কৃষি ডেস্ক: টুয়াখালীর উপকূলীয় রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে বিষ মেশানো খাদ্য দিয়ে ধরা হচ্ছে অতিথিপাখি। এক শ্রেণীর অসাধু পাখিশিকারি রাতের অন্ধকারে অতিথিপাখির বিচরণস্থলে বিষ মেশানো খাদ্য ছিটিয়ে রেখে কাছাকাছি জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে। বিষাক্ত খাদ্য খেয়ে পাখিগুলো অসুস্থ হয়ে মাটিতে ঢলে পড়লে সেগুলোকে ধরে তাড়াতাড়ি জবাই করা হয়। পরে জবাই করা পাখিগুলো গোপনে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন এলাকায়। প্রতি রাতেই চরাঞ্চলে পাখিশিকারিদের তৎপরতা দেখা যায়। অভিযোগ রয়েছে, রাঙ্গাবালীর বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে বিষ মেশানো খাদ্য দিয়ে ধরা পাখি গোপনে কলাপাড়ার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে উচ্চ দামে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করা হয়।এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিষ মেশানো খাদ্য দিয়ে পাখি শিকারের বিষয়টি বনবিভাগের কর্মকর্তাদের জানা থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
গলাচিপা উপজেলার চরকারফারমা, পয়িা, দণিপয়িা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার চরলতা, চরহালিম, চরকাশেম, চরতাপসী, চরবেষ্টিন, চরবিশ্বাস, সোনারচর এবং চরহেয়ার এলাকা ঘুরে এলাকাবাসী এবং গবাদিপশুর রাখালদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
চরলতা এলাকার মাসুদ মিয়া জানান, ওই এলাকায় সঙ্ঘবদ্ধ চারটি শিকারির দল রয়েছে।তারা প্রতি রাতেই বিষ মেশানো খাদ্য দিয়ে পাখি শিকার করে। কোনো কোনো রাতে চরলতা এলাকায় ৬০০ থেকে ৭০০ পাখি মারা পড়ে। তিনি জানান, সাইবেরিয়ান লালহাঁস. বালিহাঁসসহ বিভিন্ন জাতের অতিথি পাখি শিকারিদের হাতে ধরা পড়ছে।
গলাচিপার পয়িা এলাকার আবদুল বারেক মৃধা জানান, বনবিভাগের পয়িা ক্যাম্প কার্যালয়ের ৫০০ গজ সামনে দণি পয়িাচরে প্রতি রাতেই বিষ মেশানো খাদ্য দিয়ে পাখি শিকার করা হয়। বিষ মেশানো খাদ্য খেয়ে যেসব পাখি ঘটনাস্থলেই মারা যায় সেগুলো চরের জঙ্গলে ফেলে দেয় শিকারীরা। মুমূর্ষু পাখিগুলো ধরার সাথে সাথে জবাই করা হয়। আর যেগুলো একটু সুস্থ থাকে সেগুলো রাখা হয় জীবিত বিক্রি করার জন্য।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়, বিষাক্ত খাদ্য দিয়ে শিকার করা পাখির গোশত খাওয়া মানবদেহের জন্য মারাত্মক তিকর। এতে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, কিডনির সমস্যা এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগ দেখা দিতে পারে।
পয়িায় পাখি শিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে বন বিভাগের চরমোন্তাজ সদর বিট কর্মকর্তা মো: আখতারুজ্জামান ও সোনারচর বিট কর্মকর্তা প্রণবকুমার বিশ্বাস নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘লোকমুখে শুনেছি কিছু অসাধু লোক বিষ মেশানো খাদ্য দিয়ে অতিথিপাখি শিকার করছে। যারা এইসব পাখি মারছে তাদেরকে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বন বিভাগের রাঙ্গাবালী রেঞ্জের কর্মকর্তা মকবুল হোসেন বলেন, ‘বিষ মেশানো খাদ্য দিয়ে অতিথিপাখি শিকারের কথা আমি জানি না। তবে আমরা তদন্ত করে দেখব এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে রাঙ্গাবালী থানার ওসি এস এম মাসুদুজ্জামান বলেন, অতিথিপাখি শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে আমরা পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
১০ মার্চ/নিউজরুম