১৩ মার্চ, ২০১৩, রক্ষণশীলতার চৌকাঠ পেরিয়ে নারী আরও এগিয়ে যাচ্ছে তাঁদের সৃজনক্ষমতা দিয়ে।শিল্পসৃষ্টির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ভেদ নেই। সৃষ্টির মোহে আবিষ্ট থেকেসৃষ্টিকর্মকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই জরুরি। এ প্রদর্শনীটি ১২ জননারীশিল্পীর ২৪টি এচিং ও অ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যমে করা কাজ নিয়ে। প্রদর্শনীরশিরোনাম ‘আমাদের কথা’। আয়োজন করেছে নয়জন নারীশিল্পীর উদ্যোগে গড়ে ওঠা সংগঠন‘সাঁকো’। ২০০৩ সালে সাঁকোর যাত্রা শুরু। শিল্পসৃষ্টির মধ্যেই সাঁকোরকার্যক্রম থেমে নেই। সমাজে পিছিয়ে পড়া নারীদের মধ্যে, একাডেমিক শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষাসহ অন্যান্য সামাজিক কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। এপ্রদর্শনীর কাজগুলো ২০১২ সালে ঢাকা আর্ট সেন্টার ও সাঁকোর যৌথ আয়োজনেরকর্মশালায় করা। কিবরিয়া প্রিন্টমেকিং স্টুডিওতে করা কাজগুলোর মাধ্যম হলোএচিং ও অ্যাকুয়াটিন্ট বা ধাতুর পাত তক্ষণ। প্রদর্শনীর সমন্বয়ক শিল্পীআফরোজা জামিল আয়োজন নিয়ে বলেন, ছাপচিত্রের করণকৌশল রপ্ত করার সঙ্গে, বিষয়নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভাবনার বিনিময়, ছাপচিত্রের নতুন মাধ্যম, কৌশল নিয়েচর্চা শুরু করাই ছিল লক্ষ্য। নারীশিল্পীদের মাঝে ছাপচিত্রের শ্রমসাধ্য কাজেমনোযোগী করাও এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। প্রদর্শনীর ২৪টি কাজে নারীর প্রতিসামাজিক অনাচারের সঙ্গে সমাজভাবনায় নারীর জীবনযাপনের কথা তুলে এনেছেন।প্রদর্শনীর অগ্রজ শিল্পীদের কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের দিকে আমরা মনোযোগ দিলেইআমরা কিছু শিল্পীর মাধ্যমের ছবি আঁকার মাধ্যমে পরিবর্তন হলেও কাজেরগতিশক্তির উপস্থিতির হেরফের হয়নি এতটুকুও। ফরিদা জামানের দুটি কাজেরশিরোনাম ‘ফ্রেন্ডস’ বা বন্ধু দুটি কাজেই স্থূল ও সুক্ষ্মরেখার সাহায্যেআবহমান বাংলার সুফিয়া চরিত্রকে উপস্থাপন করেছেন। ফরিদা জামানে রংতুলি আরক্যানভাসের সাহচর্যে সৃষ্ট শিল্প আর ছাপাই ছবির শক্তি একইভাবে দর্শকদেরকাছে ধরা দেয়। নাসরিন বেগম দুটি কাজে মালালার প্রতিকৃতিকে তুলে এনেছেন।মালালা-১ ছবিতে জমিন ও রেখার গাঢ় ও হালকা গোলাপি রং ব্যবহারে বিষয়ের মাঝেদ্রোহ স্পষ্ট। কনকচাঁপা চাকমার দুটি কাজের মধ্যে একটির শিরোনাম ‘অ্যামোমেন্ট’ বা একমুহূর্ত। রামুর বৌদ্ধপল্লির নৃশংস হামলায় ক্ষতিগ্রস্তবৌদ্ধমূর্তির সঙ্গে ছবির ওপরিভাগে আলোকিত চাঁদের স্থান দখলে নিয়েছে কালোবৃত্ত বা অন্ধকার বৃত্ত। ফারেহা জেবা তাঁর ‘দ্য ড্রিম’ শিরোনামের কাজেরমাঝে নারীর দেহাবয়বের সঙ্গে প্রকৃতিকে জড়িয়েছেন। সুলেখা চৌধুরী ছবির বিষয়নির্মাণ করেন নারীর প্রতি সামাজিক অনাচারের মুহূর্তকে। তাঁর ছবিতে নারীরগায়ে ছুটে আসে ধারালো ব্লেড, কোনো ছবিতে তীক্ষরেখার গতিবিদ্ধ করে দেয়নারীর শরীর। এ প্রদর্শনীর কাজ দুটো একটু ব্যতিক্রম। নারীমুখে জড়িয়ে আছেপত্রপল্লব। বিষয় নির্মাণের ক্ষেত্রে শিল্পী কখনো এমন সিদ্ধান্ত নিতেইপারেন। বাংলাদেশের শিল্পসৃষ্টির শুরু যেখান থেকে শুরু সে বাস্তবরীতিরনির্মাণ থেকে শিল্পীরা ভাঙছেন, গড়ছেন আবার নিজেদের নতুন প্ল্যাটফর্ম আরনতুন মাধ্যমে যুক্ত করছেন। আবার সঙ্গে শিল্পের দর্শক সমঝদারেরা প্রদর্শনীদেখে নিশ্চয়ই একমত হবেন। ১ মার্চ শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীটি শেষ হবে ১২মার্চ।
প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন ফরিদা জামান, নাঈমা হক, নাসরিন বেগম, কুহু প্লেমানডন, ফারেহা জেবা, কনকচাঁপা চাকমা, সুলেখা চৌধুরী, ফারজানা ইসলাম, রেবেকা সুলতানা, আফরোজা জামিল, সান্ত্বনা শাহরীন, ফারজানারহমান।