ঢাকা: মহাজোটে থাকা না থাকার আলোচনায় বসেছে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম। শনিবার বেলা ১১টার পর বনানীস্থ পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়েছে।
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে মহাজোটে থাকা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই মূলত এ বৈঠক বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব সুনীল শুভরায়।
জাপার নীতি নির্ধারনী ফোরামের এ বৈঠকটি বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য। মহাজোট ছাড়ার পক্ষে অবস্থানকারি ও বিএনপিপন্থি বলে পরিচিত প্রেসিডিয়াম সদস্যরা দাবি তুলবে দ্রুত মহাজোট থেকে বের হয়ে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার।
এই দলে রয়েছেন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদ, কাজী জাফর আহমদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, গোলাম হাবিব দুলাল। প্রকাশ্যে না থাকলেও এই পক্ষের নেপথ্যে থেকে কাজ করছেন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
মহাজোট সরকারে থাকা দলের একমাত্র মন্ত্রী জিএম কাদের এর পদত্যাগের বিষয়টি সামনে আনবে এই গ্রুপটি।
এই গ্রুপটি অনেকদিন ধরেই মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। গত বছরের জুলাই মাসে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণার জন্য একটি তারিখ চূড়ান্ত হয়। তখন বিএনপি নেতাদের নামে সরকারের মামলা দায়ের ও সিনিয়র নেতাদের পরিণতি দেখে কিছুটা পিছিয়ে আসে তারা।
এরপর চলতি বছরে ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু বিএনপি মহাসচিবের নামে মামলা দায়ের, অতপর তাকে জামিন না দিয়ে জেলে আটকের ঘটনায় আবারও পিছিয়ে যান এরশাদ। মহাজোট ছাড়লে তার স্থানও জেলে হতে পারে এই ভয়েই তিনি তখন পিছিয়ে যান বলে অভিযোগ আছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের মুখপাত্র প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলানিউজকে জানান, কেন্দ্রীয় এমনকি মাঠ পর্যায়ের নেতারাও অনেক আগে থেকেই মহাজোট ছাড়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। বলতে গেলে মহাজোট নেইও। অনেকদিন ধরেই সরকার ১৪ দলের বৈঠক করছে।
জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খুব বড় কোন ঘটনা না ঘটলে জাপা মহাজোটে থাকছে না এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়।
আর মহাজোট ছাড়লে বিকল্প রয়েছে একক নির্বাচন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে যোগদান ও আলাদা জোট গঠন। প্রথম দিকে একক নির্বাচনের বিষয়ে ভাবা হলেও টাঙ্গাইল উপনির্বাচনে শোচনীয় হারের পরে সে ইচ্ছা ফিকে হয়ে এসেছে।
অন্য একটি সূত্র দাবি করেছে, বিএনপি অনেক আগে থেকেই মাহাজোট ছেড়ে বিএনপির জোটে যোগদানের জন্য যোগাযোগ করে। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার টেলি কনফারেন্সও হয়েছে বলে দাবি করেছে সূত্রটি। সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের বক্তব্যেও কিছুটা আঁচ করা যায়। তারা আগে বক্তব্যে এরশাদকে স্বৈরাচার বলে মুখে ফেনা তুললেও অনেকদিন ধরেই নীবর ভূমিকা পালন করছে।
এরশাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। এর আগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা হরতালে নৈতিক সমর্থন দেন। তিনি বলেন, বিএনপির এই হরতাল যৌক্তিক। এ ছাড়া শাহবাগ ইস্যুতে একসুরে গাইছে দল দু’টি।
সর্বশেষ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি চাচ্ছে আওয়ামী লীগকে মিত্রশূন্য করতে। এ জন্য বিএনপি চায় এখনই জাপা মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিক। যাতে করে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও প্রশাসনের মধ্যে সরকার সম্পর্কে একটা হতাশা সৃষ্টি হয়।
বিএনপি চাচ্ছে এ প্রক্রিয়ায় সরকারের চেইন অব কমান্ড ভেঙে দিতে। যাতে সরকার বাধ্য হয় বিএনপির সঙ্গে সংলাপ ও তাদের দাবি দাওয়া মেনে নিতে।
জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছে, তারা মাহাজোটে থাকছে না এ কথা ঠিক। তবে এখনই মহাজোট ছাড়লে মামলা হামলার মোকাবেলা করার মতো পার্টির অবস্থান নেই। শেষ বয়সে এরশাদও জেলে যেতে চান না।
তাই তারা এমন সময় মহাজোট ছাড়তে চান যখন আর আওয়ামী লীগ সরকারের কিছুই করার থাকবে না। অথবা সরকার বিরোধী আন্দোলন যদি তুঙ্গে উঠে তখন এই ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
মার্চ ১৫, ২০১৩