এবার কুরআনের অর্থ বিকৃতি পর্যালোচনা করা হোক ধর্মীয় পাঠ্যবই

0
335
Print Friendly, PDF & Email

১৬ মার্চ, ২০১৩।।

পবিত্র কুরআনের অর্থ বিকৃত করার মতো চরম ধৃষ্টতার আরেকটি ঘটনা ধরা পড়েছে নবম-দশম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইটিতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০১৩ সালের জন্য প্রণীত নবম-দশম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিা বইয়ে ১০৭ পৃষ্ঠায় একটি পাঠ্য বিষয় হলোÑ ‘জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদ’।

এখানে সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতের অর্থ লেখা হয়েছেÑ ‘তোমরা (ইসলাম ও মানবতাবিরোধী শত্র“র বিরুদ্ধে) লড়াই করবে। যতক্ষণ না ফিতনা-ফ্যাসাদ ও অশান্তি চিরতরে নির্মূল হয়ে যায় এবং দ্বীন সামগ্রিকভাবে আল্লাহর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।’ সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতটি হলো ‘ওয়া কাতিলুহুম হাত্তা লা তাকুনা ফিতনাতুন ওয়া ইয়াকুনাদ্দিনু কুল্লুহু লিল্লাহ।’ বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছেন নবম-দশম শ্রেণীর এ বইটিতে এ আয়াতের অর্থ বিকৃত করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের হেফাজত করবেন আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং। ১৪ শত বছর ধরে আল্লাহর দেয়া প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাংলাদেশের কিছু দলবাজ লোক পবিত্র ধর্মগ্রন্থ নিয়ে অপরিণামদর্শী ক্রিয়াকাণ্ড করছে।

নয়া দিগন্তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কয়েকজন আলেমের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। মাসিক মদীনা সম্পাদক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত বহুল পঠিত মা’রেফুল কুরআনের অনুবাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, আয়াতে অর্থের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে স্পষ্টভাবে। নরসিংদীর জামেয়া কাসেমিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মাওলানা কামালউদ্দিন জাফরী সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতের সঠিক অর্থ তুলে ধরেন, ‘তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ তিনি বলেন, আমি যে অর্থের কথা বললাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদও ঠিক এ ধরনের, তবে তা সাধু ভাষায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান অনূদিত সরল রীতির কোরআন শরিফ বইয়ে আয়াতটির অর্থ করা হয়েছেÑ ‘আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক, যাতে ফেতনা (শিরক, কুফর ইত্যাদি অধর্ম) না থাকে আর দ্বীন (এবাদত) সামগ্রিকভাবে আল্লাহর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।’ প্রফেসর ফজলুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট আয়াতে আল্লাহ যাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে বলেছেন, তারা হচ্ছে কাফির ও মুশরিক। সুতরাং যারা এ ধরনের অনুবাদ করেছেন তারা অপরাধী।

বইটির রচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল মালেক ও ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদ এবং আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউছুফ। বইটির সম্পাদনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান। ধর্মীয় বিষয়ে পাণ্ডিত্যের জন্য এনসিটিবি এই শিক্ষকদের বাছাই করেছেন এমন ভাবার কোনো অবকাশ নেই। এরা সবাই কট্টর আওয়ামী লীগদলীয় শিক্ষক। কুরআন ও ইসলাম ধর্ম বিষয়ে তাদের গভীর জ্ঞান রয়েছে এমন সুনাম তাদের নেই। সরকার ধর্মীয় বিষয়কে একেবারেই অবহেলা করেছে। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সঠিক জ্ঞানদানের পরিবর্তে সেখানে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটাতে চেয়েছে। পবিত্র কুরআন ও ইসলাম ধর্ম বিষয়ে স্বচ্ছ জ্ঞানের অধিকারী বিশেষজ্ঞের পরিবর্তে দলবাজদের বই লেখা ও সম্পাদনার দায়িত্ব দিয়েছে। জোর করে এরা কুরআনের অর্থের সঙ্কোচন ও সম্প্রসারণের ন্যক্কারজনক চেষ্টা চালান। একই বইয়ে ‘জিহাদের’ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিকোণ পরিহার করে দলীয় মনোবৃত্তি প্রকাশ করার চেষ্টা চালানো হয়।

ধর্মীয় শিক্ষাকে বিতাড়িত করতে চান বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই এ অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরগুলো থেকে তিনি বিভিন্নভাবে ইসলাম শিক্ষাকে বাদ দিয়েছেন বা সঙ্কুচিত করেছেন। এবার দেখা যাচ্ছে তার নেতৃত্বে প্রণীত বইয়ে বিভিন্ন ইসলামি বিষয়ে এমন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়েছেন, যা মুসলমানদের আকিদাবিরোধী। নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশে ধর্ম নিয়ে এ ধরনের হঠকারিতা ও অবহেলা মানা যায় না। আমরা আগেও মত দিয়েছি, ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তকগুলো পর্যালোচনা করা হোক। আলেম-ওলামা ও পণ্ডিতদের দিয়ে ভুল সংশোধনের আগে সন্দেহযুক্ত বইগুলোর পাঠ বন্ধ রাখা হোক। আর যারা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণীত হয়ে কুরআনের আয়াতের অর্থবিকৃত ঘটিয়েছেন, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

শেয়ার করুন