ঢাকা: সংলাপের বিপরীত পথে হাঁটছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। তার সাম্প্রতিক বক্তব্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংলাপে শান্তি নয়, সহিংসতায় মুক্তি খুঁজছেন বিএনপি প্রধান। তাই চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সর্বমহলের প্রত্যাশিত সংলাপের পথই মাড়াচ্ছেন না তিনি।
সর্বশেষ গত শনিবার মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে দেওয়া বক্তৃতা আরো স্পষ্ট করে তুলেছে খালেদা জিয়ার অবস্থান।
ওই দিন তিনি সরকারের সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, “এ খুনি সরকারের সঙ্গে আর কোন কথা নয়।”
কেবল এ কথা বলে যে থেমেছেন তাও নয়। বরং সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেছেন, “রক্ত ঝরেছে, প্রয়োজনে আরও ঝরবে।কিন্তু খুনি সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না বিএনপি।”
ওই বক্তৃতায় সোম ও মঙ্গলবারের হরতালে আরো কিছু প্রাণহানি ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া।
ক্ষমতাসীনদের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, “যে সরকার মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, মানুষকে কথা বলতে দেয় না, সভা সমাবেশে গুলি চালায়, যখন কথন গ্রেফতার-নির্যাতন চালায় তাদের সঙ্গে আপস করার প্রশ্নই ওঠে না।”
১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আপোসহীন নেত্রী খেতাব পাওয়া খালেদা জিয়ার এমন অনমনীয় বক্তব্য কার্যত নতুন এক আপোসহীন আবহ তৈরি করে দিয়েছে। সংলাপের মতো জাতীয় ইস্যুতে বিরোধী দলীয় নেতার এমন আপোসহীন অবস্থান চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো প্রবল করে তুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ওই বক্তব্যের পর তাই সমালোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। গাঁও-গেরামের বৈঠকি আড্ডা থেকে শুরু করে শহুরে চায়ের জটলাতেও এখন শোনা যাচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসনের ওই বক্তব্যের সমালোচনা।
এমনকি সব পরিস্থিতিতে যারা খালেদা জিয়ার পক্ষে কথা বলতেন, তারাও এখন আর খালেদার সুরে গাইছেন না। তাই সমালোচনার ঝড় উঠছে আমজনতার আড্ডা থেকে শুরু করে প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাবেশে।
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি পেতে চাইছেন খালেদা জিয়া! আরো প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে তিনি কি প্রকারান্তরে আরো লাশ ফেলার রাজনৈতিক হুমকিই দিলেন!
যে কারণেই তিনি এমন বক্তব্য দিন না কেন রাজনীতির জল কিন্তু ঘোলা হয়ে গেলো ঠিকই। খালেদা জিয়ার ওই বক্তব্যের জের ধরে রাজপথে আরো লাশ পড়লে তার দায়দায়িত্ব কি খালেদা জিয়া নেবেন?
তার এমন বক্তব্যকে পুঁজি করে কিন্তু কড়া সমালোচনার সুযোগ নিচ্ছে সরকার পক্ষ। সোমবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ তো বলেই ফেললেন, “ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রক্তপিপাসু উঠেছেন খালেদা।”
আর বিরোধী দলীয় নেতার বেকায়দা অবস্থাটা বুঝতে পেরেই কি না কে জানে-আগের চেয়ে আরো বেশি বেশি সংলাপের গুরুত্ব আওড়াচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংলাপ জরুরি বলে মনে করছেন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। একই সুরে গাইছেন আওয়ামী লীগের ক’জন সিনিয়র নেতাও। তবে অনেকেই আবার সংলাপের আগে জামায়াতকে ছাড়ার পরামর্শও দিচ্ছেন বিএনপি প্রধানকে।
এ প্রসঙ্গে প্রধান বিরোধী দলকে হানিফের সাফ কথা, সংলাপের জন্য জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে বিএনপিকে।
এদিকে খালেদা জিয়া যাই বলুক না কেন, বিএনপির অনেক নেতাই এখনো সংলাপের বুলি আউড়ে যাচ্ছেন সমানে। যদিও কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ইস্যুতেই সংলাপ ধরে রাখতে চায় জামায়াত বিরোধী শাহবাগীরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য হলো, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এজেন্ডা নিয়ে সংলাপের চিঠি দিলে বিরোধী দল সেই সংলাপে অংশ নেওয়ার কথা ভাববে।”
এ বিষযে আর একটু আগ বাড়িয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “সরকারের দ্বৈতনীতির কারণেই এমন হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “দু’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এজেন্ডা নিয়ে সংলাপের চিঠি দিলে বিরোধী দল সেই সংলাপে অংশ নেওয়ার কথা ভাববে।”
এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া দেশ অচলের আপোসহীন পথে এগুবেন, নাকি দেশ সচল রাখার রাজনীতি শুরু করবেন তা বুঝতে আরো ক’টি দিন সময় হয়তো লাগবে।
মার্চ ১৮, ২০১৩