আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ও বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক নেতা হুগো চাভেজের মৃত্যুর পর লাতিন আমেরিকার মতাদর্শের লড়াই অনেকটা দুর্বল হয়ে গেল। প্রায় ১৫ বছর আগে এই অঞ্চলে বামপন্থীদের উত্থান মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানো শুরু করে। এই চ্যালেঞ্জে নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন সদ্য প্রয়াত নেতা চাভেজ। তাঁর মৃত্যুতে এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব বাড়বে।
চাভেজের ভক্ত-সমর্থকেরাও বলছেন, চাভেজের মতো নেতা থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি লাতিন আমেরিকার কট্টর অর্থনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতি কিছুটা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছিল।
এ ক্ষেত্রে ব্রাজিল ছিল অন্য দেশগুলোর তুলনায় কিছুটা এগিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাজিলের একজন কূটনীতিক বলেন, চাভেজের মৃত্যুর ফলে এই অঞ্চলে একটি পরিবর্তন আসবে। তিনি লাতিন আমেরিকার রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান দখল করেছিলেন। এখন রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হবে। আরেকজন কূটনীতিক বলেন, চাভেজের মৃত্যুর ফলে লাতিন আমেরিকা আমূল সংস্কারের দিকে এগিয়ে যাবে।
এর আগে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ বলেন, তিনি সব সময় চাভেজের ‘সব বিষয়ে একমত ছিলেন না’। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ব্যবসায়ীরা এটাকেই ভেনেজুয়েলা ও ব্রাজিলের মধ্যে পার্থক্য হিসেবে দেখেছিলেন। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের ইরিন মিয়া বলেন, ‘চাভেজ-পরবর্তী লাতিন আমেরিকায় ভেনেজুয়েলার প্রভাব কমবে। এর সুফল পাবে ব্রাজিল।’
ব্রাজিলের পর চাভেজ-পরবর্তী লাতিন আমেরিকার সুফল যাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘরে। চাভেজ প্রায় ১৪ বছর ভেনেজুয়েলার ক্ষমতায় ছিলেন। এই পুরো সময়টায় তিনি ওয়াশিংটনের জন্য ‘গলার কাঁটা’র মতো ছিলেন। চাভেজ মার্কিন কূটনীতিকদের বের করে দিয়েছেন, দেশকে সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন, লাতিন আমেরিকায় বামপন্থীদের উত্থানে ভূমিকা রেখেছেন এবং মার্কিনবিরোধী নেতাদের নিয়ে জোট গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক ঝুঁকি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়া গ্রুপের হেথার বার্কম্যান বলেন, চাভেজের মৃত্যুর পর ওই অঞ্চলে মার্কিন কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়বে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হবে।
প্রায় এক দশক ধরে লাতিন আমেরিকায় বলার মতো কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। এ সময়ের মধ্যে সেখানে ‘বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া’ আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে ইউনিয়ন অব সাউথ আমেরিকান নেশনস এবং কমিউনিটি অব লাতিন আমেরিকান অ্যান্ড ক্যারিবিয়ান স্টেটস নামের দুটি ফোরামও গঠন করা হয়। ওই অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমানোর উদ্দেশ্যেই মূলত এই ফোরাম গঠিত হয়েছিল।
তবে মার্কিন কূটনীতিকেরা অবশ্য বিষয়টি অন্যভাবে দেখেন। তাঁরা বলেন, লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, যেকোনো সময়ের তুলনায় ওই অঞ্চল এখন অনেক বেশি স্থিতিশীল।
১৩ মার্চ/নিউজরুম