স্পোর্টস ডেস্ক সুনামি ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এই গল স্টেডিয়ামকে। এই টেস্টে সেটি ভাসছে রানবন্যায়। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য মোটেই ভালো বিজ্ঞাপন নয়। তবে বাংলাদেশের সেটি নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে!
প্রথম দিনটি বাদ দিলে বাংলাদেশ দলের জন্য এ এক স্বপ্নযাত্রা। নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এর কোনো কোনোটি আবার ভেঙেও যাচ্ছে। মোহাম্মদ আশরাফুলের অপরাজিত ১৫৮ রানের রেকর্ড ভাঙতে লেগেছিল সোয়া আট বছর। এখানে দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যেই অতীত হয়ে গেল তাঁর ১৯০ রানের রেকর্ড।
দেশের পক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটি করার বড় স্বপ্ন ছিল। আগের দিনের ১৮৯ রানের সঙ্গে মাত্র ১ রান যোগ করেই আশরাফুলকে ফিরতে হলো স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে। বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথকে ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে গেল স্লিপে।
ডাবল সেঞ্চুরি তার পরও হলো। করলেন মুশফিকুর রহিম। ওই ডাবল সেঞ্চুরির সঙ্গে নাসির হোসেনের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা যোগ হয়ে বাংলাদেশ করল আসল রেকর্ডটা। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ছয় শ রান। ৬৩৮ শুধু বাংলাদেশেরই নয়, এই গল মাঠেরও সর্বোচ্চ স্কোর। সেই ২০০০ সালে পাকিস্তান ৬০০ করেছিল।সেটিকে ছাড়িয়ে যাওয়া নিশ্চিত করে দিল, এই মাঠে ভবিষ্যৎ টেস্ট ম্যাচগুলোয় বারবার উচ্চারিত হবে বাংলাদেশের নাম।
সেটি তো আর আসল পাওয়া হতে পারে না। সেই পাওয়া হবে এই ম্যাচটা ড্র রাখতে পারলে। এর আগে শ্রীলঙ্কায় খেলা আটটি টেস্ট ম্যাচেই শোচনীয় পরাজয়। এবার সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার সুবর্ণ সুযোগ।
শ্রীলঙ্কায় সেই প্রথম টেস্টে আশরাফুলের অভিষেকে সেঞ্চুরির সৌজন্যে তিন শ পেরিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই একবারই। পরের সাত টেস্টের ১৪ ইনিংসে দুই শ রানই হয়েছে মাত্র দুবার। সেখানে এবার সফরের প্রথম টেস্ট ইনিংসেই স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করবে ৬৩৮ রান—এটা আসলে কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো। শ্রীলঙ্কা ৫৭০ রানে ডিক্লেয়ার করে দেওয়ার পর যেখানে ফলো অনের চোখরাঙানি, সেখানে উল্টো ৬৮ রানের লিড!
গত ডিসেম্বরেই ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম পাঁচ শ ছাড়ানো স্কোর করেছিল বাংলাদেশ। মাঝখানে একটি মাত্র টেস্ট। অতীত হয়ে গেল সেই রেকর্ড। দিন শেষে শ্রীলঙ্কা ঘাটতিটা মুছে দিয়ে ৪৮ রানের লিড নিয়ে নিয়েছে। উইকেট মাত্র একটি। সোহাগ গাজীর বলে মুশফিকুর ক্যাচটা না ফেললে অবশ্য ৪৯ রানে অপরাজিত থাকার বদলে ১৩ রানেই ফিরে যান কুমার সাঙ্গাকারা।
মুশফিকুরকে দোষ দেওয়া যাচ্ছে না। প্রথম ইনিংসে দেড় দিনের বেশি কিপিং করেছেন। এরপর এই গরমে সাত ঘণ্টারও বেশি ব্যাটিং। শরীরের নাম মহাশয় বললেও সব সময় তাতে সবকিছু সয় না।
গলের চতুর্থ দিনের উইকেটেও কোনো জুজুর দেখা মিলল না। আজ শেষ দিনে আর কীই-বা হবে! টেস্ট কি তাহলে ড্র-ই হয়ে গেল? ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে মুশফিকুর তাই খুব সাবধানী, ‘শেষ দিনের খেলা এখনো বাকি। অনেক কিছুই হতে পারে। তবে আশা করি, ড্র করতে পারব।’
বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করার উদ্যাপনটাও সেই ড্র না হওয়া পর্যন্ত তুলে রাখছেন মুশফিক। উদ্যাপনের অনেক উপলক্ষই অবশ্য এরই মধ্যে পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংসের কথা তো বলাই হলো। সেই অভিষেক টেস্টে ১৫৩.৩ ওভার স্থায়ী হয়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস। এত দিন পর্যন্ত এটিই হয়েছিল টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দীর্ঘতম ইনিংস। সেই রেকর্ডও ভেঙে গেল এখানে।
ব্যক্তিগত অর্জনেও ভাস্বর এই টেস্ট। এই প্রথম এক ইনিংসে তিনটি সেঞ্চুরি।ইতিহাস গড়েছেন মুশফিকুর। ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্নপূরণ না হলেও মোহাম্মদ আশরাফুলের পুনর্জন্ম দেখেছে এই টেস্ট। নাসির হোসেনের সেঞ্চুরির আনন্দটা বোধ হয় মুশফিকুরের ডাবল সেঞ্চুরির আনন্দের চেয়ে কম নয়। আগের দুই টেস্টে যে নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়েছিলেন। তামিম সেটি মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘দেখ্, ওই দুইটা সেঞ্চুরি মিস না করলে তোর টানা তিন টেস্টে তিন সেঞ্চুরি হয়ে যেত।’ নাসিরের মধ্যে সবকিছু সহজভাবে নেওয়ার একটা ব্যাপার আছে। কী হয়নি, তা নিয়ে আফসোস করাটা তাঁর ধাতে নেই। যা হয়েছে, তাতেই তিনি খুশি।
সবার খুশিই পরিপূর্ণতা পাবে আজ শেষটা ভালো হলে।
চতুর্থ দিন শেষে
শ্রীলঙ্কা: ৫৭০/৪ ডি. ও ১১৬/১
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৬৩৮
(১২ মার্চ): নিউজরুম