ঢাকা: গণজাগরণ আন্দোলনের অন্যতম ব্লগার রাজিব হত্যার ঘটনায় আটক উগ্রপন্থী দলের ৫ তরুণ সম্প্রতি মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে জাতিগত দাঙ্গায় মুসলমানদের সহায়তার জন্য জিহাদে অংশ নিতে সীমান্ত পর্যন্ত গিয়েছিল।
তবে কক্সবাজারের সীমান্তে যাওয়ার পর তাদের আধ্যাত্মিক গুরুর নিষেধের কারণে শেষ পর্যন্ত তারা সেখানে যায়নি।
তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের নেতাদের যোগাযোগ ছিল। এদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক, শিবিরের সাবেক নেতা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ কাজ করেছে।
এদিকে, তাদের হত্যার পরিকল্পনায় যে শুধু ব্লগাররা ছিল তা নয়, দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবিদের হত্যার পরিকল্পনাও ছিল তাদের।
আটক নর্থ সাউথের ৫ ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এই গ্রুপের সদস্যরা মনে করেন, মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে ‘জিহাদ’ করা তাদের ‘ইমানি’ দায়িত্ব। মিয়ানমারে যেতে না পারলেও তারা যে কোনো সময় আফগানিস্তান, ইরাক ও ইয়েমেনে যেতে পারতো। সীমান্ত এলাকায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত অধ্যাত্মিক নেতার নিষেধের কারণে তারা ফিরে এসেছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরো জানান, ইতোমধ্যে এই গ্রুপের সদস্যদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নাম জানতে পেরেছেন তারা। পাশাপাশি কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিবিরের নেতার নামও রয়েছে। এছাড়া তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারও রয়েছে। বর্তমানে এরা গোয়েন্দা নজরদারীতে রয়েছেন বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে, উগ্রপন্থী এই গ্রুপের টার্গেট যে শুধু ব্লগার ছিল তা নয়, বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল তাদের। ইসলামের শত্রু হিসেবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল তাদের। গ্রেফতারের পর তাদের কম্পিউটার ই-মেইল, ফেসবুক এবং জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য জানিয়েছেন গ্রেফতারকৃতরা।
এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে দাবি করে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এরা বিদেশ থেকে অর্থ পেয়ে থাকে।
ব্লগার রাজিব হত্যায় গ্রেফতার ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ, মাকসুদুল হাসান ওরফে অনিক, এহসান রেজা ওরফে রুম্মন, নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ ও নাফিস ইমতিয়াজকে গ্রেফতার করে ডিবি। এ হত্যার দায় স্বীকার করে গত রোববার এ পাঁচজন আদালতে জবানবন্দীও দিয়েছেন। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের পলাশনগরে নিজ বাসার সামনে গণজাগরণ আন্দোলনের অন্যতম ব্লগার ও তরুণ স্থপতি আহমেদ রাজিব হায়দার শোভনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১ মার্চ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মার্চ ১৫, ২০১৩