ঢাকা: ১৯৯৩ সালে মুম্বাইয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত বলিউড অভিনেতা সঞ্জু বাবাকে ফের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
বৃহস্পতিবার দেওয়া রায়ে তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চে এই আদালত। একইসঙ্গে আগামী একমাসের মধ্যে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দেন। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর এই মামলার শুনানি শুরু হয়। দীর্ঘ ১১ মাস শুনানির পর আদালত এই রায় দিল। রায়ের পর মুম্বাই ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। হামলার স্থান, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, অফিস-আদালত, শপিংমলসহ স্পর্শকাতর স্থানে বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট এর আগে যে ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ইয়াকুব মেমনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকি ১০ জনের সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
এর আগে ২০০৭ সালে ভারতের টিএডিএ আদালত একই ঘটনায় তাকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট এক বছর সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর নির্ধারণ করেন।
অবশ্য তাকে পাঁচ বছরই কারাগারে থাকতে হচ্ছে না। কারণ এর আগে ২০০৭ সালে তিনি দেড় বছর কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন। তাই আপাতত তাকে সাড়ে তিন বছর কারাগারে থাকতে হচ্ছে।একই বছরের ২৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
এছাড়া ২০০৬ সালে অবৈধভাবে একে-৫৬ এবং ৯-এমএল পিস্তল রাখার জন্য তিনি অভিযুক্ত হন।
এদিকে রায় শোনার পর সঞ্জয়ের বোন প্রিয়া দত্ত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এছাড়া সঞ্জয়ের আইনজীবী রায়কে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেন।
সাড়ে তিন বছর সাজাকালীন এই সময়ে সঞ্জয় দত্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করেন।
রায়ে বলা হয়, ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের ঘটনায় আইয়ুব মেমন যে প্রধান আসামি আমাদের সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
হামলায় আদালত পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতাও খুঁজে পেয়েছেন বলে রায়ে বলা হয়। এই বিষয়ে আদালত বলেন, ইতিহাসের এই ঘৃণ্য হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসাজোশও অস্বীকার করা যায় না।
আদালত আরো বলেন, অভিযুক্ত সবাই পাকিস্তানে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত। আর আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন খ্যাত দাউদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে এই হামলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার করা হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল বলেও আদালত উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ ১২ জনের একটি দল ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত মুম্বাইয়ে দুপুর ১টা ৩৩ মিনিট থেকে ৩টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ১২টি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত হয়। ঐ ভয়াবহ বোমা হামলায় ২৫৭ জন ব্যক্তি নিহত ও ৭১৩ জন আহত হয়। হামলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি রুপিরও বেশি।
এর আগে প্রাণঘাতী ওই বোমা হামলার ঘটনায় ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ২২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া অন্যান্যদের ১ লাখ রুপি জরিমানাসহ ১০ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
হালে খল চরিত্রে অভিনয় করে পর্দা কাঁপানো সঞ্জু বাবার বিরুদ্ধে বাস্তবেও অনেক খল আচরণের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে একটি ৯-এমএম পিস্তল ও একটি একে-৫৬ অবৈধভাবে বহনের দায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ঐ ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় রুপালি পর্দায় ‘বিনা দোষে ভিলেনদের চক্রান্তে কারাভোগ করা’ এই অভিনেতাকে। তবে উচ্চ আদালতে আপিল করে জামিন পেয়ে যান তিনি।
মুম্বাই বোমা হামলার ঘটনায় গ্রেফতারের পরও ১৬ মাস কারাভোগ করতে হয় এই ‘বেপরোয়া’ অভিনেতাকে। তবে, বেশ কয়েকবার উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করে এখন পর্যন্ত জামিনে হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
বলিউড কাঁপানো তারকা অভিনেতা সুনীল দত্ত ও অভিনেত্রী নার্গিস দত্ত দম্পতির ছেলে সঞ্জয় ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’ সিরিজের জন্য ২০০৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের কাছ থেকে বিশেষ সম্মাননা গ্রহণ করেন।
বলা হয়, ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ হামলার প্রতিশোধ নিতেই মুম্বাইয়ে এই হামলা ঘটানো হয়।
২১ মার্চ, ২০১৩