আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: খুব বেশি দিন আগেও নয় যখন ‘বিশ্বকে শাসন করবে নারী’—এমন ধারণাকে হাস্যকর বা কৌতুকের বিষয় মনে করা হতো। এটাকে গভীর আলোচনার বিষয় নয় বরং কল্পবিজ্ঞানের কাহিনির মতো কোনো হালকা বিষয় হিসেবেই দেখা হতো।
তবে সেটা এখন ঘুণে ধরা এক অতীত। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ওই দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণা দ্রুতই পাল্টাচ্ছে।বিস্তর গবেষণা ও অভিজ্ঞতা বলছে, নারীর ক্ষমতায়নের ফলে আসলেই পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে।
ব্যবসা এখন অধিকতর লাভজনক, সরকার আরও বেশি প্রতিনিধিত্বশীল, পরিবার আরও শক্তিশালী এবং কমিউনিটিগুলো আরও স্বাস্থ্যবান, সহিংসতার মাত্রা কমে আসছে এবং শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সহনক্ষমতা বাড়ছে।এতসব ইতিবাচক পরিবর্তনের শুরুটা সাধারণ একটা বিষয় থেকেই। সেটা হচ্ছে, নারী প্রায়ই জীবনের অভিজ্ঞতাকে একটু ভিন্নভাবে উপলব্ধি করে থাকে। সেই অভিজ্ঞতা আমরা যেভাবে সমস্যাগুলোকে দেখে থাকি এবং তার সমাধানের চিন্তা করি সেটাকে প্রভাবিত করে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দ বলছেন, ‘বহুমুখিতা বা বৈচিত্র্য আসলেই একটা সম্পদ। এই বৈচিত্র্যতার মাধ্যমে আপনি বিশ্বকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার পথ দেখাতে পারেন।কোনো ইস্যুকে ভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন। ভিন্নমাত্রার সমাধান দিতে পারেন।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, নারী ও পুরুষ ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলি ও দক্ষতার অধিকারী এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে আসল গুরুত্ব এখানেই। দীর্ঘদিন ধরে এটাই প্রত্যাশা করে আসা হতো যে নারীরা সফল হতে চাইলে তাদের পুরুষের মতো করেই চিন্তা এবং কাজ করতে হবে। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। এখন ক্রমবর্ধমানভাবেই পুরুষের থেকে আলাদা ধরনের চিন্তা ও কর্মক্ষমতাকে নারীর দুর্বলতার পরিবর্তে শক্তির উৎস হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নারীদের উদ্দেশে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম নারী স্পিকার ন্যান্সি পোলেসির পরামর্শ, তারা যা তাই থাকুক। তিনি বলেন, ‘আপনিই একমাত্র সেই সত্তা যে আপনার নিজের জন্য অদ্বিতীয় অ বদান রাখতে পারে। …আপনি আপনিই থাকুন।’
তবে প্রতিবন্ধকতাও আছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীরাই নিজেদের পিছিয়ে রাখে। তারা তাদের নিজের সম্পদকে নিজের করে রাখতে জানে না, পদোন্নতির দাবিতে হাত উঠায় না।তবে এসব প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও নারীর ক্ষমতায়নের উপকারিতা অনস্বীকার্য। বর্তমানে নারীরাই বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে চালিকাশক্তির ভূমিকায়। গত বছর বিশ্বে ২০ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ের জন্য দায়ী ছিলেন নারীরা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে ২৮ ট্রিলিয়নে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া নারীরা এখন শান্তি প্রতিষ্ঠা ও টেকসই করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। আজকে যে সংখ্যায় শান্তিচুক্তি সই হচ্ছে তার বেশির ভাগই পাঁচ বছরের মধ্যে ভেঙে পড়ছে। কারণ এই অংশীদারদের (নারী) অর্ধেককেই বাইরে রাখা হচ্ছে। আর যখন নারীদের এসব ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত রাখা হয়, তখন তারা বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্য দূর করে সেতুবন্ধ রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে শান্তি ধরে রাখা সহজ হয়।
তাই নারীর ক্ষমতায়ন মানে কেবলই রাজনৈতিক পরিশুদ্ধি নয়। বরং তার উপলক্ষ হওয়া উচিত বিশ্বের জন্য ভালো কিছু বের করে আনা। শক্তিশালী অর্থনীতি ও টেকসই কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা, সংঘাত বন্ধ ও শান্তির জন্য এটা দরকার। নারীর ক্ষমতায়ন এখন শুধু সঠিক কাজ তা নয়; এটা একটা অপরিহার্য একটা বিষয়। আর যেহেতু নারীরা ক্রমবর্ধমানভাবে বিশ্বকে শাসন করতে শুরু করেছে, বিশ্ব এখন পরিবর্তিত হয়ে ভালো কিছুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিবিসি।
৯ মার্চ/নিউজরুম