স্পোর্টস ডেস্ক প্রথমেই স্বীকার করে নিলেন, বাংলাদেশ এখন ‘ব্যাকফুটে’। তাই বলে আশা করতে তো আর দোষ নেই। তামিম ইকবাল তাই আশায় বসতি গড়ছেন। ‘উইকেটে এখনো ক্যাপ্টেন ও মমিনুল আছে। ওরা যদি ১০০ রানের একটা পার্টনারশিপ করতে পারে, এরপর নাসির নেমে কিছু করে…’
কত করলে শ্রীলঙ্কাকে সত্যিকার এক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া যাবে? তামিম স্বপ্ন দেখছেন ‘২৭৫’-এর। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস ৪ উইকেটে ১৫৮।আসলে যা ৪ উইকেটে ৫২। যার অর্থ, চতুর্থ ইনিংসে শ্রীলঙ্কার সামনে ২৭৫ রানের টার্গেট দিতে হলে করতে হবে আরও ২২২। অসম্ভব না বলুন, কাজটা যে খুব কঠিন, এ নিয়ে বোধ হয় কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়।
সেটি করতে পারলে ফলাফল যা-ই হোক, ম্যাচ পঞ্চম দিন বিকেল পর্যন্ত গড়াবেই।তখন কেমন হবে এই উইকেটের মতিগতি? অনুমান করা যাচ্ছে না। এই টেস্টের উইকেট যে প্রথম দিন থেকেই ধাঁধা। তিন দিন খেলা হওয়ার পর সেটি কি বোঝা গেল?
এই উইকেটে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়ে কুমার সাঙ্গাকারা যা বুঝেছেন, তা হলো ‘উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব খারাপ নয়। তবে বাউন্সটা একটু অসমান। গতিতেও কখনো কখনো একটু হেরফের হয়।’ সাঙ্গাকারার ব্যাটিং দেখতে যত ভালো লাগে, কথা শুনতে ভালো লাগে আরও বেশি। কাল দিনের খেলা শেষে সাঙ্গাকারার পরেই এলেন তামিম ইকবাল। বৈদগ্ধ্যে সাঙ্গাকারার চেয়ে পিছিয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু তামিমও খুব সুন্দর কথা বলেন। ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যাও খুব ভালো দিতে পারেন।উইকেট নিয়ে যেমন দারুণ বললেন, ‘ইজি টু ব্যাট, ডিফিকাল্ট টু স্কোর।’
যার মানে, এই উইকেটে ব্যাট করাটা কঠিন কিছু নয়, কিন্তু রান করতে খুব কষ্ট করতে হয়। সেটির কারণ অবশ্য শুধু উইকেট নয়, অবিশ্বাস্য ধীর আউটফিল্ড।সাঙ্গাকারার এটি ১১৭তম টেস্ট, এমন ধীরগতির আউটফিল্ড আগে কখনো দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না। তামিমও যা দেখে মহা বিস্মিত, ‘এর আগে এখানে এসএলপিএলে খেলেছি। বলে ব্যাট লাগালেই তা বিদ্যুৎ-গতিতে ছুটে যেত। এবার তো এখানে বাউন্ডারি মারা সবচেয়ে কঠিন কাজ।’
দ্বিতীয় ইনিংসে এটিকে মাথায় ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিলেন, ‘সুন্দর শট খেলেও যখন চার হয় না, তখন একটু হতাশা তো লাগেই। বাউন্ডারি পেলে সব ব্যাটসম্যানেরই ভালো লাগে। তবে এটা তো পরিবর্তন করার উপায় নেই। আমি তাই শুরু থেকেই ইতিবাচক থাকতে চেয়েছি। প্রথম ইনিংসে কিছু করতে পারিনি। নামার সময়ই তাই ঠিক করে নিয়েছিলাম, রান করার সুযোগ এলে তা নষ্ট করব না। আমি ভুল না করলে আউট হব না, এই বিশ্বাসও ছিল।’
যত কম সম্ভব উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসের ঘাটতিটা ঘুচিয়ে ফেলার লক্ষ্যও ছিল।কোনো উইকেট না হারিয়েই সেটি প্রায় হয়ে গিয়েছিল। নিজের আউটটি নিয়ে তামিমের কোনো আক্ষেপ নেই (‘বলটা যা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে নিচু হয়ে গিয়েছিল’), তবে পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানো নিয়ে তো আক্ষেপ থাকবেই। ‘অমি ভাই (জহুরুল) ও মমিনুল যখন ব্যাটিং করছিল, আমরা খুব ভালো একটা অবস্থায় ছিলাম। হাতে ৮ উইকেট, কাল সারা দিন আছে…কিন্তু ওই দুটি উইকেট আমাদের একটু ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে।’
প্রথম ইনিংসে দুই দলের ব্যবধানটাও গড়ে দিয়েছে সাঙ্গাকারার ইনিংসটা।শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ পাঁচ ইনিংসেই সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের বোলিং যে খুব ভালো বাসেন, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু এই ইনিংসটার মাহাত্ম্য কি একটু বেশি? নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই যে দলকে ৪ উইকেটে ৬৯ হয়ে যেতে দেখেছেন। সাঙ্গাকারা অবশ্য দাবি করলেন, সব সেঞ্চুরিই তাঁর কাছে একই রকম, ‘আমার কাজ হলো রান করা, সেটি যে পরিস্থিতিই থাকুক বা প্রতিপক্ষ যে-ই হোক।’ এই উইকেটে কত রান তাড়া করা সম্ভব—এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য আত্মবিশ্বাসের ঝলক ফুটে বেরোল, ‘যত রানই হোক না কেন, আমাদের তা তাড়া করতে হবে।’—এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন!
(১৯ মার্চ): নিউজরুম