১৪ মার্চ, ২০১৩
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পাঁচবার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন নায়করাজখ্যাত রাজ্জাক। ৫০ বছরের চলচ্চিত্রজীবনে এবার তাঁকে দেওয়া হলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার নেওয়ার আগে কথা হলো রাজ্জাকের সঙ্গে। গত রোববার সকালে রাজ্জাকের গুলশানের বাসায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতিসহ চলচ্চিত্রশিল্পের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি
আমি গর্বিত। অনেক বেশি আনন্দিত। আমার মনে হচ্ছে, ঠিক সময়েই আমাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। আমার পুরো জীবনটাই চলচ্চিত্রে সঁপে দিয়েছি। ২২ বছর বয়সে অভিনয় শুরু করেছি। এখন আমার বয়স ৭২ বছর। এই সময়ে এসে সরকার আমাকে যে সম্মানটা দিল, তার জন্য সরকারের কাছেও কৃতজ্ঞ। দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ, তারা আমাকে ৫০ বছর ধরে দেখছে। আমার প্রতি তারা ভালোবাসা রেখেছে, স্নেহ রেখেছে আর পাশাপাশি শ্রদ্ধাও দেখিয়েছে। তাই আমি সব সময় তাদের মাঝে নিজেকে সমানভাবে ধরে রাখতে পেরেছি।
চলচ্চিত্রে প্রাপ্তি
চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে আমার প্রাপ্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার মনে হয়, একজন অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রশিল্পে আমি যা পেয়েছি, তা খুব কম অভিনয়শিল্পীর কপালেই জোটে। প্রায় ৫০ বছর ধরে চলচ্চিত্রে যেসব চরিত্রে অভিনয় করেছি, তার সবই দর্শকেরা সানন্দে গ্রহণ করে যাচ্ছে, এটা ভীষণ সৌভাগ্যের। এ জন্য আমাকে ত্যাগও স্বীকার করতে হয়েছে। স্বাধীনতার আগে উর্দু ছবি করার অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু কখনোই রাজি হইনি। আমি বাঙালি। একজন বাঙালি অভিনেতা হিসেবে এপার-ওপার দুই বাংলা আমাকে অনেক বেশি সম্মান দিয়েছে। আমার ব্যক্তিগত জীবন অনেক ওঠানামা করেছে। কিন্তু আমি যখন বেহুলা ও আগুন নিয়ে খেলা ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে একটা জায়গা করে নিতে শুরু করলাম, তার পর থেকে আমাকে আর কখনো পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরুর দিকে নায়ক হিসেবে অভিনয় করতাম, এখন করছি চরিত্রাভিনেতা হিসেবে। কিন্তু এখনো সবাই আমাকে আগের মতোই সম্মান দেখায়।এটা আমি কখনো ভুলতে পারব না।
চলচ্চিত্রে অপ্রাপ্তি
প্রত্যেক শিল্পীর জীবনে অপ্রাপ্তি থাকে। একজন অভিনয়শিল্পী কখনোই পুরোপুরি তৃপ্ত হতে পারেন না। এক জীবনে অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। মাঝেমধ্যে মনে হয়, হয়তো আরও ভালো কিছু চরিত্র করতে পারতাম। এমন কোনো চরিত্রে তো অভিনয় করা হয়নি, যা বিশ্বে বেশ আলোচিত হয়েছে। কেন আমাকে নিয়ে এ দেশের পরিচালকেরা আরও নতুন কিছু করলেন না, এ নিয়ে আক্ষেপ হয়।
বর্তমান চলচ্চিত্র
এখন কিন্তু বাংলাদেশ ডিজিটাল ছবির দিকে এগোচ্ছে, এটা ইতিবাচক। কিন্তু ছবি বানালে তো হবে না, আমাদের প্রেক্ষাগৃহের দিকেও নজর দিতে হবে।ডিজিটাল-পদ্ধতিতে ছবি নির্মাণে আর্থিক ঝুঁকির আশঙ্কা অনেক কম। চলচ্চিত্র প্রযোজকেরা যদি আর্থিক ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে পারেন, তাহলে ছবি নির্মাণের সংখ্যা বাড়বে। চলচ্চিত্রশিল্পও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মানের কথাও বিবেচনা করতে হবে। ডিজিটাল-পদ্ধতির একটি সিনেমা পরিচালনা করেছি। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায়। ছবিটির নাম আয়না কাহিনী। ছবিটি এরই মধ্যে বিনা কর্তনে সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। এখন সুবিধাজনক একটা সময় দেখে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবছি।
ভারতীয় ছবি
ভারতের বেশ কয়েকটি বাংলা ছবি আমাদের প্রেক্ষাগৃহে কিন্তু প্রদর্শিত হয়েছে। সব কটা ব্যবসায়িকভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সামনে বাংলাদেশে ভারতীয় ছবি কোনোভাবে প্রদর্শিত হবে না। যেকোনো মূল্যে এটা প্রতিরোধ করা হবে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে একনজরে সেরা অভিনেতা রাজ্জাক
কি যে করি (১৯৭৬)
অশিক্ষিত (১৯৭৮)
বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২)
চন্দ্রনাথ (১৯৮৪)
যোগাযোগ (১৯৮৮)