১৩ মার্চ, ২০১৩,
বাড়ির বউ চাকরি করবে! এটা শুনলে একসময় আঁতকে উঠতেন পরিবারের লোকজন। সেই পরিস্থিতির বেশ পরিবর্তন এসেছে। তবে বদলির চাকরি হলে ভ্রুজোড়া কিছুটা হলেও কুঁচকে যায়। তখন স্ত্রী, মা, বউমার ভূমিকায় নামতে হয় পরিবারের অন্য মানুষগুলোকে। চাকরি বলে কথা। তাই অনেক সময় বদলির চাকরিতে সংসার ছেড়ে দূরে থাকতে হয় নারীকে।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, সময় পেলেই বাইরে ঘুরতে যাওয়া—বদলির চাকরিতে এই মুহূর্তগুলো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। পরিবার থেকে দূরে থাকলে মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। অনেক সময় আত্মবিশ্বাসও কমে আসে।মনে হয় পরিবার ও চাকরি কোনোটিতেই পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
রাজশাহী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবেদা সুলতানার বদলির চাকরির কারণে মাঝে মাঝেই এ রকম মনে হয়। তিন সন্তান ও স্বামী ঢাকায় থাকেন। চাকরির জন্য ২০১১ সাল থেকে তিনি রাজশাহীতে আছেন। ১৫ দিন পরপর ঝটিকা সফরে আসেন সংসারে। আর বাকি দিনগুলো মন থাকে পরিবারের কাছে। আবেদা সুলতানা বলেন, ‘সন্তানদের খাওয়া, পড়াশোনা—সবকিছু ঠিকঠাক চলছে কিনা, তা নিয়ে চিন্তিত থাকি। বাসায় আমার মা-বাবা কিছুদিন পরপরই এসে থাকেন। স্বামী সব সময় চেষ্টা করছেন সংসারটিকে সঠিকভাবে চালিয়ে নেওয়ার জন্য। সন্তান ও স্বামী সব সময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। মন খারাপ হলে তারাও বুঝতে দেয় না। আমিও তাদের বুঝতে দিই না।’
বদলির চাকরিতে মানসিক দৃঢ়তা, ধৈর্য, মানসিক পরিপক্বতা সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন ইডেন মহিলা কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গাজী রুমানা রহমান। স্ত্রীদের যেমন বদলির চাকরি হয়, তেমনি স্বামীদেরও বদলির চাকরি হয়। দু ক্ষেত্রেই নারীকে অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে হয়। এই ভূমিকার জাঁতাকলে পড়ে অনেক নারীরই মনে হয়, চাকরিটা ছেড়ে দিলে কেমন হয়? এ বিষয়ে গাজী রুমানা রহমান বলেন, এটা কোনো সমাধান নয়। একটার জন্য আরেকটাকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক না। বরং পরিবারের অন্য মানুষগুলোকে এ সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পরিবারের অন্যরা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলে অনেক সমস্যাই সহজে সমাধান করা যায়। সম্ভব হলে ছোট সন্তানকে মা নিজের কাছেও রাখতে পারেন। সন্তান একটু বড় হলে তাদেরকে মায়ের চাকরির গুরুত্ব বোঝাতে হবে। এটিও বাবা-মাকে করতে হবে। ছোটখাটো সমস্যাগুলোর সমাধান তাৎক্ষণিকভাবে করে ফেলতে হবে। না হলে এগুলোই একসময় অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়।
চাকরি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রায়ই মনে করেন নুসরাত জাহান। তবে স্বামী ও শাশুড়ি প্রতিবারই ধৈর্য ধরতে বলেন। বিয়ে হয়েছে আড়াই বছর হলো। কয়েক মাস আগে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ভোলা জেলার একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে নিয়োগ পেয়েছেন। চাকরিটি তাঁর কাছে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্বামী ও ছোট্ট গোছানো সংসারেই যেন মনটা পড়ে থাকে।নুসরাত বলেন, ‘দূরে থেকে সংসার করা অনেক কঠিন। সব খোঁজখবরই এখন নিতে হয় ফোনের মাধ্যমে। সপ্তাহে এক দিন যাই। সংসারের কাজ গুছিয়ে আসি। আমার স্বামীও মাঝেমধ্যে ঘুরে যান।’ অবশ্য স্ত্রীর চাকরিতে ইতিবাচক মনোভাবই পোষণ করলেন স্বামী।তিনি চাকরি করেন ঢাকায়। যদিও স্ত্রী না থাকায় তাঁর জীবনটা এখন ব্যাচেলরদের মতো। অপেক্ষা করে আছেন, আবার দুজনের এক শহরে কর্মজীবন হবে। তখন সংসার করবেন মন ভরে।