১২ মার্চ, ২০১৩,
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অপবাদ ও সংখ্যার তর্ক-বিতর্কে মুক্তিযোদ্ধারা আছেন অস্বস্তি ও বিব্রতকর অবস্থায়। অনেক পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৭০ হাজার, ৮০ হাজার, এক লাখ ২০ হাজার, দেড় লাখ বলে উল্লেখ করা হয়।
আমি ৩০ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের সুবাদে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছি।আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার অভিজ্ঞতা, সংগৃহীত তথ্য ও বর্তমান সংজ্ঞানুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় তিন লাখ।
মুক্তিবাহিনীতে পূর্ব প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা অর্থাৎ যাঁরা পাকিস্তান সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী (নৌকমান্ডোসহ) এবং ইপিআর সদস্য ছিলেন প্রায় ১৯ হাজার। ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গণবাহিনী প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার, মুজিব বাহিনী ১২ হাজার। মুজাহিদ, পুলিশ, আনসার, কাদেরিয়া বাহিনী ও হেমায়েত বাহিনী প্রায় ৩০ হাজার। দেশের ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রশিক্ষণ নেন প্রায় ৫৪ হাজার। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ইয়ুথ ক্যাম্পের (যুব অভ্যর্থনা শিবির) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সশস্ত্র/সক্রিয় সদস্য, সংবাদদাতা, কুরিয়ার, গাইড, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী, শিল্পী, গায়ক ফুটবল খেলোয়াড়, ডাক্তার, নার্স, ইঞ্জিনিয়ার, ধোপা, নাপিত, নৌকার মাঝি, সাংবাদিক, লেখক, চিত্রগ্রাহক, অস্ত্র গোলাবারুদ সংরক্ষক, নিয়মিত আশ্রয়দাতা প্রায় ৭০ হাজার।
এ পর্যন্ত দুই লাখ চার হাজার ৮০০ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। আরও এক লাখ ৪০ হাজার জন তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। নতুন আবেদনের বেশির ভাগই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যাচাই-বাছাই করলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা তিন লাখের মধ্যে থাকবে।
গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় কয়েক হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে, তাতে সন্দেহ নেই। নতুন আবেদনের মাধ্যমে আরও কয়েক হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্তির চেষ্টায় আছে। যারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চায় না, মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান পছন্দ করে না, তারা অপপ্রচার করে মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন অসম্মানিত করার চেষ্টায় লিপ্ত।
মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে, অঙ্গ হারিয়ে, ত্যাগ ও অবদানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন। যদিও অনেক মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার চাকরি, কর্মসংস্থান, অর্থের অভাবে অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। অন্যদিকে অনেকে বাড়ি গাড়ি ধনসম্পদের পাহাড় গড়ে আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন।মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে রাজনীতি এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দল ভারী করা হচ্ছে।
সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের রেশন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি যানবাহনে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের জন্য পরিচয়পত্রদান, ফ্রি চিকিৎসা, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন, সন্তানের চাকরি, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে সরকারিভাবে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করেছে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা হারানো সম্মান অনেকটা ফিরে পেয়েছেন।
সংগত কারণেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি এবং তা গেজেট আকারে প্রকাশ জরুরি হয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সমস্যা, ধীরগতি ও অনভিজ্ঞ দায়সারা কর্মকাণ্ডে তা দুরাশায় ও রাজনৈতিক বক্তব্যে পরিণত হতে যাচ্ছে।
মো. আব্দুল হান্নান
আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা।
হরতাল ও অপরাজনীতি
রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের উপকার করা, দেশের ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন।যুগে যুগে রাজা-বাদশারা নিজ নিজ রাজ্যের উন্নয়ন করেছেন। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত সব যুগেই ছিল। রাজ্যে রাজ্যে কিংবা নিজ রাজ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সেই যুগেও ছিল। কিন্তু কোনো রাজা-বাদশাই পারতপক্ষে নিজ দেশের ও দেশের মানুষের ক্ষতিসাধন করেননি। আর যাঁরা ক্ষতি করেছেন, তাঁরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন।
আমাদের দেশের সরকারি ও বিরোধী দলের রাজনীতিবিদেরা নিশ্চয়ই দেশের ও দেশের মানুষের উন্নতির জন্য রাজনীতি করেন।এটা যদি রাজনীতিবিদেরা স্বীকার করেন, তাহলে দেশের জন্য যা ভালো, সে কাজই করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করতে হবে, দেশের পতাকা, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, জাতীয় সংগীত—সবকিছুকেই শ্রদ্ধাভরে সম্মান করতে হবে এবং এই মৌলিক বিষয়ে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস নিয়েই দেশের ও দেশের মানুষের উন্নতির লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে।
আর যদি রাজনীতি দেশের ও দেশের মানুষের উন্নতির লক্ষ্যে না হয়ে ব্যক্তিগত সম্পদ, বৈভব, ক্ষমতা ইত্যাদির লক্ষ্যে হয়, তাহলে এসব রাজনীতিবিদ অচিরেই অপাঙেক্তয় হবেন। দিনের পর দিন হরতাল, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, মানুষ হত্যা—এসব অপরাজনীতি মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না। সরকারি ও বিরোধী দলকে আলোচনায় বসতে হবে এবং সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।
মো. হাবিবুর ইসলাম
আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।
পরীক্ষার সময়সূচি
আগামী ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। একজন শিক্ষার্থীর জীবনে উচ্চমাধ্যমিক ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে তার ভবিষ্যৎ দিকনিশানা। সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিধায় বিজ্ঞান বিষয়ে রিভিশন দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় না থাকায় পরীক্ষার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কেবল গণিত পরীক্ষার প্রথম পত্রে দীর্ঘ ২৫ দিন বিরতি দেওয়া হয়েছে, যা কাম্য নয়। রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির জন্য ন্যূনতম সময় দেওয়া হয়নি। তাই একজন অভিভাবক হিসেবে উল্লিখিত রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পরীক্ষার সময়সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আবশ্যক বলে মনে করি।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সব বোর্ড কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
জি এ সিদ্দিকী
সানকিপাড়া, ময়মনসিংহ।