স্পোর্টস ডেস্ক অজন্তা মেন্ডিসের কথা ভুলে যান। শ্রীলঙ্কার প্রথম রহস্য স্পিনারের নাম অজন্তা মেন্ডিস নয়। নামটা জেনে অবাক হতে পারেন। রঙ্গনা হেরাথ!
জানা না থাকলে তাঁকে দেখে ক্রিকেটার মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই। ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির গাট্টাগোট্টা শরীর, শ্রীলঙ্কার দোকানে-টোকানে হেরাথ-সদৃশ অনেকের দেখা মেলে। বোলিংটাও বাইরে থেকে খুব সাধারণ লাগে। সাধারণ বলতে অর্থোডক্স বাঁহাতি স্পিনার যেমন হয় আর কি! অথচ এই রঙ্গনা হেরাথই নাকি আবির্ভাবে পরিচিত ছিলেন ‘রহস্য স্পিনার’ হিসেবে। যে ক্যারম বল করে অজন্তা মেন্ডিস হইচই ফেলে দিয়েছিলেন, সেটিও নাকি তিনিই প্রথম শুরু করেন।
রঙ্গনা হেরাথকে এখন আর কেউ রহস্য স্পিনার বলে না। তবে কলম্বোর প্রেমাদাসায় ‘রহস্য’ হিসেবেই আবির্ভূত হলেন কাল। সিমিং উইকেট বলে এত কথা, দুই দলই যাতে নিশ্চিত হয়ে স্পিনার কমিয়ে পেসার বাড়াল দলে। অথচ দিন শেষে সফলতম বোলার কিনা রঙ্গনা হেরাথ!
গলে এমন হলে কেউ অবাক হতো না। মুত্তিয়া মুরালিধরনের প্রিয় মৃগয়াক্ষেত্র রঙ্গনা হেরাথেরও একই রকম পছন্দ। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টের আগে যেখানে ৪ টেস্টে তাঁর ৩৬ উইকেট, সেখানে এবার মাথা কুটে মরলেন আর নায়ক হয়ে গেলেন কিনা প্রেমাদাসায়! গলে এবারের দুঃসহ অভিজ্ঞতা এখনো যে তাঁর মনে তরতাজা, সেটি প্রকাশও করলেন। ‘(গলে) ৫০ উইকেট হতে আমার দুটি উইকেট দরকার ছিল। অনেক চেষ্টা করেও তা পেলাম না’—বলার সময় অবশ্য মুখে হাসি। মাত্রই যে ১৫তম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন।
মাহেলা জয়াবর্ধনে কিছুদিন আগে বলেছিলেন, তাঁর দেখা শ্রীলঙ্কান বোলারদের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা এই হেরাথ। সেরা কে, সেটি বোধ হয় না বললেও চলছে। মুরালির ছায়াতেই ঢাকা পড়ে ছিলেন প্রায় ১০ বছর। সেই ১৯৯৯ সালে, অথচ ১৪ বছরে এটি তাঁর মাত্র ৪৭তম টেস্ট। মুরালি খেলা ছাড়ার পরই আলোয় আসা। মুরালির বিদায়ের পর এই টেস্টের আগে ২৪ টেস্টে তাঁর ১১৭ উইকেট। প্রথম ২২ টেস্টে উইকেট ছিল মাত্র ৭১টি।
মুরালিধরনের শূন্যস্থান পূরণের কঠিন দায়িত্বও পড়েছে তাঁর ওপর। মুরালিধরনও গত পরশুই ‘আমি নেই তো কী, হেরাথ তো খুব ভালো করছে’ বলে উত্তরসূরির প্রশংসা করলেন। যা শুনে হেরাথ খুব খুশি। তবে মুরালির শূন্যস্থান পূরণের কথা উঠতেই জিভে কামড় দিয়ে ফেললেন। ‘মুরালি একজনই। আর কেউ তাঁর মতো হতে পারবে না। আমি এমন চিন্তাও করি না’—সংবাদ সম্মেলন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বললেন হেরাথ।মুরালির সঙ্গে বোলিং করার অভিজ্ঞতাকেও তাঁর সাম্প্রতিক সাফল্যে বড় অবদান বলে মানছেন, ‘মুরালির কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ওর বোলিং দেখে যেমন শিখেছি, তেমনি ও অনেক কিছু শিখিয়েছেও।’ এর মধ্যে সবচেয়ে ‘বড় শেখা’ মনে করেন কোনটিকে? হেরাথের উত্তর, ‘ধৈর্য’।
তা ধৈর্যের প্রমাণ তিনি ভালোই রেখেছেন। তাঁর সময়ও একদিন আসবে ভেবে মুরালির ছায়ায় অপেক্ষা করেছেন বছরের পর বছর। বিনয়ের প্রমাণও ভালোই রাখলেন, ‘আমরাও ভেবেছিলাম, উইকেট সিমারদের সাহায্য করবে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সিমারদের বিপক্ষে ভালো ব্যাটিং করেছে। আমার ভাগ্য ভালো, উইকেট পেয়েছি, তবে ইরাঙ্গা-কুলে-সুরঙ্গও ভালো বোলিং করেছে।’
শ্রীলঙ্কা তিন সিমার নিয়ে খেলল আর উইকেট পেলেন কিনা তিনি—এই প্রশ্নের জবাবেও বিনয়, ‘কখনো কখনো তো হাফ বোলাররাও অনেক উইকেট পেয়ে যায়। ফাস্ট বোলাররা আমাকে অনেক সহায়তা করেছে, এ কারণেই আমি উইকেট পেয়েছি।’
বোলিংয়ের কারণে কয়েক বছর ধরেই খবরে আসছেন। তবে রঙ্গনা হেরাথকে নিয়ে সবচেয়ে বড় খবরটা ছড়িয়ে পড়েছিল গত জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া সফরের সময়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়েছিল, মেলবোর্নে এক সড়ক দুর্ঘটনায় হেরাথ ও চামিন্ডা ভাস মারা গেছেন। হেরাথ ম্যাচ খেলতে নেমে পড়েছিলেন বলে গুজবটার আয়ু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তবে ম্যাচ শেষে দিমুথ করুনারত্নে মহাবিস্ময়ের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আমরাও খবরটা শুনেছি। আমাদের ফোন করে অনেকে জানতে চাইছিল, শেষকৃত্যটা কবে হবে!’
শেষ পর্যন্ত না হয় মৃত্যুর খবরটা মিথ্যাই প্রমাণিত হয়েছে। তবে যেদিন এই খবরটা ছড়িয়ে পড়ল, সেদিনই হেরাথকে মাঠে দেখে অনেকেই ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন, রঙ্গনা হেরাথের পুনর্জন্ম হলো কি না!
এক অর্থে পুনর্জন্মের অভিজ্ঞতা তো হয়েছেই হেরাথের। মুরালিধরনের বিদায়ের পর বোলার রঙ্গনা হেরাথের পুনর্জন্ম!
(১৭ মার্চ): নিউজরুম