কৃষি ডেস্ক: পটুয়াখালীর গলাচিপার বিভিন্ন এলাকায় এবার আলুর ভালো ফলন হয়েছে। এখন গলাচিপার বিলজুড়ে চলছে আলু উত্তোলনের ধুম। ফজরের নামাজের পরপরই কিষান-কিষাণীরা মাঠে ব্যস্ত হয়ে পড়েন আলু উত্তোলনের কাজে। তাদের সাথে যোগ দিয়ে আলু তোলার কাজে সাহায্য করছে শিশু-কিশোরেরাও। তবে সংরক্ষণের অভাবে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক।
স্থানীয় কৃষক জানান, আগে তাদের চাষাবাদ সীমাবদ্ধ ছিল ধান, টমেটো, মরিচ ও শাকসবজিসহ অন্যান্য কিছু ফসলের মধ্যে। কেউ কেউ আলু চাষাবাদ করতেন। কিন্তু তাদের ছিল না আধুনিক চাষাবাদের ধারণা। কৃষকেরা জানান, বর্তমানে তারা আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষাবাদ করছেন, ফলনও ভালো হয়েছে। মওসুম শেষে ঘরে তুলছেন লাখ লাখ টাকার আলু। স্থানীয় কয়েকজন আলুচাষি জানান, প্রায় দুই দশক আগে মুরাদনগরের কিছু কৃষক আলুচাষ করে সফলতা অর্জন করেন। তাদের আলুর ভালো ফলন হওয়া দেখে অন্য এলাকার কৃষকেরাও ঝুঁকে পড়েন আলু চাষাবাদে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপায় এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়েছে। বেশির ভাগ চাষাবাদ হয়েছে গলাচিপা ইউনিয়নের মুরাদনগর, চরখালী ও বোয়ালীয়া গ্রামে। মুরাদনগর গ্রামের আলুচাষি রেজাউল করিম জানান, এখানকার উৎপাদিত আলু সংরণের অভাবে বাজারের চেয়ে কম দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন কৃষকেরা।
স্থানীয় আলুচাষি হাসান প্যাদা, সিদ্দিক মোল্লা বজলু ও ফজলু হাওলাদারসহ আরো অনেকে জানান, মওসুমের শুরু থেকে সার, বীজ নানান সমস্যা থাকার পরও কৃষকেরা দিন রাত পরিশ্রম করছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।ধানের দাম কম পাওয়ায় এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষ আলু চাষাবাদ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন।
উপজেলার মুরাদনগর গ্রামের আবু সালেহ মাতবর জানান, তিনি প্রায় দুই কানি জমিতে আলুচাষ করেছেন। প্রতি কড়া জমিতে ১২ মণ হিসেবে আলু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এক হাজার ৯২০ মণ। বর্তমানে প্রতি মণ আলু তে থেকে পাইকাররা ৩৮০ টাকা হিসেবে কিনে নিচ্ছেন, যার দাম দাঁড়াবে সাত লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা। তার খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। তাতে এ বছর ভালো লাভ হবে। অনেক চাষি ধারণা করছেন এ বছর আলুচাষিদের মুখে হাসি ফুটবে।
কথা হয় শ্রমিক রাজিয়া, জেলেকা রাহাত তারা জানান, সকাল ৭টায় আলু তুলতে আই, সন্ধ্যা ৬টায় মোরা বাড়িতে যাই। ভাত খেতে দুপুরে এক ঘণ্টার সময় দেয়।সারা দিনে পরিশ্রম বাবদ পাঁচ কেজি আলু দেয় যার বাজার মূল্য ৫০ টাকা। এক ঘণ্টায় পাঁচ টাকা আয় করি। মোগো দিকেই কেউ চায় না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: ফজলুল হক জানান, উপজেলার অনেক চাষি আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে মুরাদনগর গ্রামে বেশি চাষাবাদ হয়েছে। এখানকার কৃষি জমিগুলো আলুচাষের জন্য খুব উপযোগী। আর কৃষি বিভাগ গলাচিপা কৃষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রা করে। তারা আধুনিক চাষাবাদে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিণের ব্যবস্থা করে থাকেন।
৯ মার্চ/নিউজরুম