শিক্ষা ডেস্ক: হিথরো বিমানবন্দর থেকে আমাদের গন্তব্য টাওয়ার হিল। পাতাল রেলস্টেশন থেকেবেরোতেই বাইরে ঝকমকে রোদ। শীতের মৌসুমে রোদের দেখা পেয়ে মনটা চনমনে হয়েউঠতে যাচ্ছিল, তার আগেই তেড়েফুঁড়ে এল ঠান্ডা বাতাস। বিলেতিদের কাছে এই শীতনস্যি। কিন্তু উপমহাদেশীয় শরীরে হাড়গোড় নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। লন্ডনেরতাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঝলমলে রোদের মাঝে দস্তানা আর মোটাসোটাজ্যাকেট পরে কাঁপতে কাঁপতে এগোচ্ছি। দূরে ওপারে টাওয়ার ব্রিজ। হেঁটে যেতেহবে কেব্ল স্ট্রিট, হাটন হাউস। কেব্ল স্ট্রিট পার হয়ে হাটন হাউসের কাছাকাছিচলে এসেছি, হঠাৎ চোখ আটকে গেল গলির মাথায়। ভুল দেখছি না তো। নাহ, চোখেরভুল নয়। সামনেই একটা স্কুলের সদর দরজা। সবুজের ওপরে হলুদ অক্ষরে পরিষ্কারবাংলায় লেখা—স্বাগতম শাপলা প্রাইমারি স্কুল! ওপরে যে ফুলের নকশা, সেটাওআমাদের জাতীয় ফুল শাপলারই। কোনো সন্দেহ নেই।
স্কুলের ভেতরটায় উঁকি দিয়েদেখলে খুব একটা শান্তি শান্তি ভাব হয়। দুপাশে গাছগাছালি। গেটের ভেতরেসবুজের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে স্কুল ভবন।
হাড় কাঁপানো ঠান্ডার ভয় চুলোয়যাক, সঙ্গী সনি হ্যান্ডিক্যামে পটাপট স্কুলের সদর দরজার ছবি তুলি। খুবইচ্ছে ছিল স্কুলের ছেলেমেয়েদেরসহ ছবি তোলার। তার জন্য আর অপেক্ষা করা গেলনা। কারণ, অনুমতি নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পড়ুয়াদের ছবি তোলাশিষ্টাচারবহির্ভূত। তাই সেবারের মতো ফিরতে হলো।
টাওয়ার ব্রিজ, টাওয়ার অবলন্ডন, লন্ডন আই, বাকিংহাম প্যালেস নয়। লন্ডনে সবার আগে মন জিতে নিল শাপলাপ্রাইমারি স্কুল। গোটা টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকাটাই বাংলার জয়জয়কার। পথেঘাটেসবখানেই চোখে পড়বে বাংলায় লেখা, ‘বল খেলবেন না,’ ‘থুতু ফেলবেন না’—এইজাতীয় নোটিশ। কিন্তু বিলেতের বুকে বাংলা নামের স্কুল। বিশেষ দ্রষ্টব্য তোবটেই।
ডিসেম্বর, ২০১২। ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে গিয়ে স্থানীয়বাঙালি সাংবাদিকদের সঙ্গে শাপলা স্কুলের প্রসঙ্গ। মাঝ লন্ডনে বাংলা স্কুলদেখে আমি যারপরনাই অবাক হয়েছি। কিন্তু তাদের কাছে সেটা বড় বিস্ময় নয়। একটানয়—বেশ কিছু বাংলা নামের স্কুল আছে লন্ডনে। সাংবাদিক হিসেবে এই স্কুলগুলোতেবাংলা চর্চা কেমন হচ্ছে, এই নিয়ে বেশি আগ্রহী তাঁরা।
ইন্টারনেটেখুঁজে পেতে শাপলা স্কুলের ওয়েবসাইটের দেখা মিলল। স্কুলের হেড টিচার মানেপ্রধান শিক্ষক টিম বার্নেস। তাঁর কথা থেকেই জানা গেল, ১৯৮৭ সাল থেকে যাত্রাশুরু করে শাপলা প্রাইমারি স্কুল। মূলত টাওয়ার হ্যামলেটস ও শেডওয়েলেরবাসিন্দা বাচ্চাকাচ্চাদের জন্যই এই স্কুল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বাকি সবপ্রাইমারি স্কুলের সঙ্গে সংগতি রেখেই চলে এই স্কুলের পাঠক্রম।
খুঁজতে গিয়ে স্কুলপড়ুয়া কয়েকজন কচিকাঁচার মন্তব্যও মিলল।
‘আমাদেরস্কুলটা আমার খুব ভালো লাগে। এখানে অনেক মজা হয়। স্কুলে আমার ভালো লাগেঅঙ্ক করতে, পড়তে আর মজার জিনিসপত্র বানাতে।’ বলেছে ছয় বছর বয়সী ইমরান।
১১ বছর বয়সী অনিমা বলেছে, ‘আমরা এখানে মজা করতে করতে শিখি। আমরা মজার কিছু শিখতে প্রায় সময় বেড়াতে যাই।’
৯ মার্চ/নিউজরুম