পাঠ্যপুস্তকে শিরকের বিস্তার! সরকার দায় এড়াতে পারে না

0
224
Print Friendly, PDF & Email

৯ মার্চ, ২০১৩।।

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলামের ব্যাপারে সরকারের বিরূপ মনোভাব সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। দিন যতই যাচ্ছে ধর্মের প্রতি এ সরকারের বিদ্বেষমূলক মনোভাব প্রকাশ হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা বাড়ছে। পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে এমন ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে। এটি ধার্মিক মানুষের স্পর্শকাতর সংবেদনশীলতাকে আঘাত করছে। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ে হালাল-হারাম সম্পর্কে শিরকি শিক্ষা দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গতকাল একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে নবম-দশম শ্রেণীর জন্য পাঠ্য ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের ৮২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘দেবদেবীর বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম’। এর মানে হলো দেবদেবীর নামে কোনো পশু উৎসর্গ করা হলে তার গোশত খাওয়া হালাল! একই সাথে এখানে দেবদেবীকে আল্লাহর সমকক্ষ করা হয়েছে! পবিত্র কুরআনে পশুর গোশত হারাম হওয়া বিষয়ে যে সুস্পষ্ট আয়াত রয়েছে, পাঠ্যপুস্তকের এ সংযোজিত লাইনটি তার সাথেও সরাসরি সাংঘর্ষিক। বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের পাঠ ২৪-এর একটি বিষয় হলো ‘শরিয়তের আহকাম সংক্রান্ত পরিভাষা’। পরিভাষার অধীনে একটি বিষয় হলো ‘হালাল-হারামের সংখ্যা’। হারাম-হালালের সংখ্যা বিষয়ে ৮২ পৃষ্ঠায় ১৭ ধরনের হারাম বস্তুর তালিকা দেয়া হয়েছে। তালিকার ৫ নম্বর ক্রমিকে লেখা হয়েছে ‘দেবদেবীর বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম’। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষাব্যবস্থাকে সেকুলার করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সেকুলার করতে গিয়ে তারা ইসলামকে বিকৃত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেই এতে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর আগে এ বইটির নাম ছিল ‘ইসলাম শিক্ষা’। সেখানে ‘পিতা-মাতার অধিকার’ নামে একটি অধ্যায় ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালের জন্য প্রণীত ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ে এ বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে। পিতা-মাতার অধিকার বিষয়ে যদি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়া না হয় তাহলে কিসের নৈতিক শিক্ষা তাদের দেয়া হচ্ছেÑ প্রশ্নটি অভিভাবক মহলের। আর পিতা-মাতার অধিকার বিষয়টি কিভাবে সেকুলার ব্যবস্থার বিপরীত হতে পারে তা বোধগম্য নয়।

তথ্যবিবরণীতে সরকার ইতোমধ্যে এ ভুল স্বীকার করেছে। আমরা এটিকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এর মাধ্যমে সরকার সব দায় এড়াতে পারে না। শুরু থেকে আমরা লক্ষ করেছি, ধর্মের বিষয়টিকে সরকার একেবারেই স্থূলভাবে নিয়েছে। তারা স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সংযুক্ত করার পরিবর্তে দলকানা লোকদের দায়িত্ব দিয়েছে। এসব লোকের ইসলাম সম্পর্কে যেমন পরিপূর্ণ জ্ঞান নেই, ধর্মের ব্যাপারেও নেই তাদের দরদ। এ ব্যাপারে সরকার কোনোভাবে দায়িত্ব এড়াতে পারে না। শিরকের মতো একটি গুরুতর ব্যাপার নিয়ে সরকার এতটা দায়সারা হতে পারে না। কোমলমতি ছাত্রদের শিরকে উদ্বুদ্ধ করার মতো ঘটনা ঘটানো হয়েছে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে।

এটা অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ। শুধু ভুল সংশোধন করলে হবে না, একই সাথে এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে এর প্রতিকার করা উচিত। অন্য দিকে ধর্মীয় বিষয়ে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো দেশের ধর্মীয় পণ্ডিত ও আলেম-ওলামাদের দিয়ে নতুন করে রিভিউ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি, অচিরেই সে ধরনের একটি কমিটি গঠন করে সব পাঠ্যপুস্তক থেকে যেকেনো ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বাদ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে।

     
শেয়ার করুন