১৪ মার্চ, ২০১৩
বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ বা তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। সে জন্য সমগ্র বিশ্বে এখন কর্মমুখী শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপে গড়ে তুলতে চান। কিন্তু দেশের প্রশাসনিক বিভাগের বা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অধিষ্ঠিত কিছু কর্মকর্তার অসচেতনতা প্রধানমন্ত্রীর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আজ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে ২০০৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালায়ের এক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড দক্ষ মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট তৈরির জন্য ‘স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ও সেবা’ শিক্ষাক্রম নামে ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি-বিষয়ক সাতটি বিভাগ যথা: ডিপ্লোমা ইন ল্যাবরেটরি, মেডিসিন, ডেন্টাল টেকনোলজি, ফার্মেসি, পেশেন্ট কেয়ার রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং, ফিজিও থেরাপি ও ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিন টেকনোলজিতে ছয় মাস, এক বছর ও তিন বছর মেয়াদি কোর্স চালু করে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওসব কোর্সকে তাদের মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে আপত্তি জানায়। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ২০০৯ সালের ৮ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে একটি ডিও পত্র দেন (যার নম্বর শিমসা: ১৬-বিবিধ ১৬-৬/৯৯ অংশে ১৪ খণ্ড, ২১৩)। মন্ত্রী ওই পত্রে উল্লেখ করেন, মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স একটি কারিগরি ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা হওয়ায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ১৯৬৭ সালের ১ নম্বর সংসদীয় আইন এবং ১৮(ক) ও ২ (ডি) (হ)-এর ধারার ক্ষমতাবলে ওই কোর্স পরিচালনা করতে পারে এবং বর্তমান অবস্থায় (আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃত) যেকোনো টেকনোলজি শিক্ষা শুধু বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডই দিতে পারে।
অন্যদিকে, ১৯৮৫ সালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের সরকারি গেজেটে শুধু সরকার অনুমোদিত মেডিকেল টেকনোলজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজিস্ট যোগ্যতার কথা উল্লেখ আছে। গত ১৬ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দৈনিক পত্রিকাগুলোয় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে শর্ত দেওয়া হয়, প্রার্থীকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ কর্তৃক অনুমোদিত মেডিকেল টেকনোলজি কলেজ থেকে পাসকৃত হতে হবে, যা ১৯৮৫ সালের নিয়োগ গেজেটের পরিপন্থী।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এর আগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের ওপর আঘাতস্বরূপ। এতে চিকিৎসাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে আগ্রহী দেশের ৭০ হাজার শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
সনাতনী চিকিৎসাব্যবস্থায় একজন চিকিৎসক তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও অনুমানের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করতেন। এমনকি ২০ থেকে ৩০ বছর আগেও দেখা গেছে, এমবিবিএস পাস করা একজন চিকিৎসক নিজেই প্যাথলজি, এক্স-রে ইত্যাদি পরীক্ষা করতেন। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হওয়ায় একজন রোগীর দ্রুত রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। সেই বিবেচনায় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই। তাঁদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়াই হবে একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রকৃত কাজ। বিষয়টি সদয় বিবেচনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ফরহাদুল হাসান
ডিপ্লোমা ইন প্যাথলজি, কুষ্টিয়া মেডিকেল ইনস্টিটিউট।