১০ মার্চ, ২০১৩।।
দেশের আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখরা কোনো সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী নন। তারা দ্বীনি শিক্ষার পরিসরে, খানকা কিংবা নিজস্ব বলয়ে বিচরণ করেন। মুরিদ, তালেবে এলেম, মাদরাসা, মক্তব ও মসজিদের বাইরে তাদের বক্তব্য সীমিত। তাদের মূল কাজ ধর্মীয় সংস্কার, দ্বীনের দাওয়াত এবং এলেমচর্চা। এর বাইরে তারা দেশের জনগণের চোখে ধর্মীয় নেতার আসনে প্রতিষ্ঠিত। প্রচলিত রাজনীতি ও সমাজ ভাবনায় তারা নিজেদেরকে খুব একটা জড়ান না। তারাই আমাদের সমাজে ভালো মানুষ, দ্বীনদার হিসেবে পরিচিত।
সব ব্যাপারে নিয়ম থাকলেও দ্বীনের ব্যাপারে যেকোনো মানুষের বাড়াবাড়ি, বিদ্বেষ, চরমপন্থা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টা তারা সহ্য করেন না, বরং প্রতিরোধ করেন, তাদের সাথে যোগ দেয় ধর্মপ্রাণ মানুষ। যাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই, এরা তৌহিদি জনতা, এই তৌহিদি জনতা সরকার পতনের লক্ষ্যে কাজ করে না, তারা সীমিত এজেন্ডায় ক্ষোভ জানায়, প্রতিবাদ করে, সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলে। এদের ক্ষোভ প্রশমনে বাধা দেয়ার ফলাফল কখনো শুভ হয় না।
অথচ মহানবী সা: সম্পর্কে ব্লগারদের অশালীন কটূক্তির প্রতিবাদে আলেম-ওলামাসহ ইসলামি দলগুলোর বিক্ষোভ ঠেকাতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাজধানীজুড়ে অনেকটা কারফিউ অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর মূল পয়েন্টগুলোতে বিুব্ধ মুসল্লিদের রাস্তায়ই নামতে দেয়নি পুলিশ। দুয়েক জায়গায় মিছিলের চেষ্টাকালেই গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। চলেছে গণগ্রেফতার। দাড়ি-টুপিধারী ও মাদরাসাছাত্র-শিক্ষক দেখলেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাসাবাড়ি ও অফিসে চালানো হয়েছে দফায় দফায় তল্লাশি। পুরানা পল্টনে পুলিশের পিটুনি ও ধাওয়ায় বহুতল ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু ঘটেছে এক যুবকের। পুলিশ আলেম-ওলামাসহ নিরীহ দেড় শতাধিক মানুষকে আটকও করেছে। বায়তুল মোকাররম-পল্টনমুখো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর সাঁজোয়া যানের দখলে ছিল জুমাবারের রাস্তা।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট ছিল আগের জুমার দিনের মতোই পুরোপুরি বন্ধ। রাস্তার মাঝ বরাবর দুই সারিতে দাঁড়ানো সশস্ত্র পুলিশ ও র্যাব। পূর্ব গেটের বিশাল ফটকের একটি সরু প্রবেশপথ ছাড়া বাকিগুলো ছিল বন্ধ। প্রবেশ করতেই দেহতল্লাশি করছিল পুলিশ। পূর্ব গেটের সামনেই অস্ত্র তাক করে দাঁড়ানো র্যাবের একটি দল। আরো বিপুলসংখ্যক র্যাব অস্ত্র তাক করে প্রস্তুত। দণি গেট খোলা, তবে কয়েক সারিতে দাঁড়ানো পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক শ’ সদস্য। সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। মসজিদের ভেতরে সাদা পোশাকে আগে থেকেই অবস্থান করছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক শ’ সদস্য। এর ফলে সাধারণ মানুষ মসজিদে গেছেন এমন সংখ্যা হাতেগোনা। মসজিদের ওপরের পাঁচটি তলায় যাওয়ার প্রবেশপথের শাটারও লাগানো ছিল।
জুমার নামাজের আগেই কালভার্ট রোডে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অফিসে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অফিসটি ঘেরাও করে রাখে। নামাজের আগে কওমি মাদরাসাছাত্রসহ অর্ধশতাধিক লোককে আটক করে। বায়তুল মোকাররমে প্রবেশের সময়ও আটক হয় বেশ কয়েকজন। জুমার দিনে বায়তুল মোকাররমের এ দৃশ্য অচেনা। এ যেন বাংলাদেশের ছবি নয়। ফিলিস্তিন কিংবা অধিকৃত কাশ্মিরের ছবি। এ অবস্থা আরো গভীর সঙ্কটের আলামত।
আমরা সরকারের শুভবুদ্ধি কামনা করি। আলেম-ওলামা ও দ্বীনদারদের নিয়ে বাড়াবাড়ির ফলাফল শুভ হওয়ার নয়। ইসলামবিদ্বেষের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এভাবে ইসলামপন্থীদের প্রতি অভাবনীয় আচরণ ক্ষোভ আরো বাড়িয়ে তুলছে। ক্ষোভ প্রশমনের সুযোগ না দিলে এই অরাজনৈতিক সামাজিক শক্তির স্রোতটি এক দফার আন্দোলনকেই লাভবান করবে। এখনই বাস্তবতা উপলব্ধি করুন।