স্পোর্টস ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমে সোমবার ছিল ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী দিনগুলোর একটি’। যে আলোড়ন শুরু হয়েছে, তা সম্ভবত শেষ হচ্ছে না শিগগিরই। জট খোলেনি সমস্যার, বরং প্যাট হাওয়ার্ডের এক মন্তব্যে নতুন করে জট পাকিয়েছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পারফরম্যান্স ম্যানেজার বলছেন, শেন ওয়াটসন ‘কখনো কখনো’ দলের প্রতি নিবেদিত! মাইকেল ক্লার্কের দাবি, চারজনের বহিষ্কারের পেছনে শুধু একটি কারণই নয়। এ ঘটনা ওই চারজনের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না বলেও বিশ্বাস অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের।
হায়দরাবাদ টেস্টের পর ব্যক্তিগত ও দলীয় পারফরম্যান্সে উন্নতির জন্য দলের প্রত্যেক ক্রিকেটারের কাছে তিনটি করে পয়েন্ট জানতে চেয়েছিলেন কোচ মিকি আর্থার। দলের ১২ জন ফোনে, খুদেবার্তায়, ই-মেইলে, রুমের দরজার নিচ দিয়ে চিরকুট পাঠিয়ে নিজেদের পয়েন্ট জানিয়েছেন।কিন্তু সাড়া দেননি ওয়াটসন, জেমস প্যাটিনসন, মিচেল জনসন ও উসমান খাজা।শাস্তি হিসেবে চারজনকেই মোহালিতে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট থেকে বাদ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সন্তানসম্ভাবা স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য সেদিনই ভারত ছেড়েছেন ওয়াটসন। তবে শাস্তিটা ‘বেশি রূঢ়’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ছেড়ে দিতে পারেন টেস্ট ক্রিকেটই।
টেস্ট ক্রিকেটারদের সঙ্গে ‘স্কুল দলের’ মতো আচরণ করা হচ্ছে বলে সাবেক ক্রিকেটাররা ধুয়ে দিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ডকে। তার পরও কাল বিতর্কের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছেন পারফরম্যান্স ম্যানেজার হাওয়ার্ড, ‘শেনকে (ওয়াটসন) আমি খুব ভালো করে জানি। আমার ধারণা, দলের সর্বোচ্চ স্বার্থকে ও গুরুত্ব দেয়, কিন্তু সেটা কখনো কখনো। পরিস্থিতি নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত নই। সুযোগ পেলেই ওর সঙ্গে কথা বলব। তবে এটাও পরিষ্কার করে দিতে চাই, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে হলে সঠিক কারণেই খেলতে হবে। দলকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে, বাছাবাছির সুযোগ নেই। এটাই অস্ট্রেলিয়া দলের মান, নিজের মতো চললে হবে না।’
অভিমানী ওয়াটসনের কাছে যথেষ্টই রূঢ় মনে হতে পারে হাওয়ার্ডের কথাগুলো। অনেকে চলমান বিতর্কে ‘খলনায়ক’ বানিয়েছেন ক্লার্ককেও। তবে পরশুই নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক, ‘আমি চাই যেন সংবাদমাধ্যম ও সমর্থকেরা ব্যাপারটা বুঝতে পারে। আমাকে ভুল বুঝবেন না, ব্যাপারটা শুধুই একটা ঘটনার কারণে নয়। এই সফরে এমনিতেই আমাদের পারফরম্যান্স ভালো নয়। তার ওপর মাঠের বাইরেও এমন কিছু হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলে যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। কাজটা খুবই সাধারণ ছিল, শুধু একটু ভাবতে হতো। যে চারজন এটা করেনি, ওরা দল ও কোচকে অসম্মান করেছে।’
ক্লার্কের আশা, এই চারজনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণই থাকবে, ‘আমার ধারণা, চারজনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বে এটার কোনো বাজে প্রভাব পড়বে না। কারণ ওরা আমাকে শ্রদ্ধা করে, ওরাও জানে আমি ওদের কতটা শ্রদ্ধা করি। আশা করি, সহজেই এ ঘটনাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া যাবে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলাটা ওরা যতটা ভালবাসে, আমিও বাসি। এবং ওরা জানে দলটাকে কতটা সফল করে তুলতে চাই।’
চারজনের একজন প্যাটিনসন অবশ্য শাস্তি মেনে নিয়েছেন, ‘শাস্তিটা জানার পর শুরুতে আমারও খুব খারাপ লেগেছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পেরেছি। একটা অজুহাত দেখিয়ে খুব সহজেই বলতে পারতাম, শাস্তিটা রূঢ় হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে হলে সবকিছুই শতভাগ ঠিক করতে হবে। বাকি ১২ জন সময় বের করতে পেরেছে, আমরা পারিনি। ওদের জায়গায় আমি হলেও হয়তো এটাকে স্বার্থপরতা ভেবে হতাশ হতাম। খারাপ লাগছে এখনো, কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থ ভাবলে শাস্তিটা ঠিকই আছে।’
চতুর্থ টেস্টেই আবার খেলবেন প্যাটিনসন।কিন্তু ওয়াটসন? দেড় বছর ধরে ক্লার্কের ডেপুটি হলেও ওয়াটসনের সঙ্গে ক্লার্কের সম্পর্ক খুব ভালো নয়। হাওয়ার্ড বলছেন, ‘সমস্যা থাকলে দুজনকে বসেই মিটামাট করতে হবে।’ হাওয়ার্ড-ক্লার্ক দুজনই বলছেন, ওয়াটসনকে স্বাগতই জানানো হবে, সহ-অধিনায়কও থাকবেন। কিন্তু ওয়াটসন কি ফিরবেন? ওয়েবসাইট।
১৩ মার্চ/নিউজরুম