বিমান বন্দর : “হরতাল কী জিনিস গত ১৫/১৬ বছরেও টেরও পাইনি! বিদেশের মাটিতে হরতাল তো দূরের কথা, কোনো ধরনের গোলযোগও নেই!
দেশের জন্য বিদেশের মাটিতে এত কিছু করার পর আজ দেশে এসে হরতালে বিমানবন্দরে সাত ঘণ্টা বসে থেকে মনটা খারাপ হয়ে গেল! গত দু’বছরেও এমন মন খারাপ হয়নি!”
কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বিমানবন্দরে (শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর) কথাগুলো বলছিলেন ওমান ফেরত যাত্রী খায়রুল ইসলাম।
হরতালের কারণে গাড়ি না থাকায় ওমান থেকে ফিরে বিমানবন্দরে আটকা পড়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
খায়রুল বলেন, “আমার বাড়ি কুমিল্লায়। হরতালের কারণে আমাকে নিয়ে যেতে আত্মীয়-স্বজন কেউই আসেননি। দেশে ফিরে সাত ঘণ্টা বসে রয়েছি। গাড়ি নেই। বিদেশে রক্ত পানি করে টাকা রোজগার করি। সেটা দেশে পাঠাই।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা টাকা পাঠাই। সরকারি ও বিরোধী দল নাটক করে!“
তার মতো অনেক যাত্রীই এ ভাবে লাঞ্ছনার শিকার বলে জানান খায়রুল।
সৌদি আরবগামী যাত্রী বাবু বললেন, “ফ্লাইটের তারিখ আজ (সোমবার) থাকায় একদিন আগেই পরিবার-পরিজন ছেড়ে হোটেলে থাকতে হয়েছে!”
অল্প কয়েকদিনের জন্য দেশে এসে এ রকম ভোগান্তি সৃষ্টি করায় তিনি বিরোধী দলকে ধিক্কার জানান।
কুষ্টিয়া থেকে আসা ওমানগামী শিল্পীর বাবা রমজান আলী বাংলানিউজকে বলেন, “মেয়ের আজ বিকেল পাঁচটায় ফ্লাইট। ফ্লাইট তারিখ পরিরর্তন না করায় রোববার রাতে এসে (রোববার) মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় হোটেলে থাকতে হয়েছে।
হোটেল থেকে বিমান বন্দরে আসতেও দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। আমরা কোনো দল করি না।”
হরতালের নামে এ ধরনের ভোগান্তির বিপক্ষে তিনি মত দেন।
আবুধাবী থেকে আসা আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “ভাই, হরতাল না, এটা গজব! প্রতিবার দেশে আসলে ঢাকা থেকে কুমিল্লা ভাড়া নেওয়া হতো দু’ হাজার টাকা। এখন চার হাজার টাকা। তাও গাড়ির সংকট। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আমাদের রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়। তাহলে আমরা কেন ভোগান্তির শিকার হবো?” প্রশ্ন রাখেন তিনি।
হরতালে বিদেশেগামী অনেক যাত্রী রোববার রাতে বাড়ি থেকে এসে বিমানবন্দরে ছিলেন বলে জানা গেছে।
বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গ্রিন বাংলা লিমোজিন সার্ভিসেরর সুপারভাইজার মোবারক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “হরতালে গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানোর ভয়ে গাড়ি কম। মেঘনা-গোমতী সেতুর কাজ করায় দুই/আড়াইশ মাইল অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হয়। এজন্য জায়গা বুঝে কিছু ভাড়া বেশি নেওয়া হয়।“
তবে বিআরটিএ তালিকার বাইরে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
বিমান বন্দর সূত্রে জানা গেছে, হরতালের কারণে কোন ফ্লাইট বাতিল হয়নি। রাস্তায় গাড়ি কম থাকায় যাত্রীদের আসতে ও যেতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে।
এদিকে, সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২০টি ফ্লাইট বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে ও ১২টি বিমান বন্দরে অবতরণ করেছে। হরতালে বিমানে কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানা গেছে।
মার্চ ১৮, ২০১৩