বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্কবোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনারকে অনেকেই বলেন ‘স্বপ্নের প্লেন’। ড্রিমলাইনার ৭৮৭ উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল এটি বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিমান। তবে ব্যাটারি ত্রুটির কারণে স্বপ্নের এই প্লেন চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই পড়েছিল মাটিতে। অবশ্য গত ১৫ মার্চ বোয়িং কর্তৃপক্ষ ড্রিমলাইনারের ব্যাটারি ত্রুটি সমাধানের ঘোষণা দিয়েছে, ফলে শিগগিরই আবার উড়তে দেখা যাবে ড্রিমলাইনারকে।
২০০৯ সালে বোয়িং কোম্পানি এই মডেলের বিমান বাজারে এনেছিল। বোয়িং কর্তৃপক্ষের দাবি, সম্প্রতি তারা ড্রিমলাইনারের উপযোগী কার্যকর ব্যাটারি তৈরি করেছেন, যা আবারও ড্রিমলাইনারের গৌরব ফিরিয়ে আনবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং এর তৈরি যাত্রীবাহী বিমান বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, চিলি ও ভারত। যান্ত্রিক ত্রুটি বিশেষ করে ব্যাটারির সমস্যার কারণে বিধ্বস্ত হওয়ার আশঙ্কায় দেশগুলো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এসময়ে বিভিন্ন দেশে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানগুলোতে নানা যান্ত্রিক ত্রুটিও ধরা পড়ছিল। এসব সমস্যার মধ্যে ছিল জ্বালানি চুঁইয়ে পড়া, ব্রেকের সমস্যা, ককপিটের জানালা ভেঙে যাওয়া প্রভৃতি। এই মডেলের বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের মোট বিমানের প্রায় অর্ধেকের ক্রেতা জাপানের দুটি বিমান সংস্থা অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ (এএনএ) ও জাপান এয়ারলাইনস কোম্পানি।যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই মডেলের একটি বিমান জরুরি অবতরণ করে। এরপর জাপানের ওই দুটি সংস্থাই প্রথম এই মডেলের বিমান চলাচল স্থগিত করে। পরে যুক্তরা, কাতার, চিলি ও ভারতও বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের বিমান চলাচল স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
তবে সুখবর হচ্ছে, ব্যাটারির ত্রুটির কারণে ফ্লাইট স্থগিত হওয়া বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭ আবারও চালু হতে যাচ্ছে। আমেরিকার এয়ারলাইন রেগুলেটরি কমিশনের অনুমোদনের পর বোয়িং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আবারও আকাশে উড়বে ড্রিমলাইনার।
বোয়িংয়ের স্বপ্নের উড়োজাহাজ ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ২০১১ সালের ২৬ অক্টোবর প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। বিশ্বের প্রথম যৌগিক উপাদান দিয়ে তৈরি এ বিমানের অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য কম জ্বালানি খরচ।
প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রায় ড্রিমলাইনার টোকিওর নারিতা বিমানবন্দর থেকে হংকংয়ে যায়। অল নিপ্পন এয়ারওয়েজের (এএনএ) এ ফ্লাইটটি তার প্রথম যাত্রায় ২৫২ জন যাত্রী বহন করেছিল। তবে আরও তিন বছর আগেই আকাশে ওড়ার কথা ছিল বোয়িং ড্রিমলাইনারের, কারিগরি জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২০১১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম বিমানটি হস্তান্তর করতে পেরেছিল বোয়িং।
৩৩০ আসনের ড্রিমলাইনার বিশ্বের প্রথম দূরপাল্লার উড্ডয়নক্ষম মাঝারি আকৃতির উড়োজাহাজ। এর কাঠামোর ৫০ ভাগ কার্বন ফাইবার, ২০ ভাগ অ্যালুমিনিয়াম, ১৫ ভাগ টাইটানিয়াম, ১০ ভাগ ইস্পাত ও বাকি ৫ ভাগ অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি।বোয়িংয়ের দাবি, এর অপেক্ষাকৃত বড় জানালা এবং কেবিনের তুলনামূলক বেশি আর্দ্রতা যাত্রীদের ক্লান্তি কমিয়ে দেয়।
মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং এই ড্রিমলাইনারের পেছনে খরচ করেছে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।
এক নজরে ৭৮৭ ড্রিমলাইনার
ধরন: জেট
নির্মাতা দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান: বোয়িং কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেনস
পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম আকাশে ওড়ে: ১৫ ডিসেম্বর ২০০৯
প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রা: ২৬ অক্টোবর ২০১১
ব্যবহারকারী বিমান সংস্থা: অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ, জাপান এয়ারলাইনস, ইউনাইটেড এয়ারলাইনস, এয়ার ইন্ডিয়া
(১৯মার্চ) নিউজরুম