চট্টগ্রাম: এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ অথবা মে মাসের শুরুর দিকে পানগাঁও ইনল্যান্ড কন্টেইনার টার্মিনাল (আইসিটি) চালু হবে বলে জানিয়েছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।
টার্মিনালটি চালু হলে ঢাকা খেকে নদী পথে আমদানি-রফতানি পণ্যের কন্টেইনার পরিবহন করা হবে। এতে করে ব্যবসায়ীদের সময় বাঁচার পাশাপাশি ভোগান্তি ও খরচ কমবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে পানগাঁও আইসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান মন্ত্রী।
চুক্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও বিআইডব্লিউটিএ‘র পক্ষে চেয়ারম্যান ড.মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা খন্দকার স্বাক্ষর করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে বাংলাদেশের ইতিহাসে ঐতিহাসিক মুহূর্ত আখ্যায়িত করে মন্ত্রী বলেন,‘এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ অথবা মে মাসের শুরুর দিকে পানগাঁও আইসিটি কন্টেইনার টার্মিনাল চালু করা হবে। এজন্য এরই মধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষ।’
তিনি বলেন,‘টার্মিনালটি চালু হলে আশুলিয়া এবং টঙ্গি থেকে খুব সহজে জাহাজে করে আমদানি-রফতানি পণ্যের কন্টেইনার পানগাঁও আসতে পারবে। আর সেখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে জাহাজে উঠতে পারবে।‘
মন্ত্রী জানান, পানগাঁও আইসিটি কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে তিনটি জাহাজ ক্রয়ের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই জাহাজগুলো আনা হবে।’
এ টার্মিনালের জন্য বিভিন্ন ইয়ার্ডে ৩২টি জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনে সড়ক পথের উপর সর্ম্পর্ণ নির্ভর করা যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘সড়ক পথে খবর যেমন বেশি তেমনি নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য পৌছানো যায়না। কারণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট লেগেই থাকে। এছাড়া রয়েছে পণ্য চুরির আশঙ্কা।‘
তিনি জানান, পানগাঁও কন্টেইনার টার্মিনালে যেসব জাহাজে করে কন্টেইনার আনা নেয়া করা হবে সেসব জাহাজের প্রত্যেকটিতে ১২০ থেকে ১৪০টি কন্টেইনার বহন করতে সক্ষম।
ফলে নৌ-পথে পণ্য আনা নেয়া করলে সময় এবং খরচ কমবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
সড়কে চুরির ঘটনার কথা উল্লেখ করে নৌ-পথে চুরি রোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, নৌ-পথে নিরাপত্তার জন্য কোস্টগার্ড বাহিনী টহলে থাকবে। এছাড়া শিল্প পুলিশের মতো নৌ-পুলিশ গঠনের করা হবে বলে জানান তিনি। তারাও সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে।
নৌ-পুলিশ গঠনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
পানগাঁও থেকে জাহাজ চলাচলের জন্য নদীর নাব্যতা এবং চ্যানেল জাহাজ চলার উপযোগী কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান,‘নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য এবং চ্যানেল সচল রাখতে হলে নিয়মিত সংস্কার করতে হবে।‘
তিনি জানান, চ্যানেল ঠিক রাখতে ৫০টি ড্রেজার দরকার। এরই মধ্যে নদীর নাব্যতা রক্ষায় তিনটি ড্রেজার কেনা হয়েছে। চলতি মাসে ৮টি ড্রেজার আসবে। আগামী মাসে আসবে আরো তিনটি। এছাড়া ২২টি ড্রেজার বেসরকারিভাবে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে বাকি ড্রেজারগুলোও কেনা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ড বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছেন শাহজাহান খান। তবে এ বিষয়ে আদালতে একটি মামলা থাকায় এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
তিনি বলেন,‘উচ্চ আদালতে একটি মামলা থাকায় এনসিটি পরিচালনায় অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। তবে চট্টগ্রাম বন্দরই এটি পরিচালনা করবে এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে দাতা খুঁজছি:
নৌ-পরিবহনমন্ত্রী জানিয়েছেন গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য একটি সেল গঠন করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইও শেষ হয়েছে। এজন্য এখন অর্থের যোগানদাতা খোঁজ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলা হয়েছে। তারা বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে চিঠি দিয়েছে। এরই মধ্যে চীন ও দুবাই অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথ উদ্যোগে বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার পানগাঁয় আইসিটি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় ২০০৫ সালের ২৩ জুন উভয় সংস্থার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তখন এ টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা হলে ২০০৭ সালে চুক্তিপত্রে সংশোধন আনা হয়।
পরে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। চট্টগ্রাম বন্দর এ পর্যন্ত ১৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ৩২ একর জায়গার উপর পানগাঁ আইসিটি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ১৮০ মিটার দীর্ঘ জেটি নিমাণ করা হয়েছে। যেখানে দুইটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ থেকে একসঙ্গে পণ্য উঠা-নামা কাজ চলবে।
মার্চ ২০ ২০১৩