শিশু অধিকার
তৃতীয় শ্রেণীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যপুস্তকটিতে পৃষ্ঠা নম্বর ১৬-তে শিশুদের কতগুলো বিশেষ অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো: ক. জন্ম নিবন্ধনের অধিকার, খ. একটি নাম পাওয়ার অধিকার, গ. স্নেহ ও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার, ঘ. পুষ্টি ও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার, ঙ. খেলাধুলা ও বিনোদনের অধিকার, চ. শিক্ষার অধিকার, ছ. মেয়ে ও ছেলে শিশুর সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার। সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য এসব অধিকার পূরণ করা খুবই প্রয়োজন।
এখানে দেখা যাচ্ছে, প্রথম দুটি অধিকার (ক ও খ) প্রায় প্রত্যেক শিশুই ভোগ করে। কিন্তু বাকি পাঁচটি অধিকার সব শিশু ভোগ করতে পারে না। এখানে রয়েছে নানা বৈষম্য। নিম্নবিত্ত শ্রেণীর শিশুরা এসব অধিকার থেকে খুব বেশি বঞ্চিত হচ্ছে। তারা অনেক ক্ষেত্রেই পুষ্টিহীনতায় ভোগে।চিকিৎসাসেবা সঠিকভাবে পায় না। দরিদ্র পরিবারগুলোতে দেখা যায় আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শিশুরা স্নেহ ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ‘শিক্ষা’ অর্জন করে সুশিক্ষিত নাগরিক হওয়া প্রত্যেক শিশুরই অধিকার। কিন্তু এখনো ‘ঝরে পড়া’ বন্ধ হয়নি। প্রতিবছরই বিদ্যালয় ছেড়ে যায় অনেক শিশু। এর প্রধান কারণ আর্থিক অসচ্ছলতা, উদাসীনতা ও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব, যা হতাশাজনক। শৈশবে যে মাঠে খেলাধুলা করেছি, সেখানে এখন নগরায়ণের জোয়ার উঠেছে। খেলাধুলার বৃহৎ পরিসর থেকে শিশুরা এভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।
অনেক শিশুর কায়িক শ্রম—রিকশা চালানো, ঠেলাগাড়ি ঠেলা, ওয়ার্কশপে কাজ করা—করতে দেখা যায়। এরা বঞ্চিত হচ্ছে সব ধরনের অধিকার থেকে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও এরা স্বেচ্ছায় এই পথ (শিশুশ্রম) বেছে নিচ্ছে দুই মুঠো অন্নের জন্য, যা দারুণ কষ্টদায়ক। দুর্গম এলাকা, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলোতে শিশুরা মানবেতর জীবন যাপন করে।
শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশু অধিকারগুলো পূরণ না হলে শিশুদের বেড়ে ওঠার পথে সৃষ্টি হবে নানা শঙ্কা ও জটিলতা। এর ফলে শিশুরা ভুগবে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় এবং সেই সঙ্গে নষ্ট হবে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ। আর এই শিশু অধিকারগুলো পূরণ করার দায়িত্ব পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের। সর্বোপরি শিশুদের স্বার্থে ‘হ্যাঁ’ বলা।
সঞ্জয় কুমার ভৌমিক
আলীশারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গল।
১৮ মার্চ/২০১৩/নিউজরুম.