ঢাকা: রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা দণ্ডবিধি ও দ্রুত বিচার আইনের দু’টি মামলায় বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ও যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানের জামিন ও রিমান্ড নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বাকি ১৫১ নেতাকর্মীর জামিন নামঞ্জুর করে ২ মামলায় ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রিজভী-ফারুক-আমানকে জেলহাজতে পাঠিয়ে আদালত আদেশ দিয়েছেন, তাদেরকে প্রয়োজনে জেলহাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে।
বুধবার মামলা দুটির রিমান্ড ও জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে পৃথক দু’টি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এসব নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ১২ মার্চ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় (২১ নম্বর) পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর আসামিদের ১০ দিনের এবং একই থানার এসআই মাহবুবুল হাসান দ্রুত বিচার আইনে করা মামলায় (নম্বর ২০) আরও ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান।
বুধবার দুপুরে প্রথমে বিস্ফোরক আইনের মামলায় অতিরিক্ত সিএমএম মোহাম্মদ আলী হোসেইনের আদালতে আসামিদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে শুনানি করেন অতিরিক্ত মহানগর পিপি শাহ আলম তালুকদার।
তিনি বলেন, গত ১১ মার্চ বেলা ৩টার দিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে উল্লেখিত আসামিরাসহ আরও ৫০/৬০ জন হঠাৎ করেই ইট পাটকেল, লোহার রড, শাবল, লাঠি, হকিস্টিক, ইত্যাদি হাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তার ওপর, টপ কালেকশনের গলি ও নয়াপল্টন মসজিদ গলির সামনের রাস্তায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও যানবাহন ভাংচুর করেন, পরপর ১৮/২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান এবং রাস্তার ওপর ৭টি স্থানে টায়ার,চট, কাগজ দিয়ে আগুন ধরিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করেন।
পুলিশ এতে বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ, অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন। সেখান থেকেও তারা পুলিশের ওপর আরও দুটি ককটেল নিক্ষেপ করেন।
এ সময় পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে তল্লাশি চালিয়ে ৩য় তলায় দাফতরিক রুমের বাথরুম থেকে ২টি, কনফারেন্স রুমের বাথরুম থেকে ২টি, ৪র্থ তলায় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির অফিসের পূর্বকোণের বারান্দায় নির্মাণ সামগ্রীর চিপায় রাখা অবস্থায় ৪টিসহ মোট ১০টি তাজা হাতবোমা উদ্ধার করা হয়।
এ অবস্থায় মামলাটির প্রকৃত রহস্য ও বোমার উৎস এবং বিষ্ফোরণের রহস্য জানতে ও পলাতক অপরাপর আসামিদের গ্রেফতার করতে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির পর আসামিপক্ষে একে একে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সুপ্রীমকোর্টের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, বোরহান উদ্দিন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ আইনজীবী। এছাড়াও আসামিপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা খান, খোরশেদ আলম, খোরশেদ মিয়া আলম, ও জয়নুল আবেদীন মোজবাহসহ দু’শতাধিক আইনজীবী।
শুনানিতে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘‘এ মামলা মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা হয়েছে। প্রথমে মহাসচিবসহ ৩ জনকে হুকুমদাতা হিসেবে গ্রেফতার করা হলেও মামলার এজাহারে এ সম্পর্কে কোনো বক্তব্যই লেখা হয়নি।’’
‘‘পুলিশের প্রত্যেকটি কার্যক্রম মিডিয়ার দেখানো হলেও যখন বিএনপি অফিসে তারা ঢুকে তখন কোন মিডিয়া প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি এবং বোমা উদ্ধারের কোনো ফুটেজ নিতে দেওয়া হয়নি। পরে তারা বোমা উদ্ধারের নাটক সাজিয়েছে। পুলিশই এসব বোমা এনে বিএনপি অফিস থেকে উদ্ধার দেখিয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আসামিদের জামিন চান।
শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল কবির রিজভী, জয়নাল আবদিন ফারুক ও আমান উল্লাহ আমানের রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নাকচ করে তাদের প্রয়োজনে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। বাকি ১৫১ নেতাকর্মীর প্রত্যেকের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এ ছাড়াও দ্রুত বিচার আইনের মামলায় মহানগর হাকিম কেশব রায় চৌধুরী ১৫১ নেতাকর্মীর প্রত্যেকের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রুহুল কবির রিজভী, জয়নাল আবদিন ফারুক ও আমান উল্লাহ আমানকে এ মামলায়ও প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন তিনি।
