১৯১৯ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত সাপ্তাহিক খবরের কাগজ ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’র একটি সংখ্যায় তিনি লিখেছিলেন, ‘শহরের ওপর নয়, ভারত দাঁড়িয়ে আছে এর সাত লাখ গ্রামের ওপর ভর করে। উত্তরাধিকার সূত্রেই আমরা গ্রামীণ সভ্যতাকে আঁকড়ে আছি। গ্রামীণ সভ্যতার পরিবর্তে শহুরে সভ্যতা জায়গা করে নেবে—এটা আমার কাছে অসম্ভব বলেই মনে হয়।’ কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর এ ধারণা সম্ভবত ভুল প্রমাণিত হতে চলেছে।বর্তমানে ভারতের আট হাজার শহরে বাস করছেন প্রায় ৪০ কোটি মানুষ। ভারতের মোট জাতীয় উত্পাদনের (জিডিপি) ৬০ শতাংশই অর্জিত হচ্ছে এসব শহর থেকে।
ভারতের জনপ্রিয় ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘ইন্ডিয়া টুডে’র উদ্যোগে সে দেশের সেরা শহর নির্বাচনের লক্ষ্যে ৫০টি বড় শহরের ওপর জরিপ চালান বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিক জরিপে অংশ নেন এসব শহরে বসবাসকারী বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রায় দুই হাজার মানুষ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দেওয়া তথ্য থেকে শহরগুলোতে বসবাসের মোটামুটি বাস্তব চিত্র উঠে আসার পর তা আবার যাচাই-বাছাই করেন বিশেষজ্ঞরা। এরপর শহরগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য নেওয়া হয় সরকারি নথি থেকে। সেরা শহর নির্বাচনের জন্য নয়টি মানদণ্ড বিবেচনায় নেওয়া হয়। সেগুলো হলো: শিক্ষা, গৃহায়ণ ও পরিবহন, পরিবেশ, অপরাধপ্রবণতা ও নিরাপত্তা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন, অর্থনীতি এবং বিনিয়োগ। সবকিছু মিলিয়ে পয়েন্টের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয় ভারতের সেরা ৩০টি শহর।
০.৭৩ পয়েন্ট পেয়ে তালিকার শীর্ষে স্থান পায় চেন্নাই (পূর্বতন মাদ্রাজ)। তালিকার সেরা পাঁচে আরও আছে চণ্ডীগড়, মুম্বাই, হায়দরাবাদ ও সিমলা। তালিকায় ঠাঁই পাওয়া অন্য শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে পুনে, বেঙ্গালুরু, গান্ধীনগর, থানে, কলকাতা, গুরগাঁও, আহমেদাবাদ, দিল্লি, থিরুবানান্তপুরম, জয়পুর, নয়ডা, ভুবনেশ্বর, ভোপাল, লক্ষৌ, হাওড়া, পাটনা ইত্যাদি।
শিক্ষা মানদণ্ডে বিবেচিত হয়েছে শিক্ষার ব্যয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান। এ ক্ষেত্রে সেরা শহর নির্বাচিত হয়েছে চেন্নাই। গৃহায়ণ ও পরিবহন মানদণ্ডে বিবেচিত হয়েছে বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের হার এবং জনপরিবহনের গুণগত মান। এ ক্ষেত্রে সেরা শহর নির্বাচিত হয়েছে থিরুবানান্তপুরম। পরিবেশ মানদণ্ডে বিবেচিত হয়েছে বাতাসে ক্ষতিকর উপাদানের স্বল্প-মাত্রা দিয়ে। এ ক্ষেত্রে সেরার তালিকার শীর্ষে আছে সিমলা।
অপরাধপ্রবণতা ও নিরাপত্তার মানদণ্ডে বিবেচিত হয়েছে সহিংস অপরাধ ও নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের হার। পাশাপাশি বিবেচিত হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা। এ ব্যাপারে সবার ওপরে আছে গুজরাটের রাজধানী গান্ধীনগর। বিদ্যুত্ ঘাটতির পরিমাণ, পয়োনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা মানদণ্ড নির্ধারণে। এ ক্ষেত্রে সেরা সিমলা। আর সব শ্রেণীর মানুষের জন্য চিকিত্সক ও হাসপাতালের সহজলভ্যতার কারণে স্বাস্থ্যসেবায় সবার চেয়ে এগিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া।
বিনোদন মানদণ্ডে বিবেচিত হয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ধর্মীয় উত্সব, বিপণিবিতান ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা। এ ক্ষেত্রে সেরা শহর নির্বাচিত হয়েছে রাজধানী দিল্লির প্রতিবেশী গুরগাঁও। অর্থনৈতিক মানদণ্ডে বিবেচিত হয়েছে জনগণের মাথাপিছু আয় এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যার হার। এ ক্ষেত্রে সেরা শহর নির্বাচিত হয়েছে হায়দরাবাদ।বিনিয়োগ মানদণ্ডে বিবেচিত হয়েছে জনসংখ্যা ও বিনিয়োগের আনুপাতিক হার। এ ক্ষেত্রে সেরা শহর নির্বাচিত হয়েছে চণ্ডীগড়।
১৭ মার্চ/নিউজরুম