বিএনপি নেত্রীর বক্তব্য ও একটি প্রেসনোট পুলিশি বাড়াবাড়ির বৈধতা দেয়া সমাধান নয়

0
343
Print Friendly, PDF & Email

১৬ মার্চ, ২০১৩।।

১১ মার্চ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আঠারোদলীয় জোটের সভা পণ্ড করে দিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালায় বিএনপির নয়া পল্টন অফিসে। এ সময় কয়েকটি কক্ষের দরজা ভেঙে পুলিশ জোর করে ভেতরে প্রবেশ করে। দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, পুলিশ আইনের সাধারণ নিয়ম ভেঙে অফিসে ঢোকে। তা ছাড়া দরজা ভেঙে কক্ষে ঢোকার ব্যাপারেও দলটির অভিযোগ সুনির্দিষ্ট। ল্যাপটপ ভাঙচুর, কম্পিউটার আছড়ে ফেলা, কাগজপত্র তছনছ করে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে যাওয়া এবং দলীয় কাউন্সিলের জন্য অফিসে রাখা টাকা লুটের মতো অভিযোগগুলোও সুনির্দিষ্ট। নেতাদের গ্রেফতার ও অফিসে আশ্রয় নেয়া দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের বাড়াবাড়ি আচরণ, পুলিশভ্যানে তুলতে ও ভ্যানের ভেতরে লাঞ্ছিত করার বিষয়টিও অভিযোগের তালিকায় রয়েছে। এক দিন পর দলীয় চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা পুলিশি তাণ্ডবের নমুনা দেখতে দলীয় অফিসে যান। তিনি তাণ্ডবের নমুনা দেখে হতবাক হয়ে যান। পুলিশি অ্যাকশনে সভা পণ্ড। অফিসে পুলিশের হামলা, তল্লাশি, নেতাদের গ্রেফতারের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেত্রী অফিস পরিদর্শনের পর তাৎক্ষণিক সমবেত হাজার হাজার নেতাকর্মী ও উপস্থিত বিপুলসংখ্যক জনতার উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। তার ভাষণের মূল বিষয় ছিল, গণহত্যার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করেন, নাস্তিকদের পাহারা দেয়ার জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করেন। তিনি সংখ্যালঘুদের পাশে আছেন এবং পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। তা ছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা অভিযোগ করেন, সরকার জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে শাহবাগী মঞ্চ তৈরি এবং গণহত্যা ও নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে।

বিরোধীদলীয় নেতা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার  দাবি জানান, পুলিশকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে মানুষ হত্যা বন্ধের আহ্বান জানান। গণহত্যার বিচারে ট্রাইব্যুনাল করার কথা বলে বিরোধীদলীয় নেতা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচারের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তা ছাড়া বিএনপি ও আঠারদলীয় জোটের নেত্রী নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, অন্যথায় ১৮ ও ১৯ মার্চ হরতাল এবং পরে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

এসব বক্তব্যকে আড়ালে রেখে বিএনপি নেত্রীর বক্তব্যের জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রেসনোট ইস্যু করা হয়। প্রেসনোটটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বিরোধীদলীয় নেতার কোনো বক্তব্যই খণ্ডন করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ কেন বাড়াবাড়ি করেছে সেটাই সাফাই সাক্ষীর মতো কিছু বে-আইনি কাজকে আইনি বলে পুলিশের অপকর্মকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। বিএনপি ও আঠারোদলীয় জোটের তৎপরতাকে সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক কর্ম বলে মন্তব্য করা হয়েছে। প্রেসনোটে বোমা বা ককটেল দিয়ে নাটকের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই। তা ছাড়া কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সরাসরি সম্প্রচারকে বরাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

আমরা অভিযোগ খণ্ডন না করে গতানুগতিক পুলিশি ভাষ্যকে বৈধতা দেয়ার জন্য এ ধরনের প্রেসনোট ইস্যুকে দায়িত্বহীনতা মনে করি। সরাসরি সম্প্রচারে ও মিডিয়ায় যা সত্য হিসেবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, তা-ও প্রেসনোটে অস্বীকার করা হয়েছে। এ ধরনের প্রেসনোট সরকারের অবস্থানকে আরো দুর্বল করেছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নয়াপল্টনে পুলিশি তাণ্ডব পর্যন্ত সরকারি নির্দেশে অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। প্রায় দেড় শ’ মানুষ মারা গেছেন। কয়েকটি জেলা রাজধানী থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছে। নারকীয় তাণ্ডবের আড়ালে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর জ্বালানো হয়েছে। ব্যাংক-বুথসহ বিভিন্ন স্থাপনা আক্রান্ত হয়েছে অথচ সরকার এ ব্যাপারে একটি প্রেসনোট দেয়ার দায় বোধ করেনি। বিলম্বে পুলিশি বাড়াবাড়িকে বৈধতা দিতে যে প্রেসনোট ইস্যু করা হলো, তাও গ্রহণযোগ্য হলো না। এটাকে কি সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার সঙ্কট সৃষ্টির নজির বলা হবে না? আশা করি সরকারের অবস্থান সম্পর্কে বিুব্ধ জনগণের না বলা অভিব্যক্তি জনবিচ্ছিন্ন সরকারের বোধোদয় ঘটাবে এবং ভবিষ্যতে সরকারি প্রেসনোটে বাস্তবতাকে স্বীকার করার মনোভাব সরকারপক্ষের মধ্যে কাজ করবে।

শেয়ার করুন