বেগুনের পোকার আক্রমণে করণীয়

0
204
Print Friendly, PDF & Email

কৃষি ডেস্ক: বেগুন বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজিইতঃপূর্বে শুধু রবি মওসুমে চাষ হলেও এখন সারা বছরই বেগুন চাষ হয়দেশে সবজি চাষের আওতায় যে পরিমাণ জমি রয়েছে তার ১৫ ভাগ জমিতে বেগুন চাষ হয়বেগুন চাষের েেত্র সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিন্তা করা হয় ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণএটি বেগুনের সর্বাধিক তিকর পোকাএ পোকার বৈজ্ঞানিক নাম Leucinodes orbonalis,, ইংরেজিতে এই পোকা Brinjal shoot and fruit borer  নামে পরিচিতএ পোকার আক্রমণে ত্রেবিশেষে ৮৫ ভাগ পর্যন্ত ফলনের তি হয়সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ পোকার আক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছেশীতের শেষে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে এ পোকার আক্রমণ ব্যাপকভাবে ল করা যাচ্ছে

 

তির লণ : সাধারণত চারা রোপণের চার-পাঁচ সপ্তাহ পর এ পোকার আক্রমণ দেখা দেয়এ পোকার কিড়া বা লার্ভা ফল ধরার আগে কচি ডগা ও পাতার বোঁটায় ছিদ্র করে ভেতরে ঢোকে এবং সেখান থেকে খেয়ে খেয়ে বড় হতে থাকেএতে আক্রান্ত ডগা ও পাতা ধীরে ধীরে ঢলে পড়েকিছু দিনের মধ্যে আক্রান্ত ডগাগুলো শুকিয়ে আসে এবং পাশ থেকে নতুন শাখা-প্রশাখা বের হয়গাছে ফুল-ফল আসার পর ডগার তুলনায় ফুল ফলে এই পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায়আক্রান্ত ফলের গায়ে ছিদ্র হয় এবং ওই ছিদ্রপথে কিড়ার মল ও কিড়া বের হতে দেখা যায়বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হলে ফল পচতে থাকে এবং ঝরে পড়েগ্রীষ্মকালে এ পোকা বেশি সক্রিয় থাকেসাধারণত শীতের শেষে যখন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বাড়তে থাকে, তখন এ পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায়

 

কৃষক ভাইদের করণীয় : আমাদের দেশের কৃষক ভাইয়েরা এ পোকা দমনের জন্য অতি মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশকের ওপর নির্ভর করে থাকেনসাম্প্রতিক সময়ে আমাদের কৃষক ভাইদের একটি বড় অভিযোগ হলো, তারা কীটনাশক প্রয়োগ করেও এসব পোকামাকড় দমন করতে পারছেন না, যার দরুন এক দিকে ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে, অন্য দিকে ফসল উপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছেআবার সবজি ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা একটি পরিবেশবান্ধব আইপিএম প্যাকেজ প্রণয়ন করেছেন

 

নিরাপদ ফসল উপাদনে আইপিএম প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত দমন ব্যবস্থাগুলো হলো রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার, যান্ত্রিক দমন, জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার, জৈব বালাইনাশক ব্যবহার, উপকারী পোকামাকড়ের ব্যবহার, সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার, পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতি প্রভৃতিআইপিএম ব্যবস্থাপনায় কার্যকরীভাবে তিকর পোকামাকড় দমন করা যায়

 

আইপিএম প্যাকেজ

 

১. গাছের আক্রান্ত অংশ ধ্বংস করা : চারা রোপণের ১৫ দিন পর থেকে প্রতি সপ্তাহে কমপে এক-দুই বার অবশ্যই সরেজমিন বেগুন তে পরিদর্শন করতে হবেএকই সাথে রোগাক্রান্ত ডগা ও ফল হাত দিয়ে সংগ্রহ করে জমি থেকে দূরে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবেএতে গাছের আক্রান্ত অংশগুলোতে বিদ্যমান পোকার কীড়া বা লার্ভাগুলো মারা যায় এবং জমিতে পোকার আক্রমণ কমে আসে

 

২. সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার : বেগুনের এ পোকা দমনের জন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ এখন বাজারে সহজলভ্যপ্রতি ১০ বর্গমিটার এলাকার জন্য একটি ফাঁদ গাছের উচ্চতার ওপর খুঁটি দিয়ে স্থাপন করতে হবেচারা লাগানোর ৪-৫ সপ্তাহ পর ফাঁদ স্থাপন করতে হবে এবং ৫০-৬০ দিন পর ফাঁদ পরিবর্তন করে দিতে হবেসেক্স ফেরোমন ফাঁদ পুরুষ পোকাগুলোকে আকৃষ্ট করেপরে পুরুষ পোকাগুলো আটকা পড়ে ও মারা যায়এতে এ পোকার প্রজনন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং পোকার আক্রমণ কমে আসেইস্পাহানি বায়োটেকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বাজারজাত করছেএ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদঢতর থেকেও কৃষকদের এই ফাঁদ সরবরাহ করা হয়

 

৩. উপকারী পোকার ব্যবহার : ট্রাইকোগ্রামা (Tricogramma chilonis) ও ব্র্যাকন (Bracon habetor) নামক দুটি উপকারী পোকা ব্যবহার করে বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা যায়ট্রাইকোগ্রামা পোকার ডিমগুলো খেয়ে ফেলে আর ব্র্যাকন পোকার লার্ভাগুলো খায়সম্প্রতি কিছু এনজিও এবং বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কৃষকদের এ পোকাগুলো সরবারহ করছেকৃত্তিমভাবে জমিতে এ দুটি উপকারী পোকা ছড়িয়ে দিলে বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে আসেএ েেত্র েেত হেক্টর প্রতি ১ গ্রাম ট্রাইকোগ্রামা এবং ৮০০-১২০০টি ব্রাকন উপকারী পোকা পর্যায়ক্রমে ছাড়তে হবে

 

কীটনাশক ব্যবহার : আইপিএম প্যাকেজে সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে কীটনাশক ¯েপ্র করা হয়দীর্ঘ দিন যাব একই কীটনাশক ক্রমাগত ব্যবহারের কারণে এ পোকা কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে অনেক কীটনাশকই কাজ করছে নাএ েেত্র ভলিউম ফেক্সি ৩০০ (Thiamethoxam + Chlorantraniliprole) প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলি করে মিশিয়ে সাত দিন অন্তর অন্তর ¯েপ্র করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবেঅথবা প্রোকেইম ৫ প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম করে মিশিয়ে সাত দিন অন্তর অন্তর ¯েপ্র করতে হবেতবে ল রাখতে হবে, এক সপ্তাহে ভলিউম ফেক্সি ব্যবহার করলে পরবর্তী সপ্তাহে প্রোকেইম ব্যবহার করতে হবেএভাবে পরিবর্তন করে কীটনাশক ব্যবহার করলে কৃষকেরা ভালো সুফল পাবেনএ ছাড়াও ট্রেসার ৪৫ (Spinosad) প্রতি লিটার পানিতে ৪ মিলি করে অথবা মার্শাল ২০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলি করে মিশিয়ে ¯েপ্র করা যায়খেয়াল রাখতে হবে প্রতি সপ্তাহে একবার জমি থেকে বেগুন সংগ্রহ করার পর কীটনাশক ¯েপ্র করতে হবেএক মাস বয়স থেকে নিয়মিত কীটনাশক ¯েপ্র করলে এ পোকার আক্রমণ সফলভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব

 

স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিবেশবান্ধব সবজি উপাদনের জন্য আইপিএম প্যাকেজ একটি লাগসই প্রযুক্তিদিন দিন দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের সবজির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছেএকই সাথে বাড়ছে নানা রকম তিকর পোকামাকড়ের আক্রমণআইপিএম-পদ্ধতি ব্যবহার করে তিকর পোকামাকড় দমন করা যায় এবং গুনগত মানসপন্ন সবজি উপাদন নিশ্চিত করা যায়। ।

 

 

 

 

 

৮ মার্চ/নিউজরুম

 

শেয়ার করুন