। একটি অঘটন তলিয়ে যাচ্ছে তার চেয়ে বড় একটি অঘটনের নিচে। সরকারের অপরিণামদর্শিতার যেন শেষ পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পরিণতি নিয়ে মোটেই ভাবা হচ্ছে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী নানা অনাচারের প্রতিকার চেয়ে সরকারের প্রতি দাবি পেশ করছে। সরকার এসব দাবির প্রতি একেবারেই ভ্রƒক্ষেপ করছে না। শেষে তারা কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসছে। এর মধ্যে অল্প সময়ে অনেক দিন হরতাল হয়ে গেল। যে দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল ডেকেছে; সরকার চাইলে এর সহজ সমাধানও করতে পারত। কিন্তু আমরা দেখিনি বিরোধীদের দাবির প্রতি সরকার ন্যূনতম সাড়া দিচ্ছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসায়-বাণিজ্য বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। সামনে যে ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য ধসে পড়তে পারে।

নয়া দিগন্তে প্রকাশিত একটি খবরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসায়িক ক্ষতির একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মগবাজারের একটি রেস্তরাঁর দিন গেলেই ১৫ হাজার টাকা খরচ। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে গত তিন মাসের একটি দিনও খরচের সব টাকা দোকান থেকে উঠানো যায়নি। ফলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বাকি পড়ছে, দোকান ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল অনিয়মিত হচ্ছে, বকেয়ার পরিমাণ বেড়ে চলেছে মুদি দোকানে। বিশেষ করে হরতাল এবং ছুটির দিনগুলোতে হোটেল মালিক রুহুল আমিনের চোখে সরষে ফুল দেখার মতো অবস্থা হয়। একই অবস্থা হক ব্রেড অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী আলহাজ রেজাউল হকের। রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তার রয়েছে চারটি বৃহদাকার কারখানা, ১৬টি শোরুম, চারটি পিকআপ ভ্যান, তিন শতাধিক ডেলিভারি ভ্যান। হাজারখানেক শ্রমিক-কর্মচারীর রুটিরুজির ব্যবস্থা হয়েছে এ কোম্পানিতে। কিন্তু রেজাউল হকের ঘুম হারাম করে দিয়েছে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা। কারণ কারখানার চাকা ঘুরুক আর না-ই ঘুরুক, দিনের শেষে তার খরচ পাঁচ লাখ টাকা। রুহুল আমিন ও আলহাজ রেজাউল হককে ভাগ্যবান বলতে হবে। কারণ তারা খাদ্য ব্যবসায় করেন। নিঃশ্বাস চালু রাখতে হলে মানুষকে খেতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় অন্য সব ব্যবসায়-বাণিজ্য অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ তৈরী পোশাক শিল্প সবচেয়ে বড় ধরনের বিপত্তির মধ্যে পড়ছে। এরই মধ্যে সময়মতো অর্ডার রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। সামনে আরো দীর্ঘ রাজনৈতিক অচলাবস্থায় আমদানিকারকেরা মুখ ফিরিয়ে নিলে তৈরী পোশাক শিল্প ধাক্কা খাবে আরো বড় আকারের।

সমস্যার সমাধান রয়েছে সরকারের কাছে। সর্বশেষ যে দুই দিনের হরতাল আমরা প্রত্যক্ষ করলাম তার দায়ভার সরকার কোনোভাবে এড়াতে পারে না। বিএনপির শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মুক্তি দাবিতে তারা হরতালের ডাক দেয়। সরকার তাদের মুক্তি দেয়ার মাধ্যমে হরতাল এড়াতে পারত। ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে হেফাজতে ইসলাম ৬ এপ্রিল ঢাকা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছে। এতে বাধা দিলে তারা লাগাতার হরতালের হুমকি দিয়েছে। সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে, তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উল্টো আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে হেফাজতের কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার। এর ফলে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। সরকার চাইলে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে তাদের একরোখা অবস্থান থেকে সরে এসে সব অনিশ্চয়তার অবসান ঘটাতে পারে। জনগণ সরকারের শুভবুদ্ধির দিকে চেয়ে আছে।

শেয়ার করুন