স্পোর্টস ডেস্ক খেলোয়াড়ি জীবনে যতি টেনেছেন ১৯৮৬ সালে। কিন্তু খেলার মাঠ ছাড়তে পারেননি।প্রায় ২৭ বছর ধরে নিরলসভাবে কোচিং করাচ্ছেন। ফুটবল সংগঠকও। তবে নজরুল ইসলামের (লেদু) বড় পরিচয় তিনি একজন কোচ। স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে কাল মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ড্রয়ের পর খুবই তৃপ্ত দেখাল চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচকে
বিদেশি ফুটবলার নিয়ে খেলেছে মুক্তিযোদ্ধা। অথচ বিদেশি ফুটবলার ছাড়াই দারুণ খেলল চট্টগ্রাম আবাহনী!l
নজরুল ইসলাম (লেদু): এটা আসলে অসম প্রতিযোগিতা। সেজন্য আজকের ড্রটা আমার চোখে জয়ের সমান। খেলোয়াড়দের কাছে যা চেয়েছিলাম, ওরা সেটা পূরণ করেছে। আমি বড় কোচ নই। কিন্তু খেলোয়াড়দের রিড করি, ওদের মনের ভাষাটা বোঝার চেষ্টা করি।আমার চাওয়াটাও ওদের বুঝতে দিই। এসবের সমন্বয়েই এই ফল।বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তো একটা ম্যাচও খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না আপনারা?l
নজরুল: এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। এই স্বাধীনতা কাপের ১২টা দলের মধ্যে ১১টা দলই কোনো না কোনো ম্যাচ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলবে। অথচ বাফুফে আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। একটা ম্যাচও দেয়নি।
এবার আপনার কোচিং ক্যারিয়ার নিয়ে কিছু বলুন?l
নজরুল: আমি ২৬-২৭ বছর ধরে কোচিং করাচ্ছি। ১৯৮৭ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল দিয়ে শুরু। এরপর আমি চট্টগ্রামে মোহামেডান, আবাহনী, সিটি করপোরেশন, মুক্তিযোদ্ধা…সব বড় দলে কোচিং করিয়েছি। ২০০২ সালে প্রথম বাংলাদেশ গেমসে আমি ছিলাম চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কোচ। সেবার দলকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলাম।
ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল ক্লাবটা তো আপনার ছোঁয়ায় জেগে উঠেছিল…l
নজরুল: ১৯৯৩ সালে আমি ফকিরেরপুল দলের দায়িত্ব নিয়ে দলটাকে প্রিমিয়ারে তুলি ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৯-২০০০ সালেও ফকিরেরপুলের কোচ ছিলাম। তখন চট্টগ্রামের ৮-১০ জন তরুণ খেলোয়াড়কে পেয়েছিলাম। বিকেএসপির কিছু খেলোয়াড়ও ছিল। ফকিরেরপুলকে চ্যাম্পিয়ন করার সুবাদে ১৯৯৪ সালে আমাকে ফুটবল ফেডারেশন উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য মিয়ানমারে পাঠায়।
ঢাকায় না থেকে কেন চট্টগ্রামে চলে গেলেন?l
নজরুল: পারিবারিক কারণেই চট্টগ্রামে চলে যেতে হয়। তখন সবে বিয়ে করেছি। এরপর বাবা হলাম। ঢাকায় থাকা কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এ জন্য ভাবলাম চট্টগ্রামেই থাকতে হবে।
আপনি যখন খেলেছেন তখনকার সঙ্গে এখনকার ফুটবলের পার্থক্য কোথায়?l
নজরুল: তখন ব্যক্তিগত প্রতিভা ছিল বেশি। কিন্তু বর্তমানে খেলা হয় টোটাল ফুটবল। আগে যদি পাঁচটা স্কিলফুল ফুটবলার থাকত তারা সবাই মাঝমাঠ থেকে পাঁচজনকে কাটিয়ে গোল করত। এখন প্রতিটি জোনে পরীক্ষা দিতে হয়। তখন খেলোয়াড়দের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল। এখন সেটা নেই। সবাই পেশাদার। মাঠে গিয়ে আগে প্রথমেই দেখে যে, কর্মকর্তা এসেছে কি না। মাঠের ভেতরের দরকারি সরঞ্জাম আছে কিনা। আমরা শুধু নাশতা-পানি খেয়ে খেলেছি। ফুটবল খেলার পর পুরি খেয়েছি, পেঁয়াজু খেয়েছি। এখন রিকভারি করার জন্য কলা-ডিম দেওয়া হয়, যেগুলো আমরা পাইনি।
আপনি কোচিংয়ে কেমন টাকাপয়সা পাচ্ছেন?l
নজরুল: আমি এসব নিয়ে ভাবি না। পারিবারিক ব্যবসা আছে বলে কোচিংয়ের ওপর নির্ভরশীল নই। কোচিংয়ে যেটা পাই সেটা দিয়ে আমার ফ্যামিলি চলবে না। এখনো ফুটবল আমার কাছে নেশা, ভালোবাসা।
এই স্থূল শরীর নিয়ে এত খাটাখাটুনি সহ্য হয় আপনার?l
নজরুল: আসলে আমার বডিটা বালকি। কিন্তু ১০০ ভাগ সুস্থ আমি। শুধু কোমরে সামান্য ব্যথা আছে। তবে পুরো ফিট।
আপনি অনেক বড় বড় খেলোয়াড় তৈরি করেছেন…l
নজরুল: আমি সেটা বলব না। আমি কোনো ফুটবলারের পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না। আমি জানি অনেকেই আছে…ওরাই বলবে আমি লেদু ভাইয়ের প্লেয়ার। আমি পরিচয় দেব না।কোনো দিন সেটা দিইওনি।
মাঠে আর কত দিন আপনাকে দেখা যাবে?l
নজরুল: যত দিন ফিট থাকব তত দিন ক্রীড়াঙ্গনে থাকব।
(১৯ মার্চ): নিউজরুম