স্পোর্টস ডেস্ক লিওনেল মেসি সব সময়ই বলেন, দলের সাফল্যই তাঁর কাছে আগে। ব্যক্তিগত অর্জন-প্রশংসাকে অগ্রাধিকার তালিকায় দুই নম্বরেই রাখেন তিনি। চারটি ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারের বিনিময়ে হলেও আজ নিশ্চয়ই এসি মিলানের বিপক্ষে জয়টাই চাইবেন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন তারকা।
খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে বার্সেলোনাও তাকিয়ে আছে মেসির দিকেই। প্রথম লেগে ২-০ গোলে হেরে এসেছে বার্সেলোনা। আজ দ্বিতীয় লেগে শুধু জিতলেই হবে না, জয়ের ব্যবধানটাও হতে হবে বড়। ম্যাচটাকে টাইব্রেকারে নিতে হলেও মেসিদের জিততে হবে অন্তত ২-০ ব্যবধানে। আর মিলান যদি কোনোক্রমে একটি গোল দিয়ে বসে, সে ক্ষেত্রে বার্সেলোনার জন্য কাজটা হয়ে যাবে ‘মহাকঠিন’। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে জিততে হবে ৪-১ গোলে। মিলানের মতো একটা সুসংগঠিত দলের বিপক্ষে সেটা তো প্রায় অসম্ভব কল্পনা! তবুও আশায় বুক বাঁধছে বার্সেলোনা।
এ মুহূর্তে আশাটাই বড় হাতিয়ার বার্সেলোনার। মৌসুমটা শুরু করেছে রেকর্ড গড়ে।কিন্তু সেই বার্সেলোনাকেই মৌসুমের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টায় মনে হচ্ছে বিবর্ণ। গত মাসে চ্যাম্পিয়নস লিগে মিলানের কাছে হারের পর চিরশত্রু রিয়াল মাদ্রিদের কাছে দুটি এল ক্লাসিকোর হার তারই প্রমাণ।মিলানের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচ নিয়ে বার্সেলোনার ভারপ্রাপ্ত কোচ জর্ডি রৌরা তাই আগে থেকেই সতর্ক, ‘আমরা জানি, মিলান কীভাবে খেলতে যাচ্ছে এবং আমাদের কী করতে হবে। গোলের সামনে আমাদের আরও ভালো করতে হবে। ম্যাচটা ঘুরিয়ে দিতে আমরা সবকিছুই করব।’
ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে তো আঁকছেন শুধু জয়ের ছবিটাই, ‘আমরা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলব—লক্ষ্য পূরণে আমাদের যা করবে হবে—এবং আমরা আশাবাদী আমরা ৩-০-তে জিতব।’ তবে মিলান নিশ্চিতই দর্শক হয়ে পিকের ‘স্বপ্নপূরণ’ দেখতে চাইবে না! ইতালিয়ান ক্লাবটি বরং আরও বেশি সংগঠিত হয়ে নামারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিডফিল্ডার ম্যাথ্যু ফ্লামিনি যেমন বলছেন, ‘নিজেদের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে, আমরা পরের রাউন্ডে যেতে পারি। এটা সহজ ম্যাচ হবে না মোটেও।আমাদের হয়তো বেশ রক্ষণাত্মকই থাকতে হবে, কিন্তু আমরা চেষ্টা করব এবং আমাদের খেলাটাই খেলব। আমরা এটা জানি, একটা গোলই তাদের জন্য কাজটা আরও কঠিন করে দেবে।’ ডিফেন্ডার কেভিন কনস্ট্যান্টের কথা, ‘আমরা জানি, প্রথম লেগ থেকে মঙ্গলবারের ম্যাচটা হবে ভিন্ন। আমরা ২-০ গোলের লিড নিয়ে শুরু করব। তবে আমরা সেখানে শুধু ওটা ধরে রাখতে যাব না, আমরা জিততে চেষ্টা করব।’
বার্সেলোনার জন্য আশার কথা, নিজেদের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বশেষ ১৯ ম্যাচে তারা অপরাজিত। জিতেছে ১৫টিতেই। ইতিহাস হাতছানি দিয়ে ডাকছে মেসিকেও।আজ একটি গোল করতে পারলেই রুড ফন নিস্টলরয়ের ৫৬ গোল টপকে মেসি হয়ে যাবেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। বার্সার জন্য আরেকটি সুখবর, চোট কাটিয়ে আজ মাঠে ফিরছেন জাভি।
আজ চ্যাম্পিয়নস লিগের অন্য ম্যাচে শালকের মুখোমুখি হচ্ছে গ্যালাতাসারাই।২০০১ সালের পর প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে জার্মানিতে এসেছে তুরস্কের ক্লাবটি। যদিও নিজেদের মাঠের প্রথম লেগে ১-১ গোলে ড্র করায় গ্যালাতাসারাই-ই কিছুটা চাপের মুখে। রয়টার্স, এএফপি।
ন্যু ক্যাম্পে চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বশেষ ১৯ ম্যাচে অপরাজিত বার্সেলোনা। জয় ১৫টিতেই। ঘরের মাঠে বার্সার সর্বশেষ হার রুবিন কাজানের কাছে (২-১), ২০০৯ সালের অক্টোবরে।
ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম লেগে প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে প্রথম লেগে হেরেও ২৪ বারের মধ্যে ১১ বার নিজেদের মাঠে ফিরতি লেগে জিতে পরের রাউন্ডে উঠেছে বার্সেলোনা। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে কোনো দলই প্রথম লেগে ২-০ গোলে হারের ঘাটতি পুষিয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারেনি।
আজ একটি গোল করলেই রুদ ফন নিস্টলরয়কে (৫৬ গোল) টপকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে যাবেন লিওনেল মেসি।
চ্যাম্পিয়নস লিগে স্পেনে এসে স্প্যানিশ দলগুলোর বিপক্ষে ২৩ ম্যাচ খেলে মিলান জিতেছে মাত্র ৪ বার। হেরেছে ১৩টিতেই। যার সর্বশেষটি এ মৌসুমেই, গ্রুপ পর্বে মালাগার কাছে হেরেছে ১-০ গোলে।
২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজেদের মাঠে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ৪-১ গোলে জিতেও বাদ পড়েছিল মিলান! স্পেনেরই দেপোর্তিভো লা করুনিয়ার বিপক্ষে ফিরতি লেগে হেরেছিল ৪-০ গোলে।
আজ মুখোমুখি
বার্সেলোনা-এসি মিলান
শালকে-গ্যালাতাসারাই
(১২ মার্চ): নিউজরুম