৯ মার্চ, ২০১৩।।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশ গভীর সঙ্কটের দিকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু দিন ধরে বক্তব্য দিয়ে সরকারকে সতর্ক করে যাচ্ছে। পুলিশি বাড়াবাড়ি সীমা অতিক্রম করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য-বিবৃতি আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারকেও চ্যালেঞ্জ করছে। মৌলিক অধিকার হরণের এমন দৃষ্টান্ত বিরল। বিরোধী দল, ভিন্ন মত ও সরকারের সমালোচনা করছে এমন মিডিয়া আক্রমণের টার্গেট হচ্ছে। দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদেরও সরকার সহ্য করতে চাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলের অফিসে তালা দিয়ে রাখা, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধাÑ এখন সরকার রুটিন কাজের অংশ বানিয়ে নিয়েছে। একের পর এক বর্বরোচিত হামলা চলছে। গণহত্যা, গণগ্রেফতার ও গণহারে মামলায় সমগ্র দেশ যেন কারাগারে রূপান্তর হয়েছে। দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে জনগণ আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে। নাশকতা ছড়িয়ে পড়েছে, পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে, মন্দিরে হামলা করে বিরোধী দলকে অভিযুক্ত করার এক অভিনব কৌশল বাস্তবায়নে সরকার যেন সক্রিয়। শহীদ মিনার ভাঙা ও পতাকা পোড়ানোর মতো অপরাধ করে বিরোধী দলকে শায়েস্তা করার প্রবণতাও লক্ষণীয়।
এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দল এক দফার কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করলে সঙ্ঘাত আরো ছড়িয়ে পড়বে। পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডারদের যোগসাজশে শ্বেতসন্ত্রাসের যে নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটছে তার পরিধি বাড়বে। একসময় দেশ অনিবার্য গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হবে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পৈশাচিকতা আরো বেড়ে যাবে। তাতে সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। পরিস্থিতির এমন নাজুক অবস্থায়ও সরকার এক দিকে বিরোধী দলকে আলোচনায় বসার অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিচ্ছে, অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী বলছেন প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা। এক দিকে বলা হচ্ছে, আলোচনায় বসতে চায় সরকার; অন্য দিকে দেশজুড়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠনের আহ্বান কিংবা নির্দেশ দিচ্ছে সরকার।
দেশ যে গভীর সঙ্কটে পড়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকার বাস্তবতা আড়াল করতে চাইলেও তা আর সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে দেশ ও জাতির স্বার্থেই রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি। আর এই সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই। বিরোধী দলের অবস্থান এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছ বলাই সঙ্গত, কারণ তারা জানিয়ে দিয়েছে সরকার বিরোধী দল ও মত দমনে যে অসহিষ্ণু ও পৈশাচিক আচরণ শুরু করেছে তা বন্ধ করে সংযম ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল আনলেই আলোচনার প্রয়োজন হবে না। তারা দাবিদাওয়া নিয়ে রাজপথে থাকলেও পাঁচ বছর ক্ষমতাচর্চার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।
এ অবস্থায় হামলা-মামলা বন্ধ করে, স্ববিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসাই সরকারের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। এ ব্যাপারে বিরোধী দলকেও যথেষ্ট দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করতে হবে। দেশে গণতন্ত্রচর্চার দ্বার অবারিত করে দিলে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে। গণতন্ত্র সঙ্কটের মুখে পড়ার ফলে যে সঙ্ঘাতমুখর পরিস্থিতি ও নাশকতার ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা-ও উদ্বেগজনক অবস্থায় থাকবে না। আইনের শাসনের অনুপস্থিতিতে যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, বিচার-আচার ও ট্রাইব্যুনাল নিয়ে যে অসন্তোষ দেশকে অস্থির করে তুলেছে, তা-ও নিয়মতান্ত্রিকতার পথে বাঁক ঘোরার সুযোগ পাবে। গণতন্ত্রে ভিন্ন মত যেমন গণতন্ত্রেরই বৈশিষ্ট্য, তেমনি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট উত্তরণের পথ খোঁজাও গণতন্ত্রের দাবি। এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ বিশ্বাসযোগ্য ও আনুষ্ঠানিক হওয়া জরুরি। আমরা আশা করি, সরকার সততার সাথে উদ্যোগী হবে, বিরোধী দলও আন্তরিকতার সাথে ইতিবাচক সাড়া দেবে।