ভুটানকে ট্রানজিটসহ একগুচ্ছ বাণিজ্য-সুবিধা

0
158
Print Friendly, PDF & Email

ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক: দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে ভুটানকে ট্রানজিটসহ একগুচ্ছ বাণিজ্য-সুবিধা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশইতিমধ্যে ভুটানের চাহিদা অনুযায়ী ১৮ জাতীয় পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধার পণ্যতালিকা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছেএ ছাড়া হালুয়াঘাট ও নাকুগাঁও স্থলবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ
তবে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে মাশুল নিয়ে ভুটানকে ট্রানজিট-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারইতিমধ্যে চুক্তির খসড়াও ভুটানের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে
২০ ও ২১ মার্চ ঢাকায় দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবেবৈঠকে ভুটানকে এসব বাণিজ্য-সুবিধার গুচ্ছ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে
ট্রানজিট-সুবিধা: গত বছরের শুরুতে ভুটানের পক্ষ থেকে ট্রানজিট-সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবসহ একটি প্রটোকলের খসড়া পাঠানো হয়এরপর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রটোকলের খসড়াটি পর্যালোচনা করার জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়এতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানগত ডিসেম্বর মাসে এই কমিটি ট্রানজিট দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়ে চুক্তির একটি খসড়া তৈরি করেতাতে মাশুল আরোপের সুপারিশ করা হয়পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেই চুক্তির খসড়া আমলে এনে তা ভুটান কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেয়
আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকে খসড়া চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হতে পারেএরপর চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রটোকলের মাধ্যমে মাশুল আরোপ, শুল্কায়ন-প্রক্রিয়া, পরিবহন, বন্দর ব্যবহারসহ আনুষঙ্গিক বিষয় নির্ধারণ করা হবে
ভুটানকে ট্রানজিট-সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টি টেস্ট কেসহিসেবে দেখছিমাশুলসহ সব ধরনের আনুষঙ্গিক বিষয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে করতে হবেযাতে নেপাল, ভারতসহ অন্য দেশকে ট্রানজিট দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় হয়
মনজুর আহমেদের মতে, কোনো একটি দেশকে কীভাবে ট্রানজিট দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করে ট্রানজিট প্রদানকারী দেশট্রানজিট সুবিধা ভোগকারী দেশ রাজি থাকলে সেটা গ্রহণ করে, আর রাজি না হলে গ্রহণ করে না
ভূবেষ্টিত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য ১৯৮৪ সালে ট্রানজিট-সংক্রান্ত বাণিজ্য চুক্তি করে ভুটানকিন্তু ভারত তার ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়ায় এই চুক্তি কার্যকর করা যায়নিএ কারণে ২০০০ সালে এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়তবে এখন ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারে ভুটানি পণ্যবাহী ট্রাকতাই ভুটানের ট্রানজিট-সুবিধা পাওয়ায় আর কোনো বাধা নেই
শুল্কমুক্ত পণ্যের তালিকা পুনর্বিন্যাস: ২০১০ সালের ২৮ মার্চ থেকে ১৮ ধরনের পণ্যে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা পেয়ে আসছে ভুটানকিন্তু সম্প্রতি ভুটান আরও ছয়টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা চায়ভুটানের সেই তালিকায় থাকা আলুবীজ ও প্লাস্টার অব প্যারিসএই দুটি পণ্যে বাজার-সুবিধা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ জারি করা হয়
অন্য পণ্যসমূহ হলো ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শিম জাতীয় সবজি, সব ধরনের সবজি, কমলা, আপেল, নাশপাতি, আচার ও জেলি তৈরির নাশপাতি, শুকনা মরিচ, এলাচ, আদা, বোতলজাত ফলের রস, নুড়ি, কাঁকর, ডোলামাইট, জিপসাম, চুনাপাথর, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, কাঠ ও লৌহজাতীয় পণ্য
এসব পণ্য ভুটানে উপাদিত হলে এবং রুলস অব অরিজিন-সংক্রান্ত শর্তাদি পূরণ হলে আমদানিকারককে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক), সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক দিতে হবে নাএর মানে হলো, এসব ভুটানি পণ্য বাংলাদেশে পুরোপুরি শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা পাবে
হালুয়াঘাট ও নাকুগাঁও স্থলবন্দর: ভুটানকে ট্রানজিট-সুবিধা দিতে হালুয়াঘাট ও নাকুগাঁও স্থলবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেবে বাংলাদেশসম্প্রতি এই বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছেএই দুটি শুল্ক স্টেশনকে ইতিমধ্যে স্থলবন্দর ঘোষণা দিয়েছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ
বর্তমানে বুড়িমারী ও তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ভুটানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়
ছাড়া ট্রানজিট-সুবিধার আওতায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে চায় ভুটানএর পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি ও আমদানি করার সুযোগ চায় দেশটিভুটান ট্রানজিটের আওতায় এই দুটি বন্দরও ব্যবহার করতে পারবে
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য পরিস্থিতি এখনো ভুটানের অনুকূলেসর্বশেষ হিসাবমতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ভুটান থেকে দুই কোটি সাত লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশআমদানি পণ্যশাকসবজি, ফলফলাদি, পাথর, কাঠ, লৌহজাতীয় পদার্থ ইত্যাদিঅন্যদিকে একই অর্থবছরে ভুটানে রপ্তানি হয়েছে ৯৯ লাখ ডলারের পণ্যমূলত ওভেন ও নিট পোশাক, রসায়ন পণ্য, ফলের রস, শুকনো খাবার, মেলামাইন পণ্য, ওষুধ ইত্যাদি ভুটানে রপ্তানি হয়

 

১৩ মার্চ/নিউজরুম

 

শেয়ার করুন