বিমানের জিএসএ নিয়োগে কত মধু!

0
159
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সব মধু যেন এখন জিএসএতে (জেনারেল সেলস এজেন্ট)। সাম্প্রতিক সময়ে এই জিএসএ নিয়োগের বিষয়টি বিমানে এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, বিমানের কর্মকর্তারাই শুধু নন, সংস্থার শীর্ষ কর্তা, পরিচালনা পর্ষদ সদস্য এমনকি এমপিরাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন।

বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা-সমালোচনার পর ৭ মার্চ জেদ্দা ও লন্ডনের (কার্গো) জিএসএ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় বিমানের মার্কেটিং বিভাগের সাব-কমিটি। পরিচালনা পর্ষদের তিন সদস্যকে নিয়ে একটি নিয়োগ কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা জিএসএ নিয়োগে এতোটাই তৎপর যে, এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

অভিযোগ উঠেছে, জিএসএ নিয়োগ দিতে আর্থিক লেনদেন শুরু হয়েছে বিমানের শীর্ষ পর্যায়ে। আর এ অভিযোগ উঠেছে সাব-কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধেও। তবে অভিযেগটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য। তিনি বলেন, ‘‘আর্থিক লেনদেনের প্রশ্নই ওঠে না। যাতে এ ধরনের অনিয়ম না হয়, সেজন্যই আমরা কাজ করছি।’’  

এ বিষয়ে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দেশে বিমানের জিএসএস নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আসছে। জিএসএ নিয়োগে প্রচুর অর্থের লেনদেন হচ্ছে। যে কারণে বিমানের কর্মকর্তাদের বাইরেও এ বিষয়ে বিমান চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা জিএসএস নিয়োগে খবরদারি করতে চাইছেন। আবার বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বিমানের বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ না থাকলেও মাঝে মাঝে কমিটির সদস্য এমপিরাও এ নিয়ে চিৎকার-চেচামেচি করছেন।

জানা গেছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলেই মূলত জিএসএ নিয়োগে রাজনীতিকরণ শুরু হয়। আর এ নিয়ে দুর্নীতি শুরু হয় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। বেশ কিছুদিন ধরেই অর্থের বিনিময়ে জিএসএ নিয়োগ দিতে কাজ করছে বিমানের ভেতরের একটি প্রভাবশালী চক্র।   

সূত্র জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন বিমান প্রতিমন্ত্রী মীর নাসির জেদ্দায় বিমানের জিএসএকে সরিয়ে দেন। এভাবে কলকাতা ও কুয়ালালামপুরেও রাজনৈতিকভাবে জিএসএ নিয়োগ দেওয়া হয় মীর নাসিরের সময়ে।  

২০১১ সালে এসে বিমানের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সাব-কমিটি ‘এলাফ’ নামে যে জিএসএস কাজ করছে তাকে বাদ দিতে উঠে-পড়ে লাগে। মাস্কাট ও রিয়াদেও একইভাবে জিএসএ পরিবর্তন করা হয়।

সম্প্রতি জেদ্দায় জিএসএ হতে ৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর মধ্যে দ্বিতীয় আবেদনকারী ‘মোসাইদ’কে নিয়োগ দিতে তৎপর হয়ে পড়ে বিমানের একটি চক্র।

বিমানের লন্ডন জিএসএ (কার্গো) পরিবর্তন করতেও তৎপরতা শুরু করে ওই চক্রটি। লন্ডন জিএসএ আনা এভিয়েশন ২০০৭ সাল থেকে কাজ করছে। ব্রিটিশ ভিত্তিক এই জিএসএ’র আগে এখানে কোনো জিএসএ ছিল না। ওই জিএসএ নিয়োগের পরই সেখান থেকে রাজস্ব আসতে শুরু করে।

কিন্তু এরপরও আনাকে সরিয়ে লন্ডনে জেএমজি নামে একটি কোম্পানিকে কাজ দিতে উঠে-পড়ে লাগে চক্রটি। এ নিয়ে অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ ওঠে। এ অবস্থায় পারফরম্যান্স অনুযায়ী বিমানের কমিটি আনাকে কাজ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। একইভাবে গত এক বছরে জেদ্দার বর্তমান জিএসএ ১২ শতাংশের বেশি রাজস্ব আয় করে। এরপরেও এই জিএসএকে বাদ দেওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লাগে বিমানের একই চক্রটি।

এ অবস্থায় বিমানের জিএসএ নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জিএম আবদুল্লাহ আল হাসানকে। নতুন আহবায়ক করা হয়েছে পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মোহাম্মদ শাহনেওয়াজকে।

মার্চ ১৪, ২০১৩ 

শেয়ার করুন