ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক: দুই বছরের বেশি আগে দেশের পুঁজিবাজারের মান উন্নয়নসহ পেশাদারি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) একাডেমিক বা শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
‘প্রচেষ্টা, শিক্ষা এবং উৎকর্ষ’—এ ব্রত নিয়ে গঠিত সংস্থাটির জন্য বাজেটে প্রতিবছর বরাদ্দ থাকছে তারও আগে থেকে অর্থাৎ ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকেই। গত চার বছরে সরকারের কাছ থেকে মোট ১২ কোটি টাকা পেয়েছে সংস্থাটি। এই অর্থ দিয়ে গবেষণাগার, শ্রেণীকক্ষ, সম্মেলন কক্ষ, পাঠাগারসহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইনস্টিটিউট পরিচালিত হওয়ার মতো সবকিছুই প্রস্তুত করা হয়েছে।
তার পরও বিশেষায়িত এ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের বেতনকাঠামো অনুমোদিত না হওয়ায় কোনো শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করা যাচ্ছে না। শুধু সংক্ষিপ্ত ও স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমই চলছে।
অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবল সৃষ্টির পাশাপাশি পুঁজিবাজারের বাস্তব জ্ঞান এবং তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক জ্ঞানের সমন্বয় সাধনে একটি বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দাবি দেশে অনেক বছর থেকেই। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান থাকার সময় ২০০৫ সালে বিআইসিএম গঠনের প্রথম উদ্যোগ নেন। শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের জুলাইয়ে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তর (রেজসকো) থেকে অলাভজনক কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন নেয় বিআইসিএম।
বর্তমান সরকারের শুরুর দিকে ভালোই মনোযোগ পায় সংস্থাটি। সেই মনোযোগ আবারও পাচ্ছে চার বছর কেটে যাওয়ার পর। যদিও এরই মধ্যে কাঠামোগতভাবে দাঁড়িয়ে গেছে সংস্থাটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর তোপখানা রোডের বিজিআইসি টাওয়ারের প্রথম থেকে চতুর্থ তলায় মোট ১৮ হাজার ৫০৮ বর্গফুট জায়গাজুড়ে ছিমছাম ও সাজানো-গোছানো সবকিছু। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম সম্প্রতি বিআইসিএমের প্রতিটি তলা পরিদর্শন করে তাঁর সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, এর অবকাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে একই সময়ে ২১০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। রয়েছে অডিও ভিজ্যুয়াল ও ভিডিও কনফারেন্সিং সুবিধা।গ্রন্থাগারে আছে ছয় হাজার বই। ৮৮টি ডেস্কটপ ও আটটি ল্যাপটপ কম্পিউটারের পাশাপাশি রয়েছে চারটি কম্পিউটার সার্ভার। তথ্যপ্রযুক্তি-সুবিধা নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। নিবিড় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
এত সব আয়োজন থাকা সত্ত্বেও শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে চালু হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবদুল হান্নান জোয়ার্দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রক্রিয়া খুব দ্রুত এগোচ্ছে। সময় লাগবে আর সর্বোচ্চ ছয় মাস। আমরা চাইছি, বিআইসিএম হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বা অঙ্গীভূত একটি ইনস্টিটিউট, অনেকটা আইবিএর মতো। নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি পিএইচডি, স্নাতকোত্তর ও ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেবে বিআইসিএম।’ এ ছাড়া পুঁজিবাজারে সব মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য বাধতামূলক লাইসেন্সিং পরীক্ষা চালু করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
২৭ জন প্রশিক্ষক, দুজন অনুবাদকসহ ৯৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংস্থানসংবলিত বিআইসিএমের জনবলকাঠামো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিআইসিএম কর্তৃপক্ষ। সেটি অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু আটকে রয়েছে বেতনকাঠামো। এতে শিক্ষকদের মূল বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা।মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বলেই বিশ্বাস করেন আবদুল হান্নান জোয়ার্দার।
জানা গেছে, সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বসে নেই বিআইসিএম।এরই মধ্যে স্বল্পমেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করে আসছে সংস্থাটি।প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও শেষ শনিবার বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সিকিউরিটিজ আইন, আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ, বাজার কারসাজি ও ইনসাইডার ট্রেডিং, অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা, আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং মান ইত্যাদি বিষয়ে ২০টি সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করেছে বিআইসিএম। এগুলোতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বিআইসিএমের নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা।
বিআইসিএমের পরিচালনা পর্ষদে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগ, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস বাংলাদেশ (আইসিএবি), ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এবং ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ বাংলাদেশের (আইসিএসবি) প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে বিআইসিএমেরও চেয়ারম্যান।
যোগাযোগ করলে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিআইসিএমের বেতনকাঠামো এমনভাবে করা উচিত যাতে লোক পাওয়া যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনকাঠামো বিবেচনা করা যায়।’
৯ মার্চ/নিউজরুম