বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে এখন থেকে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে বা সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে সঙ্ঘাত ও সহিংসতামূলক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ধরনের পরিস্থিতি, নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধন চূড়ান্ত করেছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই সংশোধনীতে নির্বাচনকালীন সেনা মোতায়েনের কোনো বিধান রাখা হয়নি।
নির্বাচন কমিশন এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনেকটা এককভাবে। কারণ নির্বাচন কমিশন এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোনো ধরনের আলোচনা করেনি। স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক দল নিয়ে তাদের কাজ। সব রাজনৈতিক দল যদি সেনা মোতায়েন ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে করে তাহলে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন না-ও হতে পারে। কিন্তু আমরা যত দূর জানি, প্রধান বিরোধী দলসহ অপর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপেই বসেনি। সেখানে আলোচনা ছাড়া নির্বাচন কমিশন এতবড় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, নাকি ক্ষমতাসীন দলের ইঙ্গিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে সে প্রশ্নও উঠবে।
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে অতীতে সব নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কারণ সারা দেশে একযোগে জাতীয় নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্য নেই। এ ছাড়া নির্বাচন কেন্দ্রে ভয়ভীতিহীন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সেনাবাহিনীর উপস্থিতি অত্যন্ত প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত দেখে মনে হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল সংবিধান সংশোধন করে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রেখেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্ভবত সে ধরনের একটি নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনে এ ধরনের নির্বাচনে সেনাবাহিনী কেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও কোনো প্রয়োজন হবে না। কারণ ক্ষমতাসীন দল যে ফল চাইবে নির্বাচনে সে ধরনের ফল পাওয়া যাবে। আর এমন নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশ নেবে, এমন আশা করা বৃথা।
আমরা মনে করি, সেনা মোতায়েনের বিধান না রেখে নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের উদ্যোগ এই কমিশনকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করবে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অনাস্থা বাড়াবে। সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা না করে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে নির্বাচন কমিশনের সরে আসা উচিত।