১৫ মার্চ, ২০১৩, গত বছর নবম শ্রেণীতে যেসব ছাত্রছাত্রী পুরোনো সিলেবাসে ১১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়েছে, এবার তাদের অনুসরণ করতে হবে নতুন সিলেবাস। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টিরই বা কী হবে? কেননা, এ বছর ১২টি বিষয়ে ১২০০ নম্বরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নতুন একটি বিষয়ে কীভাবে কোড নম্বর দেওয়া হবে। পুরোনোদের ১১টি বিষয়ে কোড নম্বর দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত একটি বিষয়ের জন্য কী পুরোনো শিক্ষার্থীদের নতুন রেজিস্ট্রেশন করানো হবে, নাকি পুরোনো রেজিস্ট্রেশনে চলবে।
গ্রাম পর্যায়ের স্কুলগুলোতে এ সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের শিক্ষকেরা শহরের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি বোর্ডের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করেন না এবং এই বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য বা সমাধান দিতে পারেন না। শিক্ষকদের নানামুখী অজ্ঞতার কারণে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা সিলেবাস এবং রেজিস্ট্রেশন সমস্যায় ভুগছে। এ বিষয়ে সঠিক সমাধানের জন্য একজন অভিভাবক হিসেবে ঢাকাসহ সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদের কাছে জরুরি সমাধান কামনা করছি। সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শেফালী আক্তার
অভিভাবক, নবাবগঞ্জ।
চলনবিলের মেলা
দেশের বৃহত্তম চলনবিল অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী যে কয়েকটি মেলা অনুষ্ঠিত হয় সেগুলোর মধ্যে প্রধান দুটি হলো তাড়াশ উপজেলার বারুহাস মেলা এবং সিংড়া উপজেলার তিশিখালী মেলা। প্রতিবছর চৈত্র-চন্দ্রিমার ১৩ তারিখে জমিদারখ্যাত বারুহাস গ্রামে দুই দিনব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলার বয়স প্রায় দেড় শ বছর। আগে বারুহাস গ্রামের পশ্চিমে ভদ্রাবতী নদীর তীরে এই মেলা বসত বলে সে সময় সবার কাছে এই মেলা ভাদাই মেলা নামে পরিচিত ছিল। কালের বিবর্তনে ভাদাই থেকে এখন বারুহাস গ্রামের নামানুসারেই পরিচিত। সিংড়া উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে পীর ঘাসী দেওয়ান মাজার ঘিরে তিশিখালী মেলা অনুষ্ঠিত হয়।চৈত্র-চন্দ্রিমার ৬ তারিখে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই তিশিখালী মেলার বয়স সাড়ে তিন শ বছরেরও বেশি। এই মেলার সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য হলো, মেলার আগের রাতে মাজার ঘিরে শুরু হয় জমজমাট গানের আসর। দূরদূরান্তের আগত ভক্ত-আশেকানরা দল বেঁধে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে গানের আসর বসান। দেহতত্ত্ব গানে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলার প্রাঙ্গণ। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের কোনো ভেদাভেদ নেই। গানে গানে সবাই যেন এক কাতারে শামিল।
মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে মেলা দুটি ঘিরে উত্তর চলনবিল অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামজুড়ে শুরু হয় সাজ সাজ রব।মেলার অন্তত এক মাস আগে থেকেই চলে প্রস্তুতি। মুড়ি ভাজা, খই ভাজা, আটার তৈরি ঝুরি তৈরি করা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার, আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত, জামাই-ঝি নিয়ে আসা সব মিলে মেলাবাসীদের ব্যস্ততা আর আনন্দের সীমা থাকে না। মেলার এই উৎসব ঘিরে বিশেষ করে জামাইদের খুবই মূল্যায়ন করা হয়। মেলা উপলক্ষে জামাইকে দেওয়া হয় পরবি নামক অর্থ সম্মানী। শ্বশুরবাড়ির এই পরবি পেয়ে জামাইরা মেলা থেকে রঙিন হাঁড়িতে মিষ্টি, দই, বড় মাছ ও মাংস কিনে থাকেন। সে সময় অনেকেই এই দুটি মেলাকে জামাই মেলাও বলতেন।
দুঃখের বিষয়, চলনবিলের ঐতিহ্য এই দুটি মেলার সেই জৌলুশ আর নেই। আগের দিনের মতো জাঁকজমকভাবে আর উৎসব জমে ওঠে না।
চলনবিলের গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতি যেন আজ হারানোর পথে। মূলত প্রতিটি জাতিরই কিছু নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে। যা সে জাতির অহংকার। বাঙালি হিসেবে তাই আমাদের এই গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতি মেলা উৎসবগুলোকে আগের মতো ফিরিয়ে আনা দরকার।
সৌরভ সোহরাব
আয়েশ, সিংড়া, নাটোর।