গত ১১ মার্চ বিকেলে নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণ ও সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের অভিযান চালিয়ে ১৫৭ জন নেতকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আসামিদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
পরদিন ১২ মার্চ পৃথক দু’টি আদালত ১৫৪ নেতাকর্মীকে জেলহাজতে পাঠান। এদিন বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় (২১ নম্বর) পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর আসামিদের ১০ দিনের এবং একই থানার এসআই মাহবুবুল হাসান দ্রুত বিচার আইনে করা মামলায় (নম্বর ২০) আরও ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ রিমান্ড ও জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করা হয় বুধবার।
রিমান্ডে নেওয়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. জেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সোহেল রানা, মঞ্জুর হোসেন, এহসানুল হক, আজিজুল ইসলাম মুনির, আলাউদ্দিন মানিক, ইকবাল মোর্শেদ খান, কামাল আহমেদ, মো. শাকিল, মনির হোসেন, তাইমুল ইসলাম, ইকবাল, নাঈম আহমেদ, মজিবর রহমান, মিঠু তালুকদার, মামুন, ওমর ফারুক, জুলফিকার আলী ভুট্টু, মামুন, দেলোয়ার হোসেন, রবিউল আউয়াল, জসিম উদ্দিন, মামুনুর রশিদ, ওয়াহিদুজ্জামান, আল আমিন, আবুল হোসেন, মাসুদ রানা রিয়াজ, আবুল কালাম, মিজান, বাচ্চু, কামরুজ্জামান ওরফে রিপন, লিটন, আব্দুল মান্নান, শহিদুজ্জামান, আমির হোসেন জুয়েল, রেজাউল , এম এ সোবহান, রফিকুল ইসলাম, মো. জুয়েল, আল আমিন, ওমর ফারুক, মিজানুর রহমান, শাহীন মো. শাহান শাহ, জাকির হোসেন, আজগর আলী, শাহজাহান, মুকুল সরকার, মাসুদ, খোরশেদ আলম, শাহজাহান পাঠান, শিহাব উদ্দিন, রবিউল, কামাল উদ্দিন, নাসির উদ্দিন, সবুজ, নিজাম উদ্দিন হাওলাদার, নাসির আহমেদ খোকা, অ্যাডভোকেট এ এন এম আবেদ রেজা, সোহেল, হাফেজ সাইফুল্লাহ, আবু সালেহ, সিরাজুল ইসলাম মানিক, মাহবুবুর রহমান ছানা, শাহীন, শামসুদ্দিন, কামরুল, এশাকুল ইসলাম লিন্টু, রুবেল মাহমুদ, মিয়া হোসেন, মেহেদি হাসান লিটু, শাহাবুদ্দিন, লিটন, সালাউদ্দিন, সেন্টু শেখ, আব্দুল কাদের, আশিক, শাহমান শাহাদাত, জহিরুল ইসলাম, আনোয়ার, তোজাম্মেল হক সোহাগ, কাজী রওনাকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন, মইনুল ইসলাম, আরেফিন আহমেদ খান সাজু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ফোরকান-ই-আলম, সাইফুদ্দিন আহমেদ, জামাল শরিফ হিরু, তাজুল ইসলাম, নাজমুল হোসেন রাসেল, মনিরুজ্জামান, শাহজাহান, আব্দুল হালিম খান, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল কাদির জিলানি ভূঁইয়া, রুহুল আমিন, খোকন এরশাদ, জিয়াউল হক জিয়া, ইকবাল হোসেন গনি, বশিরুল আলম টিটু, আল আমিন, এ্যানি, সুমন আহমেদ রাজ, জুয়েল, আসাদুজ্জামান শিমুল, এম এ বারী, আব্দুল্লাহ, মনির হোসেন, রাসেল, নাসির তালুকদার, বাবুল শিকদার, হোসেন, জাহাঙ্গির আলম, কায়সার, মোশাররফ হোসাইন, ওয়াসিম আলম, জাহিদুল আলম মিলন, মাসুদ রানা, সোহেল, সাইফুল্লাহ, আবুল কালাম, মালেক, এম এ কাশেম মজুমদার, এম এ জহিরুল ইসলাম, রতন মিয়া, বিল্লাল হোসেন, রেজাউল করিম, ইলিয়াস, জোনায়েদ ওসমান, আলমগীর, তুষার, ফরহাদ, দাউদ চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, কে এম সাইফুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট জেড মোর্তজা চৌধুরী, এম আর আলী ফাহিম, নজরুল ইসলাম, প্রফেসর আবু তাহের, সম্রাট, আলমাস, আশরাফুল ইসলাম শুকুর, তানভির হায়দার, শাহীন, আব্দুল্লাহ আল হাসান, ফেরদৌস ও ইমরুল কায়েস।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১১ মার্চ বেলা ৩টার দিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে উল্লেখিত আসামিরাসহ আরও ৫০ থেকে ৬০ জন হঠাৎ ইট-পাটকেল, লোহার রড, শাবল, লাঠি, হকিস্টিক, ইত্যাদি হাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তার ওপর, টপ কালেকশনের গলি ও নয়াপল্টন মসজিদ গলির সামনের রাস্তায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অফিস ও যানবাহন ভাংচুর করেন। তারা পরপর ১৮ থেকে ২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান ও রাস্তার ওপর ৭টি স্থানে টায়ার, চট, কাগজ দিয়ে আগুন ধরিয়ে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করেন।
পুলিশ এতে বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ, অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকে। সেখান থেকেও তারা পুলিশের ওপর দু’টি ককটেল নিক্ষেপ করে।
এ সময় পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করে তল্লাশি চালিয়ে ৩য় তলায় দাফতরিক রুমের বাথরুম থেকে ২টি, কনফারেন্স রুমের বাথরুম থেকে ২টি, ৪র্থ তলায় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির অফিসের পূর্বকোণের বারান্দায় নির্মাণ সামগ্রীর মাঝে রাখা অবস্থায় ৪টিসহ মোট ১০টি তাজা হাতবোমা উদ্ধার করে।
মার্চ ২০, ২০১৩