কৃষি ডেস্ক: জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে মাশরুম। পুষ্টি ও ঔষধিগুণ থাকায় বিভিন্ন আঙ্গিকে খাবারে ব্যবহার করা হচ্ছে এই সবজি। খুব সহজেই এটি চাষ করা যায় বলে এর উৎপাদনও বাড়ছে। মাশরুম চাষের লাগসই ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ দেশব্যাপী এর ব্যবহার বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে সাভারের জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র।
বাংলাদেশে মাশরুম চাষের ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। স্বল্প পরিসরে তিন দশক আগে এই সবজির চাষ শুরু হয়।জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে তৎকালীন কৃষি উপদেষ্টা মরহুম আজিজুল হক থাইল্যান্ড থেকে সর্বপ্রথম স্ট্র মাশরুমের বীজ এ দেশে নিয়ে আসেন। রাজধানীর আসাদ গেটসংলগ্ন উদ্যান নার্সারিতে ওই বীজ দিয়ে মাশরুম চাষের সূচনা হয়।
পরে ১৯৮০ সালের দিকে জাপান ওভারসিজ কো-অপারেটিভ ভলান্টিয়ারের সদস্য জাপানের মাশরুম বিশেষজ্ঞ নাকানোর নেতৃত্বে প্রাতিষ্ঠানিক ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে মাশরুমের স্পন উৎপাদন ও মাশরুম চাষের কার্যক্রম শুরু হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি পরে ল্যাবের বেশ কিছু উন্নয়নকাজও করে। সাভারে স্থাপিত সোবহানবাগ হর্টিকালচার নামে এই ল্যাবরেটরি ১৯৮৫ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হয়। পর্যায়ক্রমে এখানে জাপানের মাশরুম বিশেষজ্ঞরা এসে মাশরুমচাষি, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও মাশরুম শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রশিণ দেন। এ ছাড়া সভা-সেমিনারসহ বিভিন্নভাবে মাশরুম সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়।পরে এ সবজির প্রসারের ল্েয মাশরুম চাষ কেন্দ্রকে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়।
মাশরুম চাষ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ১৬টি হর্টিকালচার সেন্টারে মাশরুম সাব-সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জনপ্রিয় মাশরুমের ১১৬টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে ৩৫০ জন বেসরকারি মাশরুম বীজ উৎপাদক বীজ উৎপাদনে সক্রিয় আছেন। এ ছাড়া ১৫টি মাশরুমভিত্তিক খাদ্যশিল্প ও একটি ওষুধ শিল্প গড়ে উঠেছে। আর মাশরুম চাষে সরাসরি সম্পৃক্ত আছেন লাধিক মানুষ।
জাতীয় মাশরুম সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কেন্দ্রের স্ট্রেনদিং মাশরুম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক ড. নিরদচন্দ্র সরকার জানান, এই প্রতিষ্ঠান দেশী-বিদেশী জাতের মাশরুমের দেশোপযোগী গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রশিণের মাধ্যমে দ জনশক্তি তৈরি, পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ ও বেকার সমস্যার সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা সৃষ্টি করাসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টিতে সহায়তার উদ্দেশ্য নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, পুষ্টি ও ওষুধ গুণসম্পন্ন মাশরুম পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সবজি। এতে শর্করা ও চর্বির পরিমাণ খুব কম এবং মানুষের দেহের প্রয়োজনীয় আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণের পরিমাণ বেশি, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। মাশরুম ব্যবহারে দেহের রোগ প্রতিরোধ মতাও বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ভাইরাসজনিত রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করে।
দেশে দিন দিন মাশরুমের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকেও মাশরুম আমদানি করতে হচ্ছে। এ কারণে দেশে মাশরুমের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন মাশরুম চাষি। তাদের মতে, দেশে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ বাড়ালে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। এ েেত্র সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আরো জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।। সূত্র: বাসস
৮ মার্চ/নিউজরুম