অর্থনীতির রক্তরণে উদ্বেগ সঙ্ঘাত বন্ধের বিকল্প নেই

0
224
Print Friendly, PDF & Email

১০ মার্চ, ২০১৩।।

টানা হরতাল, সঙ্ঘাত ও সহিংসতা অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত অবস্থার মুখে ঠেলে দিয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় এসংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে ইউরোপে মন্দা, দেশে অবকাঠামো সঙ্কটসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও রফতানি খাতে মোটামুটি ভালো প্রবৃদ্ধি ছিল। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা, বিশেষ করে এক সপ্তাহে চার দিনের হরতাল এবং একে ঘিরে সৃষ্ট দেশব্যাপী সহিংসতা রফতানি খাতকে বড় ধরনের বিপদে ফেলেছে। এ সময় অনেক রফতানিকারকই পণ্য জাহাজীকরণ করতে পারেননি। কয়েকটি েেত্র অর্ডার বাতিল হয়েছে। কারো কারো অর্ডার বাতিল হওয়ার পথে। হরতালের কারণে বেশ কয়েকটি দেশের ক্রেতাপ্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছেন।  এ অবস্থায় আগামী দিন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রফতানিকারকেরা। কয়েক দিনের হরতাল ও সহিংসতায় রফতানির পাশাপাশি আমদানি, উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা ব্যাপক তিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১ শতাংশের বেশি। মূল্যস্ফীতি আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের মতে, হরতালের তি তাৎণিক পরিমাপ করা সম্ভব না হলেও এর নেতিবাচক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। হরতালের সাথে অবকাঠামো ধ্বংসের মতো সহিংসতা যুক্ত হওয়ায় তির ব্যাপ্তি আরো বেড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে তি আরো বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আসবেন না, দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন। সহিংসতা অব্যাহত থাকলে এক কথায় অর্থনীতির শক্তি ধ্বংস হয়ে যাবে। এমনিতেই বর্তমানে বিনিয়োগ ও এর সাথে সম্পর্কিত আমদানি স্থবির রয়েছে। সাত মাসে আমদানি কমেছে ১০ শতাংশের বেশি। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে গেছে। সহিংসতায় তিগ্রস্ত অবকাঠামো সংস্কারের জন্য বাড়তি অর্থসংস্থানে চাপে পড়বে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি। রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব শেয়ারবাজারেও পড়েছে।  শেয়ারবাজারে কয়েক দিনে লেনদেন কমে গেছে। আকস্মিক বড় দরপতনের ঘটনা ঘটছে। সঙ্ঘাত, সহিংসতা মানুষের মধ্যে ব্যাপক আস্থাহীনতা সৃষ্টি করছে। অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, ঠিক সময়ে রফতানি করতে না পারলে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক তির সম্মুখীন হতে পারেন, যা পরে পুরো দেশের রফতানিপ্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এই বৃত্তে ঢুকে পড়লে দেশে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর দীর্ঘমেয়াদে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকলে তৈরী পোশাক খাতের রফতানি আদেশ ব্যাপকভাবে বাতিল হতে পারে। সহিংসতা থাকলে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় থাকবে না। ফলে দেশে মূল্যস্ফীতি আশঙ্কাজনক বেড়ে যেতে পারে।

অব্যাহত রাজনৈতিক সহিংসতা ও অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য ভয়ানক প্রভাব নিয়ে এর আগেই অর্থনীতিবিদেরা সতর্ক করেছিলেন। এ বিষয়ে কোনো সতর্কবাণীকেই যেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা আমলে আনতে চাইছেন না। সন্ত্রাস-সহিংসতা কেবল এক পক্ষের দ্বারা হয় না, এ কথা ঠিক। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টিতে যেমন সরকারের ভূমিকা বেশি থাকে, তেমনিভাবে তা বন্ধেও অগ্রণী ভূমিকা নিতে হয় রাষ্ট্রচালকদের। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলোÑ সরকার পক্ষ বিপরীত মত ও পক্ষকে নির্মূল করে দেশে শান্তি ও স্থিতি আনতে চাইছে। বিপরীত রাজনৈতিক মতের পক্ষে কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। যেকোনো ক্ষোভ-বিক্ষোভ হলেই নাশকতা সৃষ্টির দোহাই দিয়ে সরাসরি গুলি করা হচ্ছে। ফলে মাত্র কয়েক দিনে দেশে শতাধিক প্রাণহানির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সরকারের পক্ষে যারা ফাঁসি ও জবাই করার দাবি নিয়ে শাহবাগ চত্বরে সমবেত হয়েছেন, তাদের সব ধরনের নিরাপত্তা ও পোলাও-বিরিয়ানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এক দিকে গুলি, অন্য দিকে নিরাপত্তা এই দ্বিমুখী নীতি নিয়ে প্রতিপক্ষ নির্মূলের কর্মসূচি রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা অব্যাহত থাকলে সহিংসতা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। কেবল আলোচনা ও সামঝোতার মাধ্যমে সহিংসতা কমানো সম্ভব। এ জন্য প্রথমেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার কাজ বন্ধ করতে হবে। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বিতর্কিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইস্যুর নিষ্পত্তি করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে। তা না করা হলে শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিপক্ষ নির্মূল করাও যাবে না আর দেশে শান্তি ও স্থিতিও আসবে না। ক্রমেই স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির চাকাও সচল করা সম্ভব হবে না। অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান দলগুলোর রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি।

শেয়ার করুন